1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মনোভাব কেমন ছিল

1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মনোভাব কেমন ছিল
1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মনোভাব কেমন ছিল

ভূমিকা

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে। প্রথমে বহরমপুর, পরে ব্যারাকপুর সেনাছাউনিতে বিদ্রোহ ঘটে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়লেও শিক্ষিত বাঙালি সমাজ এই বিদ্রোহকে সমর্থন করেনি বরং বিরোধিতা করেছিল। সমকালীন বিভিন্ন তথ্য থেকে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। তথ্যসমূহ: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালিদের বিরূপ মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় নিম্নলিখিত তথ্যগুলি থেকে- 

বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মনোভাব

[1] কিশোরীচাঁদ মিত্র ছিলেন সমসাময়িক একজন বিশিষ্ট বাঙালি। তিনি লিখেছেন, ‘এই বিপ্লব মূলত সৈনিকের বিপ্লব- এক লক্ষ সৈন্যের বিদ্রোহ, ইহার সহিত জনসাধারণের কোনো সংস্রব নাই। যাহারা এই বিদ্রোহী দলে যোগ দিয়াছে তাহাদের সংখ্যা গভর্নমেন্টের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন লোকের সংখ্যার অনুপাতে অতিশয় নগণ্য। প্রথম দলের সংখ্যা কয়েক সহস্র, দ্বিতীয় দলের সংখ্যা কয়েক কোটি।’

[2] সমসাময়িক মনীষী শম্ভুচরণ মিত্র এবং হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখার্জি একই কথা লিখেছেন।

[3] অরবিন্দ ঘোষের মাতামহ রাজনারায়ণ বসু ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সময় অন্যান্য শিক্ষিত বাঙালিদের মতো আতঙ্কিত ছিলেন এবং বিদ্রোহের বিরোধিতা করেছিলেন।

[4] দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বেরিলিতে নিযুক্ত একজন সামরিক কর্মচারী ছিলেন। তিনি বিদ্রোহী সিপাহিদের অত্যাচারের কাহিনি লিখেছেন এবং নিন্দা করেছেন।

[5] ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মে কলকাতা হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা এক সভার আয়োজন করেন। রাজা রাধাকান্ত দেব, কালীপ্রসন্ন সিংহ, হরেন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সিপাহিদের নিন্দা ও ইংরেজ সরকারকে সাহায্যের প্রস্তাব গৃহীত হয়। কেবল বিদ্রোহী সিপাহি নয়, দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ, নানাসাহেব, লক্ষ্মীবাঈ প্রমুখ নেতা-নেত্রীদের প্রতিও নিন্দা করা হয়।

পত্রপত্রিকা

সমসাময়িক কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় (২০ জুন, ১৮৫৭ খ্রি.) এই বিদ্রোহের নিন্দা করে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ‘সংবাদ ভাস্কর’ পত্রিকায় (২০ জুন, ১৮৫৭ খ্রি.) বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনীর সাফল্য ও বিদ্রোহী সিপাহিদের ধ্বংস কামনা করা হয়।

প্রতিষ্ঠান

সেই সময় ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন ও মহামেডান অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি সভাগুলি বিদ্রোহের বিরোধিতা ও ইংরেজ সরকারকে সমর্থনের প্রস্তাব গ্রহণ করে।

উপসংহার

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ফলে বাংলায় যে শিক্ষিত শ্রেণি গড়ে ওঠে তারা বিভিন্ন সরকারি পদে নিযুক্ত ছিল। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ তাদের পদমর্যাদা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দিতে পারে এই আশঙ্কায় শিক্ষিত বাঙালিরা এই বিদ্রোহের বিরোধিতা করে।

Leave a Comment