বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা
|
ভূমিকা
বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে যে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে ওঠে, তা প্রধানত বাংলাতেই প্রবল ছিল। কংগ্রেসের সমর্থন থাকায় মধ্যবিত্তশ্রেণি এই আন্দোলনে যোগদান করে। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন আঞ্চলিক বিষয় হওয়ায় বা অন্য কারণে শ্রমিকশ্রেণিও এই আন্দোলনে যোগ দেয়।
উদ্দেশ্য
এই আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণির যোগদানের উদ্দেশ্য কেবল আর্থিক দাবি বিষয়ে ছিল না, তারা জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। তাদের বোঝানো হয়েছিল, জাতীয় আন্দোলনের সাফল্যের সঙ্গে শ্রমিকদের ভাগ্য জড়িত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের অবসান না ঘটলে শ্রমিকদের মুক্তি ঘটবে না।
নেতৃত্ব
এই সময়ের পেশাদার রাজনীতিকরা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়, অপূর্ব কুমার ঘোষ, অশ্বিনী কুমার ব্যানার্জি, প্রেমতোষ বসু এবং অম্বিকাচরণ ব্যানার্জি। তাঁরা সরকারি ছাপাখানা, পাটকল, রেল, বন্দর প্রভৃতি কর্মকেন্দ্রের শ্রমিক ও কর্মচারীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। তাঁদের উৎসাহে শ্রমিকেরা ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে।
শ্রমিক ধর্মঘট
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ হয়। এই দিন সারা বাংলার কলকারখানায় শ্রমিক ধর্মঘট হয়। হাওড়ার বার্ন কোম্পানির ১২,০০০ শ্রমিক ধর্মঘট করে। বাংলার প্রধান শিল্প ছিল পাটশিল্প। এই সময় ৩৭টি পাটকলের মধ্যে ১৮টিতে শ্রমিক ধর্মঘট হয়। এর মধ্যে হাওড়ার বাউড়িয়ার ফোর্ট গ্লস্টার পাটকলের ধর্মঘট ছিল উল্লেখযোগ্য। এখানকার শ্রমিকেরা ‘রাখিবন্ধন’ উৎসব পালন করে। তারা ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি দেয়।
এই আন্দোলনের সময় কলকাতা ও খিদিরপুরের বন্দর শ্রমিকেরা ধর্মঘট করে। কলকাতার সরকারি ছাপাখানার কর্মীরা ধর্মঘটে যোগ দেয়। ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় এদের নিয়ে প্রিন্টারস অ্যান্ড কম্পোজিটার্স লিগ গঠন করেন। চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে রেলকর্মীরা ধর্মঘট করে।
মূল্যায়ন
এভাবে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণি অংশগ্রহণ করে। ধর্মঘটের ফলস্বরূপ অসুবিধা ও সমস্যাকে অগ্রাহ্য করে শ্রমিকেরা সামাজিক শ্রেণি হিসেবে তাদের গুরুত্বের পরিচয় দেয় এবং জাতীয় আন্দোলনের মূল স্রোতের অংশীদার হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক বিপানচন্দ্রের মতে, শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বদেশি আন্দোলন ছিল একটি দিকচিহ্ন।