রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আফ্রিকা কবিতার ভাববস্তু উল্লেখ করো। |
সৃষ্টির সূচনাকালেই পৃথিবীর পুবদিক থেকে আফ্রিকাকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে গিয়েছিল উত্তাল সমুদ্র এবং তাকে বেঁধে দিয়েছিল গহন অরণ্যের সঙ্গে। সেখানে থাকতে থাকতেই আফ্রিকা চিনে নিয়েছিল দুর্গমকে, জয় করেছিল জল-স্থল-আকাশের অজানা সংকেত এবং শঙ্কাকে। তবুও সে দীর্ঘকাল আলো না-পৌঁছানো অরণ্যের আড়ালে অপরিচিত, উপেক্ষিত ছিল। হয়তো বা ভালোই ছিল। কিন্তু যেদিন থেকে আফ্রিকায় পা রাখে সভ্যতার গর্বে গর্বিত, অথচ লোভে বর্বর ও নিষ্ঠুর দাসব্যবসায়ীর দল, সেদিন থেকে আফ্রিকার অপমানের শুরু। অথচ আফ্রিকাকে চরম অপমান করার সময়ে এইসব দাসব্যবসায়ীদের পাড়ায় পাড়ায় ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের বহর, শিশুর প্রতি মায়ের স্নেহ কিংবা কাব্য-সংগীতের সাধনা তথা সভ্যতার নিদর্শনের দৃষ্টান্ত কম ছিল না।
আজকের দিনে যখন পশ্চিমে ঘনিয়ে উঠেছে সমূহ বিপদ-সম্ভাবনা, ঘনিয়ে আসছে অন্তিমকাল, তখন আফ্রিকাকে অতীতে অপমান করার জন্য তথাকথিত সভ্যতার ধারক-বাহকদের উচিত আফ্রিকার কাছে ক্ষমা চাওয়া। সবার হয়ে সেই উপযুক্ত কাজটি সারতে পারেন যুগান্তের কবি। চারদিকে হিংস্র প্রলাপের মাঝে ‘ক্ষমা করো’-এই বাক্যই হয়ে উঠতে পারে। শান্তির পুণ্যবাণী।