ডাইরেক্টরির শাসন টীকা লেখো

ডাইরেক্টরির শাসন টীকা লেখো
ডাইরেক্টরির শাসন টীকা লেখো

রোবসপিয়রের পতনের পর ন্যাশনাল কনভেনশন একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে (১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে)। এই সংবিধানবলে যে নতুন সরকার গঠিত হয় তার নাম ছিল ডাইরেক্টরি বা পরিচালক সমিতির শাসন। ডাইরেক্টরি শাসন ব্যবস্থায় শাসন পরিচালনার মূল দায়িত্ব ছিল আইনসভা কর্তৃক নির্বাচিত পাঁচজন ডাইরেক্টর নিয়ে গঠিত একটি কার্যনির্বাহী সমিতির উপর। এটি তৃতীয় বর্ষের সংবিধান নামে পরিচিত। ডাইরেক্টরগণ প্রতি বছর একজন করে পদত্যাগ করতেন এবং নতুন ডাইরেক্টর নিযুক্ত হতেন।

আইনসভার কাঠামো

আইনসভা ছিল দুই কক্ষ বিশিষ্ট। উচ্চ কক্ষ প্রবীণ পরিষদ (The Council of Ancients) ও নিম্ন কক্ষ পাঁচশতের পরিষদ (The Five Hundred) নামে পরিচিত। সংবিধানের রচনাকারী বাঁদিন (Bardin) বলেন, উচ্চকক্ষে ‘যুক্তি’, নিম্নকক্ষে ‘কল্পনা’ প্রতিফলিত হবে।

অভ্যন্তরীণ নীতি

যাজক বিরোধিতা, অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা, প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ হ্রাস করা এবং বকেয়া কর আদায়ের চেষ্টা করা, শিল্প-বাণিজ্যের প্রতি নজর দেওয়া। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ডাইরেক্টরির শাসন তেমন সফল হতে পারেনি।

বাসকুল নীতির প্রয়োগ

ডাইরেক্টরগণ ছিলেন অদূরদর্শী ও অপদার্থ শাসক। তাই দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থী দলগুলি ডাইরেক্টরি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই শাসনের বিরুদ্ধে অন্তবিপ্লব শুরু করে। তাই ডাইরেক্টরগণ বাসকুল (Bascule) নীতির মাধ্যমে দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থীর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতেন। যদিও অর্থনৈতিক সংকটের দরুন ডাইরেক্টরীয় ‘বাসকুল’ বা মধ্যপন্থা নীতি ব্যর্থ হয়।

ডাইরেক্টরি শাসনের ব্যর্থতা

ডাইরেক্টরগণ ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত, নৈতিক চরিত্রহীন। ডাইরেক্টরির শাসনে ঠিকাদার, ফাটকাবাজ ও বণিকেরা আরও ধনী হয়ে ওঠে। মুদ্রাস্ফীতি জনিত কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। সাধারণ লোকের দুঃখদুর্দশা বৃদ্ধি পায়। ডাইরেক্টরগণ ছিলেন বুর্জোয়া শ্রেণির লোক, তাই তাঁরা কৃষকদের প্রতি সদয় ছিলেন না। এ কারণে ডাইরেক্টরগণ দরিদ্র শ্রেণীর সমর্থন হারান। এছাড়াও ডাইরেক্টরির আমলে সর্বসাধারণের ভোটাধিকার না থাকায় এর প্রকৃতি গণতান্ত্রিক চরিত্র ছিল না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডাইরেক্টরির শাসন ব্যর্থ হয়। ব্যবিউফের বিদ্রোহ দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। ডাইরেক্টরির সদস্যদের মধ্যে কোনো সহমত ছিল না বলেই যৌথভাবে তারা কাজ করতে পারে।

অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেও বৈদেশিক ক্ষেত্রে ডাইরেক্টরির শাসনের সাফল্য লক্ষ করা যায়। নেপোলিয়নের যোগ্য নেতৃত্বে ফ্রান্স বিভিন্ন বৈদেশিক যুদ্ধে জয়লাভ করে। অবশেষে নানা সমস্যায় জর্জরিত ডাইরেক্টরিকে ক্ষমতাচ্যুত করে নেপোলিয়ন শাসন ক্ষমতা দখল করেন এবং ফ্রান্সে কনসুলেট শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন (১৭৯৯ খ্রি.)।

Leave a Comment