‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
|
‘Art is objectified Pleasure’। তবে সেই সুখানুভব শিল্পটির সার্বিক সার্থকতার ওপর নির্ভর করে। শিল্প হিসাবে ছোটোগল্পের ক্ষেত্রেও কথাটি সমান সত্য। এই ছোটোগল্পের কাহিনিবুনন, চরিত্রচিত্রণ, নামকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে লেখকের সার্থকতাই পাঠকের কাছে আনে সেই ‘objectified pleasure’। লেখকের লেখনীর গুণে তা হয়ে ওঠে শিল্পগুণান্বিত। আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের নামকরণের ক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাই-
মূল বিষয়বস্তু
স্কুলে-পড়া তপন তার নতুন মেসো পেশায় অধ্যাপক হলেও সত্যিকারের একজন লেখক জেনে অবাকই হয়। মেসোকে দেখে-বুঝে সে আরও অবাক হয় এটা জেনে যে, লেখকরাও আর সবার মতো সাধারণ মানুষ। উৎসাহে তপন নিজেও একটা গল্প লেখে। ছোটোমাসি তপনের সেই গল্পটাকে নিয়ে গিয়ে নিজের বরকে দেয়। সেটা পড়ে তিনি তপনকে খুশি করতে জানান- গল্পটা ভালো, সেটাকে একটু কারেকশান করে ছাপতে দেওয়া যেতে পারে। তপনের মাসি তাঁকে সেটা ছেপে দিতে বলে। নতুন মেসো সেটা নিয়ে যান। কিছুদিন বাদে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় সেটা ছাপিয়ে দিয়ে নিয়ে আসেন। সবাই সেটা পড়ে বলে, তপনের মেসো ছাপিয়ে দিয়েছেন। তপন গল্পটা পড়ে বুঝতে পারে মেসো তার গল্পটা আমূল ‘কারেকশান’ করেছেন। তাতে সে কষ্টই পায় এবং সংকল্প করে এরপরে তার লেখা কাঁচা হলেও সে নিজেই গিয়ে দিয়ে আসবে। আসলে এভাবে নিজের লেখা গল্পে অন্যের লেখা লাইন তপন আর পড়তে চায় না। কেননা, সেটা বড়ো দুঃখের ও অপমানের।
ব্যঞ্জনাগত দিক
‘জ্ঞানচক্ষু’ শব্দটির অর্থ বোধক্ষমতা বা অন্তদৃষ্টি। সেদিক দিয়ে নামটি বিশেষভাবে ব্যঞ্জিত। গল্পে লেখক এবং লেখা সম্পর্কে ‘জ্ঞানচক্ষু’ উন্মীলিত হয়েছে তপনের।
কেন্দ্রীয় আবর্তন
গল্পটির কেন্দ্রীয় আবর্তন ঘটেছে তপনের ‘জ্ঞানচক্ষু’ উন্মোচনকে কেন্দ্র করে। সব চরিত্র ও ঘটনা সেই কেন্দ্রীয়।
-এভাবে তপনের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচনকে কেন্দ্র করে ব্যঞ্জনা, কেন্দ্রীয় আবর্তন ও ‘objectified pleasure’ ঘটেছে বলেই আলোচ্য গল্পের নামকরণ যথার্থ হয়েছে।