অসুখী একজন কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো

'অসুখী একজন' কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো
‘অসুখী একজন’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
কবিতার নামকরণ তার ভিতরের মৃন্ময় সত্তাকে চিন্ময় সত্তার সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটায়। সুগভীর ব্যঞ্জনার প্রকাশ ঘটে নামকরণে। কবিতার নামকরণ সে কারণে খুব সাধারণ নয়। পাবলো নেরুদার যে-কোনো কাব্য-কবিতার নামকরণ সাধারণত ব্যঞ্জনামুখ্য। আমাদের আলোচ্য ‘অসুখী একজন’ কবিতা সাধারণভাবে একজনের অসুখী থাকার কথা বোঝায় ঠিকই, কিন্তু এই বেদনা সমগ্র মানবজাতির দুঃখকেই ইঙ্গিত করে। কবিতায় কথক চরিত্রের জবানিতে অসুখী এক মেয়ের জীবনের শোচনীয় পরিণামের কথা ও তার কারণ সবিস্তারে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তার যন্ত্রণাদগ্ধ জীবনের আনুপূর্বিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে ‘অসুখী একজন’ কবিতায়।

বক্তার জবানি অনুযায়ী তার প্রিয়জন মেয়েটিকে একাকী ঘরের দরজায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে সে দূর দেশে যেতে বাধ্য হয়েছে। দিন-সপ্তাহ-মাস-বছরের পর বছর কেটে গেলেও সে ফিরে আসতে পারেনি বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে।

এই পটভূমিকায় আবার যুদ্ধ নামে। মনুষ্যত্ব ধ্বংসকারী যুদ্ধ, যার প্রচণ্ড ধ্বংসলীলায় মানবসভ্যতার বিলয় ঘটতে শুরু করে। শিশুসহ প্রায় সমস্ত মানুষ খুন হয়ে যায়, কেবলমাত্র বেঁচে থাকে একাকী মেয়েটি। সমস্ত গ্রাম-নগর যুদ্ধের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মন্দির-মসজিদ, গির্জা যা সাধারণ মানুষের আশাভরসার স্থল, তা-ও যুদ্ধের আগুনে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। সম্পূর্ণ শহর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। আর তার স্থলে রয়েছে শুধু পোড়া কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা। পথের বুকে রয়েছে কালো রক্তের দাগ। অথচ সেই অসুখী মানুষটি অর্থাৎ মেয়েটি তার পথ চেয়ে এখনও বসে রয়েছে। মেয়েটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত নিঃস্ব মানুষের প্রতিভূ-এরূপ ব্যঞ্জনার সুগভীর প্রত্যয়ে কবিতাটি ব্যঞ্জিত। সুতরাং, নামকরণ যথার্থভাবেই সার্থক হয়ে উঠেছে।

Leave a Comment