বিশ্বভারতীর আদর্শ ও উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

বিশ্বভারতীর আদর্শ ও উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
বিশ্বভারতীর আদর্শ ও উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ভূমিকা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে এটি ছিল কলেজ পর্যায়ের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীকে বিশ্বজাতির মহামিলনের ক্ষেত্রে পরিণত করেছিলেন।

‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠার আদর্শ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ‘বিশ্বভারতী’ পরিকল্পনা তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, ‘যত্র বিশ্বম ভবত্যেকনীড়ম’ অর্থাৎ যেখানে বিশ্ব একটি নীড়ে পরিণত হবে। এই আদর্শের ভিত্তিতে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিশ্বভারতীর উদ্যোগ

বিশ্বভারতীর উদ্যোগে শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এর দুটি শাখা প্রতিষ্ঠান- শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন নিয়েই বিশ্বভারতী গঠিত হয়।

শান্তিনিকেতন: শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন শাখা বা অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলি হল-① পাঠভবন (বিদ্যালয়), ② শিক্ষাভবন (মহাবিদ্যালয়), ③ বিদ্যাভবন (স্নাতকোত্তর ও গবেষণা)। এ ছাড়াও ছিল কলাভবন ও সংগীতভবন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক তান ইয়ুন সানের সহযোগিতায় ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে চিনাভবন এবং ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিন্দিভবন-কে এর সঙ্গে সংযুক্ত করেন।

শ্রীনিকেতন: শান্তিনিকেতন থেকে ২ মাইল দূরে সুরুল গ্রামে কৃষি ও পল্লিসংগঠন কেন্দ্র শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠিত হয়। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, পল্লিচর্চা ও পল্লিসংগঠন ছাড়া ভারতীয় শিক্ষা অসম্পূর্ণ। তাই এখানে কৃষি ও পল্লিসংগঠন ভবন ও শিল্পভবন গড়ে ওঠে। এটি হল রবীন্দ্রনাথের গ্রামোন্নয়ন ও কিশোর-যুবকদের জন্য উন্নয়নমূলক কার্যাবলির কেন্দ্র।

পঠনপাঠনে বিশ্বভারতীর উদ্যোগ

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীকে বিশ্বজাতির মিলনভূমিরূপে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বভারতীতে বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতির মিলন ঘটাতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি এখানে চিন, জাপান, ইউরোপ, আমেরিকা থেকে পণ্ডিত ব্যক্তিদের নিয়ে এসেছিলেন। এখানে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল বৈদিক, পৌরাণিক, বৌদ্ধ, জৈন, ইসলামিক ও পাশ্চাত্যের জ্ঞানসংবলিত পাঠ্য। তিনি আশা করেছিলেন এই জ্ঞানবৈচিত্র্য ভারতের স্বরূপকে খুঁজে পেতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করবে।

মূল্যায়ন

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে। রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রথম উপাচার্য হন। রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর আদর্শ ও উদ্যোগ আজও অম্লান আছে।

Leave a Comment