ইলবার্ট বিল বিতর্কের গুরুত্ব বর্ণনা করো। |
ভারতের বড়োলাট লর্ড রিপনের শাসনকালে উল্লেখযোগ্য উদারনৈতিক সংস্কারগুলির মধ্যে অন্যতম হল ইলবার্ট বিল প্রণয়ন। বিচারের ক্ষেত্রে ভারতীয় ও ইউরোপীয়দের মধ্যে বৈষম্য দূর করে সমমর্যাদা ও ক্ষমতা প্রদানের উদ্দেশ্যে লর্ড রিপনের আইনসচিব কোর্টনি ইলবার্ট এই বিলের খসড়া প্রস্তুত করেন। ইলবার্ট বিলকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয়রা প্রবল আন্দোলন শুরু করলে ভারতসভা এই বিলের সমর্থনে প্রতি-আন্দোলন গড়ে তোলে।
ভারতের জাতীয়তাবোধ জাগরণে ইলবার্ট বিলের ভূমিকা
ইলবার্ট বিলের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যর্থ হলেও ভারতের জাতীয়তাবোধ জাগরণে এর ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।
সংঘবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি
ইলবার্ট বিল আন্দোলন থেকে ভারতবাসী উপলব্ধি করে যে, একমাত্র সংঘবদ্ধ আন্দোলনই ব্রিটিশ সরকারের নীতি ও কার্যাবলিকে প্রভাবিত করতে পারে। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের একমাত্র উপায় হল সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন।
জাতিবিদ্বেষের নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ
ইংরেজরা যে ভারতীয়দের সমমর্যাদা দিতে রাজি নয় তা আবার প্রকাশিত হয়। এর ফলে ইংরেজ ও ভারতীয়দের মধ্যে জাতিবিদ্বেষ প্রবলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
ভারতবাসীর নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি
ইলবার্ট বিলকে কেন্দ্র করে ভারতীয়দের প্রতি ইউরোপীয়দের অবজ্ঞা ও অপমানজনক আচরণ আরও স্পষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে ভারতবাসী নিজেদের অধিকার সম্পর্কে ক্রমশ সচেতন হয়ে ওঠে।
জাতীয় সম্মেলন প্রতিষ্ঠার প্রেরণা
ইলবার্ট বিল আন্দোলন ভারতবাসীর রাজনৈতিক সচেতনতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করে। ইউরোপীয়দের প্রতিরক্ষা সভা বা ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার প্রত্যুত্তরে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় সম্মেলন আহ্বানের প্রয়োজন অনুভব করেন।
আন্দোলন পরিচালনায় তহবিল গঠনের প্রয়োজনীয়তা
ইলবার্ট বিল আন্দোলন পরিচালনার জন্য ইংরেজরা প্রায় ১ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে আন্দোলন পরিচালনা করেছিল। এর থেকে ভারতীয়রা পরবর্তীকালে আন্দোলন পরিচালনায় অর্থ-তহবিল গঠন করে আন্দোলন পরিচালনা করতে শিখেছিল।
ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার ইলবার্ট বিল আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, “ইলবার্ট বিল আন্দোলন ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।”