নেপোলিয়ন কেন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন? |
নৌশক্তিতে বলীয়ান ইংল্যান্ডের বৈদেশিক বাণিজ্য ধ্বংস করতে পারলে একদিকে যেমন ইংল্যান্ডকে পর্যুদস্ত করা যাবে তেমনি ইউরোপে ইংল্যান্ডের বাজার ফ্রান্স দখল করে তার আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটাবে এবং ইউরোপে নেপোলিয়নের রাজনৈতির গৌরব বৃদ্ধি পাবে। এই ধারার বশবর্তী হয়ে নেপোলিয়ন মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করেন।
মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্য
ইংল্যান্ডের নৌ আধিপত্য
ট্রাফালগারের যুদ্ধে পরাজয়ের পর নেপোলিয়ন উপলব্ধি করেন যে, নৌশক্তির অভাবহেতু ফ্রান্সের পক্ষে ইংল্যান্ডের মতো নৌশক্তিতে বলীয়ান দেশের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সমুদ্রের রানি ইংল্যান্ড তার দ্বীপময় সিংহাসনে বসে প্রবল নৌশক্তির সাহায্যে সমুদ্র, উপনিবেশ ও বাণিজ্য শাসন করছিল। এক্ষেত্রে ফ্রান্স ছিল অসহায়।
মন্টজেলার্ড (Montgaillard) প্রস্তাব
১৮০৫ খ্রি. নেপোলিয়নের বিশ্বস্ত সেনাপতি মন্টজেলার্ড অর্থনৈতিক অবরোধের দ্বারা ইংল্যান্ডের শক্তি ধ্বংসের প্রস্তাব দেন। তিনি একটি পরিকল্পনা দ্বারা নেপোলিয়নকে বোঝান যে, ইংল্যান্ডের পণ্যসামগ্রী অবরোধ করলে ইউরোপের বাজারে যে শূন্যত্য দেখা দেবে তা ফরাসি পণ্য দ্বারা পূরণ করা যাবে। ফলে ইউরোপের বাজারে ফ্রান্সই ইংল্যান্ডের স্থান দখল করে নেবে।
ইংল্যান্ডের শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংস
নেপোলিয়ন ভেবেছিলেন ইংল্যান্ডের বাণিজ্য ধ্বংস করতে পারলে তাদেরকে ভাতে মারা যাবে। উপনিবেশ থেকে কাঁচামাল এলে তা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করে ইংল্যান্ড ফুলেফেঁপে ওঠে। কাজেই এই অর্থনৈতিক অবরোধ কার্যকর হলে ইংল্যান্ডের শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।
ফ্রান্সের আর্থিক সমৃদ্ধি
ইউরোপের বাজারে ইংল্যান্ডের পণ্যসামগ্রী প্রবেশ করতে না পারলে সেখানে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে সেই জায়গা ফ্রান্স দখল করবে। ফ্রান্সে শিল্পায়ন ঘটবে এবং আর্থিক দিক থেকে ফ্রান্স লাভবান হবে। অর্থাৎ এতদিন ইউরোপীয় বাণিজ্য থেকে ব্রিটেন যে মুনাফা ভোগ করত এবার থেকে তা ফ্রান্স ভোগ করবে।
ইংল্যান্ডের আর্থিক দুর্দশা
অর্থনৈতিক অবরোধ নীতি কার্যকর হলে ইংল্যান্ডের কলকারখানাগুলি চাহিদার অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। পরিণামে চারিদিকে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে এবং অর্থনৈতিক হাহাকার শুরু হবে। ফলে ইংল্যান্ড বাধ্য হয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে সুবিধাজনক শর্তে সন্ধি স্থাপনে রাজি হবে।
রাজনৈতিক গৌরব বৃদ্ধি
ইংল্যান্ড নেপোলিয়নের কাছে নতিস্বীকার করলে ইউরোপে নেপোলিয়নের আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। গোটা ইউরোপে নেপোলিয়নের বিজয় পতাকা উড়বে। এতে তাঁর রাজনৈতিক গৌরব বৃদ্ধি পাবে।
এইসব ধারণার বশবর্তী হয়ে নেপোলিয়ন ১১ নভেম্বর ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে বার্লিন ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাঁর সাধের মহাদেশীর অবরোধ ব্যবস্থা ঘোষণা করেন।