বৌদ্ধ দর্শন সম্মত অষ্টাঙ্গিক মার্গ আলোচনা করো
বৌদ্ধ দর্শন সম্মত অষ্টাঙ্গিক মার্গ আলোচনা করো |
বৌদ্ধ দর্শন সম্মত অষ্টাঙ্গিক মার্গ
তৃতীয় আর্যসত্যে বুদ্ধদেব দুঃখ নিরোধ করার মাধ্যমে নির্বাণ লাভের কথা বলেছেন। চতুর্থ আর্যসত্যে তিনি নির্বাণ লাভের পথের উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, দুঃখ নিরোধের উপায় বা পথ তথা মার্গের কথা বলেছেন। যে পথ অবলম্বন করে দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তাকেই বুদ্ধদেব দুঃখ নিরোধ মার্গরূপে উল্লেখ করেছেন। দুঃখ নিরোধের এরূপ পথ বা মার্গ হল আটটি। সে কারণেই এগুলিকে বলা হয় অষ্টাঙ্গিক মার্গ। দুঃখ নিরোধের মার্গ বা উপায় অষ্ট অঙ্গবিশিষ্ট বলে এরূপ নামকরণ হয়েছে। এই অষ্টাঙ্গিক মার্গ হল-
[1] সম্যক দৃষ্টি
সম্যক দৃষ্টির অর্থ হল-যথার্থ বা সত্য জ্ঞান। এই সত্য বা যথার্থ জ্ঞান হল জীবের নির্বাণ লাভের প্রথম সোপান। এর মাধ্যমে জীব মিথ্যাজ্ঞান ও সত্যজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে এবং তত্ত্বজ্ঞান লাভে সমর্থ হয়। চারটি আর্যসত্যের জ্ঞানই হল তত্ত্বজ্ঞান। তত্ত্বজ্ঞানের মাধ্যমেই জীব নির্বাণ লাভ করে। আর তত্ত্বজ্ঞানের একটি মূলভিত্তি হল সম্যক দৃষ্টি।
[2] সম্যক সংকল্প
চারটি আর্যসত্য অনুযায়ী নিজের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং চরিত্র গঠন করার ইচ্ছাকেই বলা হয় সম্যক সংকল্প। এরূপ সম্যক সংকল্পের দ্বারা জীব হিংসা ত্যাগ করে তার জীবনধারাকে উন্নত করে তুলতে পারে এবং নিজেকে নির্বাণের অভিমুখী করে তুলতে পারে।
[3] সম্যক বাক্
ম্যক বাক্ অর্থ হল যথার্থ বাক্ বা বাক্যে সংযম স্থাপন। পরনিন্দা, মিথ্যাভাষণ প্রভৃতি পরিত্যাগের মাধ্যমেই জীবের মধ্যে সম্যক বাক্ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জীবকে নির্বাণের অভিমুখী করে তোলে।
[4] সম্যক কর্মান্ত
সম্যক কর্মান্তের অর্থ হল সংযত ও সৎকর্মের আচরণ। অস্তেয় (চুরি না করা), ব্রহ্মচর্য (কামভোগ না করা), অহিংসা (হিংসা না করা), সত্যভাষণ (মিথ্যা না বলা) এবং মদ্যমাদক বর্জন (নেশা না করা) প্রভৃতি পঞ্চশীলের আচরণের মাধ্যমে জীব সম্যক কর্মান্তের অধিকারী হয়।
[5] সম্যক আজীব
এর অর্থ হল সৎপথে জীবনযাপন করা। জীবনযাপনের জন্য যা প্রয়োজন সেগুলিকে সৎ উপায়ে অর্জন করাই হল সম্যক আজীব। বুদ্ধদেব তাই বলেছেন, মানুষের লক্ষ্য শুধুমাত্র সৎ হলেই হবে না। মানুষের লক্ষ্যপূরণের উপায়ও সৎ হতে হবে।
[6] সম্যক ব্যায়াম
সম্যক ব্যায়ামের অর্থ হল সঠিক অনুশীলন। দৈহিক অনুশীলনের দ্বারা যেমন দেহ সুস্থ থাকে, তেমনি মানসিক অনুশীলনের দ্বারা মন সুস্থ ও সবল থাকে। এর ফলে আমাদের মনের কুচিন্তার উচ্ছেদ হয় এবং সৎচিন্তার প্রতিষ্ঠা হয়।
[7] সম্যক স্মৃতি
কোনো বস্তু বা বিষয়ের যথাযথ স্মরণের নামই হল সম্যক স্মৃতি। নির্বাণের পথে অগ্রসর ব্যক্তিকে সর্বদাই স্মরণ রাখতে হবে যে, এই জগতের সব কিছুই দুঃখময় ও অনিত্য। চারটি আর্যসত্যের স্মরণই মানুষকে নির্বাণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।