নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যর্থ হয়েছিল কেন |
নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করে তাদেরকে ‘হাতে না মেরে ভাতে মারার’ ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর এই বাসনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি। অচিরে তাঁর এই ব্যবস্থা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
মহাদেশীয় ব্যবস্থা ব্যর্থতার কারণ
উপযুক্ত নৌবাহিনীর অভাব
ইউরোপের সুদীর্ঘ উপকূল পাহারা দেবার মতো এবং ব্রিটেন থেকে চোরাই মালের আমদানি বন্ধ করার মতো উপযুক্ত নৌবল ফ্রান্সের ছিল না। অথচ ইংল্যান্ডের পণ্য যাতে ইউরোপে ঢুকতে না পারে, সেজন্য ইউরোপের সুদীর্ঘ উপকূলে সতর্ক প্রহরা জরুরি ছিল।
ফ্রান্স কর্তৃক শিল্পপণ্যের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থতা
শিল্প বিপ্লবের পীঠস্থান ছিল ইংল্যান্ড। ইউরোপের বাজারে ইংল্যান্ডের শিল্পদ্রব্যের ব্যাপক চাহিদা ছিল। শিল্পে অনুন্নত ফ্রান্সের পক্ষে এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব ছিল না।
ইউরোপে অর্থনৈতিক সংকট
নেপোলিয়নের অবরোধ ব্যবস্থার ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়। সমগ্র ইউরোপে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের বণিকরা গোপনে ব্রিটিশ পণ্য আমদানি করতে থাকে।
ফ্রান্সে অবরোধের বিরোধিতা
ফ্রান্সের ভিতরে এক শ্রেণির বণিক ও শিল্পপতি মহাদেশীয় ব্যবস্থার বিরোধিতা শুরু করে। নেপোলিয়নের যুদ্ধ বিগ্রহ ও ইউরোপকে অবরোধ কার্যকরী করার জন্য বিরাট ব্যয়ের ভার বণিক ও শিল্পপতিদের ওপর চাপান। স্বাভাবিক কারণেই তারা এই ব্যবস্থায় অসন্তুষ্ট ছিল।
রাশিয়া ও অন্যান্য দেশ কর্তৃক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ
শুধু নৌ-শক্তির অভাবের জন্যই নয়, ফ্রান্সের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট একপেশে বাণিজ্যনীতিই ইউরোপের অন্য জাতিগুলির কাছে নেপোলিয়নকে বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি ফরাসি বণিকদেরকেই বেশিরভাগ লাইসেন্স দিলে রাশিয়া, অস্ট্রিয়া ও অন্যান্য দেশ ক্ষুব্ধ হয়ে পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে নিজেদের দেশের বন্দর ইংল্যান্ডের বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় এবং মহাদেশীয় অবরোধ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নেয়। মহাদেশীয় ব্যবস্থার ব্যর্থতার পেছনে নেপোলিয়নের অদূরদর্শিতা দায়ী ছিল। মার্কহাম এর মতে, নৌকৌশল ও অর্থনীতি উভয়ক্ষেত্রেই নেপোলিয়নের বাস্তবজ্ঞানের অভাব ছিল। তবে মহাদেশীয় ব্যবস্থার ব্যর্থতা ফরাসি সাম্রাজ্যের পক্ষে শুভ হয়নি।