নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত ও তার মূল্যায়ন করো

নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত ও তার মূল্যায়ন করো
নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত ও তার মূল্যায়ন করো।

নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন তাঁর কনসাল পর্ব (১৭৯৯-১৮০৪ খ্রি.) ও সম্রাটপর্বে (১৮০৪-১৫ খ্রি.) ফ্রান্সের শাসকরূপে যে সাম্রাজ্য বিস্তার করেন তা অনেকে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সম্প্রসারণ বলে মনে করেন। কিন্তু প্রকৃত ক্ষেত্রে নেপোলিয়ন ছিলেন একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষি সমরনায়ক। সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতাই তাঁকে সাম্রাজ্য বিস্তারের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।

নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য

সাম্রাজ্যসীমা নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে টিলসিট-এর সন্ধি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকচিহ্ন। কারণ এই সময়েই তার সাম্রাজ্যসীমা সর্বাধিক বিস্তৃতি লাভ করেছিল- (১) ইটালি, জার্মানি ও মধ্য ইউরোপে নেপোলিয়নের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়; (২) রাশিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, প্রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া তাঁর মিত্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়; (৩) একমাত্র পূর্ব ইউরোপের বল্কান অঞ্চল, পশ্চিম ইউরোপের পোর্তুগাল ও ইংল্যান্ড ছিল তার নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত এলাকা। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন কর্তৃক রাশিয়া অভিযানের প্রাক্কালে নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্যের আয়তন দাঁড়ায় ৫ লক্ষ বর্গ মাইল এবং এর জনসংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৪০ লক্ষ।

আদর্শবাদ

সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন সমগ্র ইউরোপকে ঐক্যবদ্ধ করে অখণ্ড ইউরোপীয় সাম্রাজ্য স্থাপনে অগ্রসর হয়েছিলেন।

ইংল্যান্ডের পরাজয়

নেপোলিয়নের বৈদেশিক নীতির মূল লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের পরাজয়, কারণ তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পক্ষে প্রধান বাধা ছিল ইংল্যান্ড।

ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের অনুপস্থিতি

(ক) নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের প্রসার ঘটেনি, কারণ কি বিপ্লবের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি; (খ) নির্বাচিত আইনসভা; (গ) ভোটদানের অধিকার; (ঘ) নাগরিক অধিকারের সম্প্রসারণ ঘটেনি। ফ্রান্সের স্বার্থই অগ্রাধিকার পেয়েছিল এবং এ কারণেই তাঁর সাম্রাজ্যের অধীনস্থ জাতিগুলি স্বাধীনতা হারিয়েছিল।

সাম্রাজ্যবাদী শোষণ

নেপোলিয়ন ইটালি, জার্মানিসহ বিজিত রাজ্যের পুনর্গঠনকালে জনগণের স্বায়ত্তশাসন মেনে নেননি বরং সাম্রাজ্যবাদী শোষণ অব্যাহত রেখেছিলেন। সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি দেশে নেপোলিয়ন তাঁর ভাই ও আত্মীয়দের ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন।

দ্বিতীয় অংশ

নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত থাকলেও কয়েকটি দিক ছিল গুরুত্বপূর্ণ, যেমন :

মুক্তিদাতা

বেলজিয়াম, রাইনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও উত্তর ইটালিতে নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যব্যবস্থা বিনা প্রতিবাদে গৃহীত হয়েছিল এবং সাধারণ মানুষ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি নেপোলিয়নকে মুক্তিদাতা বলে অভিহিত করেছিল।

প্রাক্-বিপ্লব যুগের অবসান

নেপোলিয়ন তাঁর সাম্রাজ্যের মাধ্যমে ইউরোপের কয়েকটি স্থানে স্বৈরতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে করভার লাঘব করেন ও কোড নেপোলিয়ন প্রবর্তন করেন এবং এর ফলে প্রাক্-বিপ্লব যুগের অবসান ঘটেছিল।

ইউরোপে আধুনিকতা

নেপোলিয়ন কর্তৃক ইউরোপীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ফলে ইউরোপে জাতীয়তাবাদ আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার গতি প্রসারিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন যথার্থই বলেছেন যে, নেপোলিয়নের আবির্ভাবে ইউরোপে আধুনিকতার ঝড় বয়ে যায়।

Leave a Comment