১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ সম্পর্কে লেখো

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ সম্পর্কে লেখো
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ সম্পর্কে লেখো

ভূমিকা

ভারত ইতিহাসে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই বিদ্রোহে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিলেন দেশীয় রাজন্যবর্গ।

দেশীয় রাজন্যবর্গের যোগদানের কারণ

বিদ্রোহে দেশীয় রাজন্যবর্গের অংশগ্রহণের কারণগুলি হল নিম্নরূপ-

স্বত্ববিলোপ নীতি: লর্ড ডালহৌসি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করেন (১৮৪৮ খ্রি.)। এই নীতির দ্বারা অপুত্রক রাজাদের মৃত্যুর পর তাদের রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এর মধ্যে সাতারা, ঝাঁসি, তাঞ্জোর, নাগপুর, সম্বলপুর, উদয়পুর, ভগত ও করৌলী রাজ্য উল্লেখযোগ্য ছিল।

কুশাসন:
লর্ড ডালহৌসি কুশাসনের অভিযোগে অযোধ্যা রাজ্য দখল করেন। যদিও অযোধ্যা রাজ্যে কুশাসনের জন্য ইংরেজদের দীর্ঘদিনের হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ দায়ী ছিল।

যুদ্ধনীতি: লর্ড ডালহৌসি ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধের মাধ্যমে পাঞ্জাব দখল করেন।

পদমর্যাদা লোপ: লর্ড ডালহৌসি পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও-এর দত্তকপুত্র নানাসাহেবের ‘পেশোয়া’ পদ লোপ করেন। তাঁর বার্ষিক বৃত্তি বন্ধ করে দেন। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের উপাধি বাতিল করে তাঁকে রাজপ্রাসাদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। নাগপুর ও অযোধ্যার রাজপরিবারের মর্যাদাহানি করেন ডালহৌসি।

এ ছাড়া এর আগে ইংরেজদের রাজ্যগ্রাসের ফলে বহু রাজা তাদের রাজ্য হারান। ফলে রাজপরিবার ও রাজপরিবারের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি, কর্মচারী, সৈনিক, সুবিধাভোগী শ্রেণি ইংরেজবিরোধী হয়ে ওঠে।

মূল্যায়ন

ভারতে আধুনিক শিক্ষা, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা, সমাজসংস্কার চালু হলেও ভারতের সর্বত্র তা ছড়িয়ে পড়েনি। ভারতবাসী তখনও মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণায় আচ্ছন্ন ছিল। বিক্ষুব্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণি মধ্যযুগীয় ব্যবস্থার ধারক ও বাহক ছিল। দেশীয় রাজন্যবর্গ এই বিদ্রোহের মাধ্যমে মধ্যযুগীয় ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। রমেশচন্দ্র মজুমদার তাই এই বিদ্রোহকে ‘সামন্তশ্রেণির শেষ করুণ আর্তনাদ’ বলে অভিহিত করেছেন।

Leave a Comment