‘দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে:’-কার প্রতি, কার এই আহ্বান? মানহারা মানবীটি কে? ‘মানহারা মানবীর দ্বারে’ দাঁড়াতে বলার কারণ কী? |
সৃষ্টির প্রথমপর্বে আফ্রিকা মহাদেশটি যুক্ত ছিল প্রাচী বা পূর্ব পৃথিবীর সঙ্গে। রুদ্র সমুদ্রের বাহু সেই প্রাচী ধরিত্রীর বুক থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে বেঁধে দেয় দূরে বড়ো বড়ো গাছপালাযুক্ত প্রায় অন্ধকার অরণ্যের সঙ্গে। সেখানে নিভৃত অবকাশে আফ্রিকা সংগ্রহ করছিল দুর্গমের রহস্য। চিনছিল জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ্য সংকেতকে। কেননা তখন ‘প্রকৃতির দৃষ্টি অতীত জাদু মন্ত্র জোগাচ্ছিল’ আফ্রিকার চৈতনাতীত মনকে। তাই যেন সে বিরুপের ছদ্মবেশে বিদ্রূপ করতে পারছিল। ভীষণকে। আসলে সে অরণ্য-প্রকৃতির ভীষণতা এবং দুর্গমতাকে জয় করে ভয়কেও চাইছিল হার মানাতে-
আফ্রিকার সেই ভয়কে জয় করার দিনে সভ্য মানুষের কাছে অপরিচিত ছিল তার মানবরূপ। সেকারণে সভ্যসমাজের তথাকথিত সভ্য মানুষজন তাকে উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করে এবং দাসব্যবসায়ীরা আফ্রিকাবাসীদের ধরে নিয়ে গিয়ে ক্রীতদাস বানাবার জন্যে হানা দেয় আফ্রিকায়। তারা ছিল হিংস্র, অত্যাচারী, নির্লজ্জ। তাই যেন তখন সেই-
তাদের অত্যাচারে অশ্রু ঝরল আফ্রিকাবাসীদের। সেখানকার অরণ্যপথের ধুলো অশ্রুজল আর রক্তে যেন কাদা হয়ে গেল। দাসব্যাবসায়ীদের সেই অত্যাচার, সেই অপমান আফ্রিকার পক্ষে ভোলা সম্ভব নয়। কেননা দাসব্যবসায়ীরা চিরকালের দাসত্বচিহ্ন খোদাই করে দিয়ে গিয়েছিল আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাসে।
-এভাবে মান হারিয়েছিল আফ্রিকা মহাদেশ। কবি এসব জানতেন বলে তাঁর মনে হয়েছে আফ্রিকাকে অপমান করবার পাপ দূর করতে শতাব্দীর এই শেষপ্রান্তে পৌঁছে ওই মহাদেশের দ্বারে দাঁড়িয়ে সভ্যসমাজের ক্ষমা চাওয়া উচিত। সেদিক দিয়ে অপাপবিদ্ধ, নিরপেক্ষ যুগান্তের কবিই সে কাজে এগিয়ে আসতে পারেন।