জ্যাকোবিন দলের পরিচয় দাও। জ্যাকোবিন শাসনের পরিচয় দাও। |
বিপ্লবকালীন ফ্রান্সে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠন ফরাসি বিপ্লব পরিচালনায় ও অগ্রগতিতে সাহায্য করেছিল সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জ্যাকোবিন ক্লাব।
উৎপত্তি
জাতীয় সভায় ব্রিটানি প্রদেশের সদস্যদের নেতৃত্বে ব্রেটন ক্লাব উৎপত্তি হয়। এই ক্লাবের অপর নাম ছিল ‘সংবিধান সমর্থক সমিতি’ (Society of the friends of the constitution)। জ্যাকোবিন মঠে এদের সভা বসত বলে এটি ‘জ্যাকোবিন ক্লাব’ নামে পরিচিত হয়। এই দল প্যারিসের সাঁ কুলোৎ ও দরিদ্র শ্রেণিকে সদস্য করে জনপ্রিয়তা বাড়ায়। এই ক্লাবের বহু শাখা ছিল।
জ্যাকোবিন ক্লাবের নেতৃত্ববর্গ
প্রথম দিকের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন নেতা ছিলেন ভূঁপো, বার্নের্ভ, লামেথ, ব্রিমো প্রমুখ। এই ক্লাবের শেষ পর্বের নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সেন্টজাস্ট, কুলো, রোবসপিয়র প্রমুখ।
উদ্দেশ্য
এই ক্লাবের উদ্দেশ্য ছিল- (ক) ফরাসি জাতিকে শিক্ষিত করে তোলা, (খ) ফরাসিবাসীকে ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করা, (গ) সর্বজনীন ভোটাধিকার আদায় করা, (ঘ) জীবিকার অধিকারকে সুরক্ষিত করা, (ঙ) নিরঙ্কুশ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, (চ) দরিদ্রের স্বার্থে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলা।
জ্যাকোবিন দলের আদর্শ
জ্যাকোবিন দল ছিল বৈদেশিক যুদ্ধের বিরোধী। কিন্তু যুদ্ধ আরম্ভ হলে তারা দেশপ্রেমিকের মতোই যুদ্ধে জয়লাভের জন্যে কাজ করে। জ্যাকোবিন ক্লাবের সদস্যরা রুশোর সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাস করত। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারে বিশ্বাসী হলেও সম্পত্তিকে প্রয়োজনমতো রাষ্ট্রের ও জনসাধারণের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষপাতী ছিল।
জ্যাকোবিন শাসনের পরিচয়
জিরন্ডিস্ট দলের পতনের মধ্য দিয়ে জ্যাকোবিন দল ফ্রান্সের শাসন ও যুদ্ধনীতি পরিচালনায় অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে। এই দলের কর্মসূচি ছিল উগ্র, সংগঠন ছিল শক্তিশালী এবং নেতৃত্ব ছিল সুসংহত। এই দলের সর্বাধিনায়ক ছিলেন রোবসপিয়র।
ক্ষমতা লাভ
রাজার মৃত্যুদণ্ড ও রাজতন্ত্রের পতনের পর ন্যাশনাল কনভেনশনে ক্ষমতাসীন জিরন্ডিস্টদের হটিয়ে ২ জুন ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে সাঁ কুলোৎ সমর্থনপুষ্ট জ্যাকোবিন দলের নিরঙ্কুশ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। জ্যাকোবিন দলের নেতৃত্বে স্বৈরতান্ত্রিক ও একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রবর্তিত হয়।
সন্ত্রাসের শাসন কায়েম
রাজার প্রাণদণ্ডের পর অভ্যন্তরীণ প্রতিবিপ্লবী আন্দোলন ও বৈদেশিক আক্রমণে যখন ফ্রান্স জেরবার তখন সদ্য প্রতিষ্ঠিত ফরাসি প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য সব রকম দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় জ্যাকোবিন দল। অতঃপর দেশের নিরাপত্তা, বিপ্লবের স্থায়িত্ব ও প্রতিবিপ্লবী শক্তির ধ্বংসসাধনের লক্ষ্যে জ্যাকোবিন পরিচালিত ন্যাশনাল কনভেনশন দেশজুড়ে এক কঠোর শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন। প্রবল ভীতি ও সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে এই বিপ্লবী সরকার ফ্রান্সে যে শাসন জারি রাখে তা ইতিহাসে সন্ত্রাসের শাসন (Region of Terror) নামে পরিচিত।
জনকল্যাণমূলক কাজ
সন্ত্রাসের রাজত্বকালে জ্যাকোবিন দল মজুতদারি ও কালোবাজারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, নতুন মাপ ও ওজন পদ্ধতির ব্যবহার, দশমিক পদ্ধতির প্রচলন, সর্বনিম্ন মজুরি আইন, সর্বোচ্চ মূল্যের আইন প্রয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে ফ্রান্সে নবজীবনের সূচনা করে।