নেপোলিয়ন কীভাবে ফ্রান্সের ক্ষমতা লাভ করেন? তাঁর সাফল্যের কারণগুলি কী ছিল
নেপোলিয়ন কীভাবে ফ্রান্সের ক্ষমতা লাভ করেন? তাঁর সাফল্যের কারণগুলি কী ছিল? |
নেপোলিয়ন কীভাবে ফ্রান্সের ক্ষমতা লাভ করেন? তাঁর সাফল্যের কারণগুলি কী ছিল
ভূমিকা
ফরাসি বিপ্লব যখন এক শোচনীয় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল, সেই সময় নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তাঁর অভাবনীয় সামরিক প্রতিভার সাহায্যে ফ্রান্সকে নিশ্চিত বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং ফরাসি জাতির ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
পর্যায়
নেপোলিয়নের উত্থানের কাহিনি ছিল রোমাঞ্চকর এবং এটি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল, যেমন-
প্রথম পর্যায়
১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত কর্সিকা দ্বীপে এক সম্পন্ন পরিবারে নেপোলিয়নের জন্ম হয়। সামরিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি ফরাসি গোলন্দাজ বাহিনীতে সহকারী লেফটেন্যান্টরূপে যোগ দেন এবং বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন, যেমন :
তুলোঁ বন্দর রক্ষা
ইংরেজ নৌবহরের অবরোধ থেকে ফ্রান্সের তুলোঁ বন্দরকে মুক্ত করেন এবং এর পুরস্কার হিসেবে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হন।
ইটালি অভিযান
ডিরেক্টরদের নির্দেশে ইটালিতে ফরাসি সৈন্যবাহিনীর অভিযানের (১৭৯৬-৯৭ খ্রি.) নেতৃত্ব দেন (ইটালির উত্তরাংশ সেই সময় অস্ট্রিয়ার প্রভাবাধীন ছিল) এবং অস্ট্রিয়ার উপর বারংবার আঘাত হেনে তিনি উত্তর-ইটালির কিছু অংশ অধিকার করেন। এরপর অস্ট্রিয়া ক্যাম্পো-ফর্মিও-র সন্ধি স্থাপনে বাধ্য হয় যার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইউরোপে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে গঠিত প্রথম শক্তিসংঘ ভেঙে যায়।
মিশর অভিযান
১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভারতীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন মিশর অভিযান করেন, কিন্তু নীলনদের যুদ্ধে তিনি ব্রিটিশ নৌ-সেনাপতি নেলসনের কাছে পরাজিত হন।
কনসুলেটের অভিযান
নব প্রবর্তিত কনসুলেট শাসনব্যবস্থা অনুসারে ফ্রান্সের প্রশাসন ব্যবস্থায় তিনজন কনসালকে নিয়ে এক প্রশাসকমণ্ডলী নিযুক্ত করা হয়। এদের মধ্যে প্রথম কনসালই ছিলেন সর্বপ্রধান এবং অন্য দুজন তাঁর সহকারী ছিলেন। নেপোলিয়ন ফ্রান্সের প্রথম কনসাল (First Consul) হিসেবে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় পর্যায়
ক্ষমতা লাভের পর প্রথম কনসাল রূপে নেপোলিয়ন ফ্রান্স বিরোধী দ্বিতীয় রাষ্ট্রজোট-এর আক্রমণ প্রতিহত করেন এবং এরপর ইটালি, জার্মানি, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশ দখল করেন। এইসব সাফল্যের ফলশ্রুতিরূপে ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন কাউন্সিল অফ স্টেটের প্রস্তাব অনুসারে চিরজীবনের জন্য প্রথম কনসাল পদে অধিষ্ঠিত হন এবং তাঁকে উত্তরাধিকারী মনোনয়নের অধিকারও দেওয়া হয়। এইভাবে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের সর্বময় ভাগ্যনিয়ন্ত্রকে পরিণত হন।
তৃতীয় পর্যায়
অবশেষে তাঁর বিরুদ্ধে রাজতন্ত্রীদের বিরোধিতার সুযোগ নিয়ে নেপোলিয়ন ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে প্রজাতন্ত্রের মুখোশ সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করে সিনেটের প্রস্তাবে ফরাসি জাতির সম্রাট উপাধি গ্রহণ করেন। গণভোটের মাধ্যমে তিনি এই পদটি লাভ করেছিলেন। এইভাবে ফরাসি প্রজাতন্ত্র নেপোলিয়নের নেতৃত্বে ফরাসি সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত হয়।
নেপোলিয়নের সাফল্যের কারণ
যদিও ফরাসি জাতি রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করে, কিন্তু তারাই আবার নেপোলিয়নকে সম্রাটরূপে গ্রহণ করেছিল, এর কারণ :
প্রথমত
ফরাসি বিপ্লব পরবর্তী ফ্রান্সে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও বৈদেশিক আক্রমণের ফলে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে নেপোলিয়ন জনসাধারণের সমর্থন লাভ করেন।
দ্বিতীয়ত
নেপোলিয়নের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সামরিক প্রতিভা তাঁকে ফ্রান্সের যোগ্যতম নেতায় পরিণত করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই তাই তিনি জনসাধারণের আস্থা অর্জন করেছিলেন।