“প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু/মন্ত্র জাগাচ্ছিল…”- কোথায় এই মন্ত্র জাগাচ্ছিল? ‘প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু মন্ত্র’ কীভাবে আফ্রিকার সহায় হয়েছিল? |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আফ্রিকা’ কবিতায় পৃথিবীর মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নিভৃত আফ্রিকা মহাদেশের চেতনাতীত মনে প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু মন্ত্র জাগাচ্ছিল। সমুদ্রের রুদ্র বাহু আফ্রিকাকে প্রাচী ধরীত্রির বুক থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেল নিভৃতে; আর বনস্পতির নিবিড় আচ্ছাদনে | তাকে বেঁধে রাখল। সভ্যতার জ্ঞানসীমার বাইরে প্রকৃতির নিজস্ব বিচরণক্ষেত্র থাকে, প্রকৃতিই সেখানে বিরূপতার বিরুদ্ধে লড়াই — করে বেঁচে থাকার পথ দেখায়। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতে প্রকৃতি বেঁচে থাকার মন্ত্র সঞ্চারিত করেছে আফ্রিকার মানুষদের জন্য। গহন অরণ্য, দুর্গম ভূমিরূপ আর হিংস্র ভয়ংকর বন্যজন্তুর সহাবস্থানে আফ্রিকাকে প্রকৃতি যেন সভ্যজগতের আগ্রহের দৃষ্টি থেকে সারিয়ে রেখেছে।
সভ্যজগৎ উন্নাসিকতা দিয়ে ব্যঙ্গ করেছে সেই প্রকৃতি লালিত সভ্যতাকে, কিন্তু সেখানকার মানুষ বহিঃজগতের অন্তরালে গড়ে তুলেছে নিজস্ব জীবনছন্দ ও সংস্কৃতি। অর্থাৎ, দুর্গম-ভয়ংকর রূপই আফ্রিকার সম্পদ। তাই “জলসম্বল-আকাশের দুর্বোধ সংকেতে”-সে নিজেকে প্রতিরোধের শক্তিতে বলীয়ান করেছিল। আফ্রিকার মানুষজন নিজেরাও ভয়কে জয় করেছিল ‘বিরূপের ছদ্মবেশে’। নিজের অস্তিত্ব রক্ষা ও সভ্যজগতের আগ্রাসন থেকে রক্ষার জন্যই আফ্রিকার বিভীষিকাময় প্রচণ্ড মহিমা প্রকাশ পেয়েছিল। আর এই কাজে প্রকৃতির সহায়তা সবচেয়ে বড়ো অবলম্বন। এভাবেই সভ্যসমাজের জ্ঞানসীমার বাইরে প্রকৃতির যে নিজস্ব ক্ষমতার ভাণ্ডার, সেই ‘দৃষ্টি-অতীত জাদু মন্ত্র’ প্রকৃতি সঞ্চারিত করেছিল আফ্রিকার সেই সূচনালগ্নে।