হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল

হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল
হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

ভূমিকা

ভারতীয়দের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। চৈত্রমেলা বা হিন্দুমেলা বাঙালির সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বাংলা বছরের শেষদিন অর্থাৎ চৈত্রসংক্রান্তির দিনে এই মেলা অনুষ্ঠিত হত বলে একে চৈত্রমেলা বলা হত। পরে মেলার আয়োজকগণ চৈত্রমেলার নাম পরিবর্তন করে হিন্দুমেলা নামকরণ করে।

প্রতিষ্ঠা

১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দুমেলা শুরু হয়।

প্রতিষ্ঠাতা

নবগোপাল মিত্র ও রাজনারায়ণ বসু এই হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠা করেন। ঠাকুরবাড়ির সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই মেলার আয়োজনে সাহায্য ও সহযোগিতা করেন।

উদ্দেশ্য

বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে এই হিন্দুমেলা চালু করা হয়। উদ্দেশ্যগুলি হল-

[1] হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করা।

[2] আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলা।

[3] হস্তশিল্পে উৎসাহদান।

[4] সাহিত্যচর্চায় উৎসাহদান।

[5] বাঙালির হীনমন্যতা দূর করা।

[6] শরীরচর্চায় উৎসাহ দেওয়া প্রভৃতি।

কার্যাবলি

ধর্ম ও ইতিহাস বিষয়ক বক্তৃতা, ছাত্রদের ব্যায়াম প্রদর্শনী, মেলা, গানবাজনা, ফল-ফুল প্রদর্শনী, সূচিশিল্প, মাটির জিনিসপত্রের প্রদর্শনী, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি এই মেলায় অনুষ্ঠিত হত। মেলাপ্রাঙ্গণে ফুল-পাতা, বিভিন্ন পতাকা সাজানো থাকত। শোভাযাত্রা করে অনেকে মেলায় আসতেন।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’তে লিখেছেন, ‘আমাদের বাড়ির সাহায্যে হিন্দুমেলা বলিয়া একটি মেলা সৃষ্টি হইয়াছিল। নবগোপাল মিত্র মহাশয় এই মেলার কর্মকর্তারূপে নিয়োজিত ছিলেন। ভারতবর্ষকে স্বদেশ বলিয়া ভক্তির সহিত উপলব্ধির চেষ্টা সেই প্রথম হয়। মেজদাদা সেই সময় বিখ্যাত জাতীয় সংগীত ‘মিলে সব ভারত সন্তান’ রচনা করিয়াছিলেন। এই মেলায় দেশের স্তবগান গীত, দেশানুরাগের কবিতা, দেশীয় শিল্প, ব্যায়াম প্রভৃতি প্রদর্শিত ও দেশী গুণী লোক পুরস্কৃত হইত’।

অবদান

১৮৬৭-১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মোট ১৪ বার এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। স্বল্পকালীন হলেও জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে এই মেলার বিশেষ অবদান ছিল।

[1] সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘মিলে সব ভারত সন্তান’ গানের মধ্য দিয়ে এই মেলা শুরু হত। এই গান জাতীয় সংগীতের মতো দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলে।

[2] বাংলা ভাষায় শ্রেষ্ঠ রচনার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা সাহিত্যক্ষেত্রে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করে।

[3] মেলায় হাতে তৈরি জিনিসপত্রের প্রদর্শনী হত। ফলে শিল্পী ও কারিগররা উৎসাহ পায়।

[4] মেলার আয়োজকরা ন্যাশনাল পেপারের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের কথা প্রচার করেন।

[5] হিন্দুমেলায় জনসমাবেশ ও বক্তৃতা জাতীয় অনুভতির সৃষ্টি করে।

Leave a Comment