“তপনকে এখন ‘লেখক’ বলা চলে।”—কার, কখন এরকম অনুভূতি হয়েছিল? সত্যিকারের লেখক হওয়ার কীরূপ অনুভূতি তপনের হয়েছিল? |
‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের তপনের ছেলেবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ছিল। তাই গল্প বিষয়টি তার অজানা ছিল না। কেবল সে জানত না যে লেখকরা তার বাবা-কাকা-মামার মতো সাধারণ মানুষ। নতুন ছোটো মেসোমশাইকে দেখে তার ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে যায় এবং নিজের উপর তার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। দুপুর বেলা সবার অলক্ষ্যে মামাবাড়ির তিনতলার সিঁড়িতে একাসনে বসে আস্ত একটা গল্পও লিখে ফেলে। লেখার পর তপনের সারাদেহ রোমাঞ্চিত হয়, সে বিশ্বাস করতে পারছিল না যে সত্যিই সে একটা গল্প লিখে ফেলেছে। নিজের সাহিত্য সৃষ্টির উল্লাসে তপন নিজেকে লেখক বলে মনে করতে থাকে।
নতুন লেখক ছোটো মেসোমশাই তপনের আকাঙ্ক্ষার কথা উপলব্ধি করেন। বাড়ির অন্যরা যখন তপনের লেখা নিয়ে হাসিঠাট্টা করছিল ছোটোমেসো তখন তাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তবে ছোটোমেসো গল্পটি ছাপতে দেওয়ার আগে কারেকশান করে দেন, যাতে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার সম্পাদক ওটাকে ফিরিয়ে না দেন।
গল্পটি ছাপা হওয়ার পর ছোটোমেসো ও মাসি তপনের গল্প ছাপা হওয়া ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা নিয়ে তপনদের বাড়িতে আসলে প্রথমে সবাই উৎসাহিত হয়ে তপনের প্রশংসা করতে থাকে। কিন্তু ছোটোমেসো ‘একটু-আধটু কারেকশান’-এর কথা বললে সবাই তপনের কৃতিত্বের চাইতে ছোটোমেসোর মহানুভবতার প্রশংসা করতে থাকে। এরপর নিজের লেখা পড়তে গিয়ে তপন চরম আঘাত পায়। ওই গল্পে সে নিজেকে খুঁজে পায় না; বরং সবকিছুই তার নতুন বলে মনে হয়। লেখক রূপে পরিচিত হতে গিয়ে নিজের সৃষ্টির অবমাননা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে তপন। সে প্রতিজ্ঞা করে নিজে গিয়ে তার লেখা ছাপতে দেবে, তাতে যদি লেখা ছাপা না হয় তবুও।