১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সামাজিক কারণগুলি কী ছিল? |
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বড়োেলাট লর্ড ক্যানিং-এর শাসনকালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সিপাহিরা, দেশীয় রাজা ও সাধারণ মানুষ বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। এই বিদ্রোহ ইতিহাসে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সামাজিক কারণসমূহ
নানাবিধ সামাজিক কারণ বিদ্রোহের জন্য দায়ী ছিল, যথা-
সামাজিক বৈষম্য
ইংরেজরা ভারতবর্ষে এসেছিল অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে, ভারতবাসীর প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র সহানুভূতি ছিল না। তারা ভারতীয়দের বর্বর ও অসভ্য বলে মনে করত। ‘সিয়ার-উল-মুতাখরিন’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, ইংরেজরা ইচ্ছে করে ভারতীয়দের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলত। বিভিন্ন জায়গায় বোর্ডে লেখা থাকত যে, সেখানে কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ। [
ইংরেজ রাজকর্মচারীদের মনোভাব
ইংরেজরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি এবং ভারতবাসীকে বর্বর বলে মনে করত। গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিসের ধারণা ছিল যে, সকল ভারতীয় দুর্নীতিগ্রস্ত। এজন্য তিনি সরকারি উচ্চপদে ভারতীয়দের নিয়োগ নিষিদ্ধ করেছিলেন।
ইংরেজদের সমাজসংস্কার
ইংরেজরা যেহেতু ভারতীয়দের শোষণ করত, তাই ভারতীয়রাও ইংরেজদের সংস্কারমূলক কার্যাবলিকে সন্দেহের চোখে দেখত। ফলে বাল্যবিবাহ, বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহের পক্ষে ইংরেজ সরকার আইন পাস করলে ভারতীয় সমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল।
মিশনারিদের ভূমিকা
খ্রিস্টান মিশনারিরা ধর্মপ্রচারের সময় হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের সমালোচনা করত। এর ফলে হিন্দু-মুসলিমদের সঙ্গে ইংরেজদের সামাজিক ব্যবধান বেড়ে যায়।
এইভাবে সামাজিক ব্যবধান ইংরেজ ও ভারতবাসীর মধ্যে বৈরিতা সৃষ্টি করে, যা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ছিল।