ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অহিংস- অসহযোগ আন্দোলন এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। কারণ – জাতীয় কংগ্রেস এই সময় দীর্ঘ ৩৫ বছরের ‘রাজনৈতিক ভিক্ষাবৃত্তি’ বা ‘আবেদন নিবেদন নীতি’ পরিত্যাগ করে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের আহ্বান জানায়।
আন্দোলনের কারণ
[1] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে স্বায়ত্তশাসন লাভে ব্যর্থ ভারতীয়রা আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়।
[2] দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খাদ্যাভাব, বেকারত্ব চরম আকার ধারণ করলে ভারতীয়দের মনে অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হতে থাকে।
[3] ব্রিটিশ সরকার কুখ্যাত রাওলাট আইন পাস করে বৈপ্লবিক আন্দোলনের কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছিল। এই সকল কারণে ক্ষুব্ধ ভারতীয়রা আন্দোলনে যোগ দেয়।
প্রস্তাব গ্রহণ
গান্ধিজি জনগণের মনে পুঞ্জীভূত ব্রিটিশবিরোধী এই ক্ষোভকে বৃহত্তর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার কথা চিন্তা করেন। তিনি ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের পরিকল্পনা পেশ করেন। প্রস্তাব অনুমোদিত হলে গান্ধিজির নেতৃত্বে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনের কর্মসূচি
অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল- ‘স্বরাজ’ অর্জন। সরকারি খেতাব ও উপাধি বর্জন, আইনসভা, বিদেশি দ্রব্য বর্জনের পাশাপাশি স্বদেশি দ্রব্য উৎপাদন, স্বদেশি বিদ্যালয় স্থাপন, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ প্রভৃতি ছিল এই আন্দোলনের প্রধান কর্মসূচি।
আন্দোলনের প্রসার ও নেতৃত্ব দান
গান্ধিজির আহ্বানে দেশবাসী অভূতপূর্ব সাড়া দেয়। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, সরকারি চাকুরে, প্রত্যেকেই এই আন্দোলনে যোগদান করে। চিত্তরঞ্জন দাশ, মোতিলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু, লালা লাজপত রায় প্রমুখের নেতৃত্বে এই আন্দোলন আরও সুসংগঠিত রূপ পায়।
আন্দোলন প্রত্যাহার
অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন যখন চরম আকার ধারণ করে তখন উত্তরপ্রদেশের (তখনকার যুক্তপ্রদেশ) গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা নামক স্থানে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি শান্তিপূর্ণ নিরস্ত্র মিছিলের উপর পুলিশ গুলি চালালে একদল উত্তেজিত জনতা থানায় অগ্নিসংযোগ করে। এর ফলে ২২ জন পুলিশকর্মী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। গান্ধিজি চৌরিচৌরা ঘটনার হিংস্রতায় মর্মাহত হয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
উপসংহার
অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হলেও প্রথম সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন হিসেবে তা জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছিল।