ভারতে লবণ সত্যাগ্রহ বা ‘আইন অমান্য আন্দোলন কেন শুরু হয়? |
ভূমিকা
গান্ধিজির পরিচালিত সর্বভারতীয় দ্বিতীয় অহিংস আন্দোলন ছিল লবণ সত্যাগ্রহ বা আইন অমান্য আন্দোলন। অসহযোগ আন্দোলনের হঠাৎ সমাপ্তি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাই গান্ধিজি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে এই গণ আন্দোলনের ডাক দেন।
কারণসমূহ
এই আন্দোলনের বিভিন্ন কারণ ছিল। তা হল—
[1] পূর্ণ স্বরাজ: কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে (১৯২৯ খ্রি.) ‘পূর্ণ স্বরাজ’-এর প্রস্তাব পাস হয়। ২৬ জানুয়ারি দিনটি প্রতীকী স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়। ফলে জনমানসে বিপুল উদ্দীপনার সঞ্চার হয়।
[2] সাইমন কমিশন: সাইমন কমিশনবিরোধী বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন শহরে ধর্মঘট, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়। ভারতীয়রা কমিশনের সঙ্গে কোনোরকম সহযোগিতা করেনি। তাই ইংরেজ সরকার কী ধরনের শাসনসংস্কার করবে সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল।
[3] সর্বদলীয় সম্মেলনের ব্যর্থতা: ভারত-সচিব লর্ড বার্কেনহেডের বিদ্রুপের জবাবে ভারতীয়রা সর্বদলীয় সম্মেলন করে। নেহরু রিপোর্টে খসড়া সংবিধান পেশ করা হয়। কিন্তু জিন্নার সংশোধনী প্রস্তাব বাতিল হলে জিন্না সম্মেলন ত্যাগ করেন। ফলে সর্বদলীয় সম্মেলন ব্যর্থ হয়।
[4] বামপন্থা : ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে এই পার্টি মজদুর ও কৃষক শাখা, ছাত্র শাখা গড়ে তুলে রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে।
[5] ভগৎ সিং-এর ফাঁসি: লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় বিপ্লবী ভগৎ সিং-এর ফাঁসি হয়। এই ঘটনা দেশের যুবসমাজকে আলোড়িত করে।
[6] মহামন্দা : ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে অর্থনৈতিক জগতে মহামন্দা দেখা দেয়। এর প্রভাবে ভারতের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়। নিত্যব্যবহার্য দ্রব্য লবণের উপরেও সরকার কর বসায়। লবণের ব্যাবসা ইংরেজদের একচেটিয়া হয়ে ওঠে।
[7] প্রত্যক্ষ কারণ : নানা বিষয়ে গান্ধিজি ১১ দফা প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেন। সরকার তা অগ্রাহ্য করে। অগত্যা গান্ধিজি ডান্ডি অভিযান করেন। ডান্ডির সমুদ্র উপকূলে তিনি লবণ আইন ভঙ্গ করলে দেশব্যাপী ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়।