বিসমার্কের ‘রক্ত ও লৌহনীতি’ টীকা |
রক্ত ও লৌহনীতির প্রয়োেগ
অটোভন বিসমার্ক ছিলেন জার্মান রাজনীতির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করবার জন্য যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তাকে বলা হয় রক্ত ও লৌহ নীতি। এই নীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ জার্মানির জন্ম দেন বিসমার্ক। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির এক বিশেষ পরিস্থিতিতে বিসমার্ক প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি বুঝেছিলেন, জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করতে গেলে কোনো আন্দোলনের দ্বারা হবে না। এর জন্য দরকার যুদ্ধ। তাই তিনি তাঁর রক্ত ও লৌহনীতির প্রয়োগ ঘটান। তিনি বোঝেন, জার্মানির ঐক্যতে প্রধান বাধা যে-সমস্ত দেশ, সেগুলি সহজে জার্মানির ঐক্য হতে দেবে না। তাই যুদ্ধ ছাড়া কোনো পথ তিনি আর পেলেন না।
বিসমার্ক তিনটি যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন-
ডেনমার্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ডেন জাতি অধ্যুষিত শ্লেজউইগ এবং জার্মান জাতি অধ্যুষিত হলস্টাইন প্রদেশ দুটিকে ডেনমার্কের রাজা এক নতুন শাসনতন্ত্রের দ্বারা ডেনমার্কভুক্ত করার উদ্যোগ নেন। লন্ডনের সন্ধি বলে এই দুটি জাতির উপর ডেনমার্কের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সঙ্গে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন (১৮৬৪ খ্রি.)। যুদ্ধে ডেনমার্ক পরাজিত হয়। গ্যাস্টিনের চুক্তিতে অস্ট্রিয়া হলস্টাইন পায় এবং প্রাশিয়া শ্লেজউইগ লাভ করে।
অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ
হলস্টাইন সমস্যাকে অজুহাত করে বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। অস্ট্রিয়া স্যাডোয়ার যুদ্ধে (১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ) পরাজিত হয়ে প্রাগের সন্ধি (১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ) স্বাক্ষরে বাধ্য হয়। এই সন্ধির দ্বারাー ① অস্ট্রিয়া জার্মানির নেতৃত্ব ত্যাগ করে, ② শ্লেজউইগ ও হলস্টাইন প্রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়।
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
জার্মান রাজ্যগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য ছিল। অবশেষে এমস টেলিগ্রামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফ্রাঙ্কো-প্রাশিয় বা সেডানের যুদ্ধ (১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ) শুরু হয়। সেডানের যুদ্ধে ফ্রান্স পরাজিত হয়ে ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধি স্বাক্ষর করে। ওই সন্ধি দ্বারা- ① আলসাস ও লোরেন প্রদেশ দুটি ফ্রান্স জার্মানিকে ছেড়ে দেয়। ② দক্ষিণ ও উত্তর জার্মানি প্রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। এইভাবে রক্ত ও লৌহনীতির প্রয়োগ দ্বারা জার্মানির ঐক্যকরণ সম্পূর্ণ হয়।