দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;/বলো ‘ক্ষমা করো’-“-আফ্রিকাবাসীদের কেন ‘মানহারা মানবী’ বলা হয়েছে? আফ্রিকাবাসীর কাছে কাকে, কেন ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে? |
কবি রবীন্দ্রনাথ যুগান্তের কবিকে আফ্রিকাবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন।
সভ্যজগতের উপেক্ষার দৃষ্টিতে থাকা আফ্রিকার উপর ‘বর্বর লোভ’ নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল সাদা চামড়ার সভ্য মানুষ। নিরীহ প্রকৃতিলালিত মানুষদের দাস বানানোর জন্য। আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদের লোভ তাদেরকে হিংস্র নেকড়ে অপেক্ষা ভয়ংকর করে তুলেছিল। সভ্য মানুষের হাতে আফ্রিকাবাসীদের শোষিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা সংবেদনশীল কবিকে ব্যথিত করেছিল।
কবি তাঁর লেখনীতে। পাশ্চাত্য দুনিয়ার অমানবিকতার রূপটির প্রতি ঘৃণা ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি এদেরকে ভূষিত করেছেন ‘মানুষ-ধরার দল’ উপমায়। কবির উপলব্ধিতে এই সাম্রাজ্যলোভী সভ্যজগৎ নিরপরাধ মানুষের রক্ত আর অশ্রু ঝরিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে। তাদের কাঁটামারা জুতোর আঁচড়ে রচিত হয়েছে আফ্রিকার ‘অপমানিত ইতিহাস’।
কিন্তু ইতিহাসের চাকায় শাসক আর শাসিতের পটপরিবর্তন ঘটে। ইউরোপ জুড়ে নানারকম পরিবর্তন, অন্তর্কলহ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেখেছেন কবি। আফ্রিকার কালো ইতিহাস মুছে গিয়ে নতুন সম্ভাবনা মাথা তুলেছে ঠিকই, কিন্তু আফ্রিকা ও তার অধিবাসীদের ওপর যে অবিচার হয়েছে তার জন্য সভ্য মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে যুগান্তের কবির ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়াটাই বড়ো কর্তব্য। আফ্রিকাবাসীর রক্ত অশ্রুতে মিশে ইতিহাসের পাতায় যে কলঙ্ক চিহ্নি দাগ কেটেছে, তা যেন ক্ষমার আদর্শে নির্মল হয়ে ওঠে। সভ্যতার শেষ পুণ্য বাণী রূপে বুদ্ধদেবের ‘মা হিংসী’ বাণী যেন পাথেয় হয় নবগঠিত আফ্রিকার-এটাই কবির অভিপ্রায়।