নেপোলিয়ন কোন্ অর্থে বিপ্লবের সন্তান আর কোন্ অর্থে বিপ্লবের ধ্বংসকারী ছিলেন

নেপোলিয়ন কোন্ অর্থে বিপ্লবের সন্তান আর কোন্ অর্থে বিপ্লবের ধ্বংসকারী ছিলেন

ভূমিকা

নেপোলিয়নের সংস্কারগুলির মূল আদর্শ ও উদ্দেশ্য ছিল এখন এক সুশৃঙ্খল সমাজগঠন করা যে সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তি বিনা বাধায় নিজ নিজ ইচ্ছামতো যে কোনো পেশা অবলম্বন করে সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সহিত দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে পারে। মূলত তিনটি উদ্দেশ্যে সংস্কার কার্য্যে ব্রতী হয়েছিলেন।

কৃতজ্ঞতা ও জনপ্রিয়তা অর্জন

কেন্দ্রীভূত দৃঢ় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন ও জনহিতকর কার্যাদির মাধ্যমে ফরাসি বাসীর কৃতজ্ঞতা ও আস্থা অর্জন করতে চেয়েছিলেন। কৃতকর্মের মধ্য দিয়ে তিনি ফরাসি জাতির মনে স্থায়ী আসন পেয়েছিলেন।

খ্যাতি অর্জন

প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে নিজ শক্তি ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন। বাস্তবিক ক্ষেত্রে সংস্কারকার্যাদির মধ্য দিয়ে তিনি ফ্রান্স তথা গোটা ইউরোপে তাঁর খ্যাতি বিস্তারে সক্ষম হয়েছিলেন।

কার্যকরী শাসনব্যবস্থা স্থাপন

ফ্রান্সে স্থায়ী ও কার্যকরী শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রবর্তন করেছিলেন।

নেপোলিয়ন বলেছেন, ‘আমি ভবিষ্যৎ বংশধরদের সামনে একটি আদর্শ স্থাপন করতে চাই’ (I hope to leave to posterity a renown that away serve as an example or as a reproach to my successors.)

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তাঁর অভাবনীয় সামরিক প্রতিভার সাহায্যে ফ্রান্সকে কেন্দ্র করে ফরাসি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নানা সংস্কার কার্যে ব্রতী হন। তাঁর অভ্যন্তরীণ সংস্কারগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংস্কার ছিল শাসনতান্ত্রিক সংস্কার।

শাসনতান্ত্রিক সংস্কার

নেপোলিয়ন প্রদেশের ওপর কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে জাতীয় ঐক্য ও কেন্দ্রীকরণ নীতিকে প্রসারিত করার উদ্যোগ নেন।

কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা

নেপোলিয়ন দেশে একটি সুদৃঢ় ও শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দলগুলির স্বাধীন কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ করেছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করেন।

প্রশাসনিক বিন্যাস

নেপোলিয়ন সমগ্র ফ্রান্সকে ৮৩টি প্রদেশে এবং প্রদেশগুলিকে ৫৪৭টি জেলায় বিভক্ত করেন। প্রদেশ ও জেলার যাবতীয় ক্ষমতা প্রিফেক্ট ও সাব-প্রিফেক্টদের হাতে দেওয়া হয়। তবে তাদের মনোনয় ও নিয়োগ করার একমাত্র অধিকার ছিল নেপোলিয়নের। কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হত। প্রাদেশিক শাসকগণের নির্বাসিত হওয়ার পরিবর্তে প্রথম কনসাল কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে সম্পূর্ণরূপে তাঁর কতৃত্বাধীন থাকবার ব্যবস্থা করেন।

স্বায়ত্বশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা খর্ব

স্থানীয় স্থায়ত্বশাসনমূলক প্রতিষ্ঠান সমূহের স্বাধীনতা বহুল পরিমাণে খর্ব করে সেগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আনেন।

কাউন্সিল অব স্টেট (Council of State)

নেপোলিয়নের প্রশাসন কাঠামোর কেন্দ্রে ছিল কাউন্সিল অব স্টেট। এটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত ছিল এবং যে যে বিষয়ে অভিজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ তাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হত। তবে তাদের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা যা কিছু করার তা নেপোলিয়ন নিজে করতেন।

এই শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করেছিলেন এবং প্রশাসনিক সুবিধার জন্য কোড নেপোলিয়নের প্রবর্তন করেন।

Leave a Comment