নেপোলিয়নকে ‘বিপ্লবের সন্তান’ বলা হয় কেন? |
প্রথম কনসাল হিসেবে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী হলেও নেপোলিয়ন অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, বিপ্লবের ফলে ফরাসিদের মনে যে উচ্চাশার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করতে না পারলে খুব বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না। তাই তিনি নিজেকে ‘বিপ্লবের সন্তান’ রূপে তুলে ধরেন। তিনি স্বাধীনতা ছাড়া বিপ্লবের অপর দুটি আদর্শ ‘সাম্য’ ও ‘মৈত্রী’-কে বাস্তবায়িত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।
নেপোলিয়নের রাজপদে উত্থান
নেপোলিয়ন নিজে ছিলেন সাম্যের প্রতীক। অতি সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী না হয়েও ফ্রান্সের সম্রাট পদে আসীন হন জনগণের ভোটের দ্বারা। বিপ্লবের সাম্যবাদী আদর্শই জনগণের দ্বারা তাঁর উত্থানকে সম্ভবপর করেছিল।
বিপ্লবকালীন ফ্রান্সে সংবিধান সভা কর্তৃক প্রচলিত নিয়মগুলি বহাল রাখা
সংবিধান সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট সামন্তপ্রথা, ভূমিদাসপ্রথা, সামন্তকর, করভি বা বেগার খাটা, টাইথ বা ধর্মকর ইত্যাদির বিলোপসাধন করেছিল। নেপোলিয়ন এইসব বিপ্লবী নিয়মগুলিকে বহাল রেখে বিপ্লবকে সম্মান জানিয়েছিলেন।
আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা
নেপোলিয়ন ফ্রান্সের বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত আইনগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন করে ‘কোড নেপোলিয়ন’ প্রণয়ন করেন। এর ফলে ফ্রান্সে আইনের চোখে সমতার নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিপ্লবের স্থায়িত্ব প্রদান
বিপ্লবী ফ্রান্সকে রক্ষা করার জন্য নেপোলিয়ন একাধিকবার প্রতিক্রিয়াশীল বিভিন্ন শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে ফ্রান্স ও বিপ্লব উভয়কেই রক্ষা করেছিলেন।
ইউরোপে বিপ্লবের আদর্শ প্রসার
ফ্রান্সের পাশাপাশি ইটালি, জার্মানি-সহ ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রেও নেপোলিয়ন বিপ্লবের আদর্শের প্রসার ঘটান। তাঁর শাসনাধীনে ওইসব দেশে সামন্তপ্রথার অবসান হয় এবং আইনের মাধ্যমে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তাঁর শাসনকালে আইনের সাম্য, সামন্ততান্ত্রিক শোষণের অবসান, আইনবিধি প্রণয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে বিপ্লবের ধারক ও বাহকরূপে প্রতিষ্ঠা করেন। বিপ্লবের মধ্য দিয়েই তাঁর উত্থান ঘটেছিল। কাজেই তিনি ছিলেন ‘বিপ্লবের সন্তান’।