নেপোলিয়ানের সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত কীভাবে ঘটেছিল

নেপোলিয়ানের সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত কীভাবে ঘটেছিল – নেপোলিয়ন তাঁর আত্মজীবনীতে নিজেকে ‘বিপ্লবের ধ্বংসকারী’ বলে অভিহিত করেছেন। ঐতিহাসিক থমসন ও গ্যারেট (Thomson & Garrett) বলেছেন, নেপোলিয়ন বিভিন্নভাবেই ফরাসি বিপ্লবের লক্ষ্য ও নীতি লঙ্ঘন করেন, যে বিপ্লবী আন্দোলন থেকে তাঁর উত্থান।
 
তো চলুন আজকের মূল বিষয় নেপোলিয়ানের সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত কীভাবে ঘটেছিল পড়ে নেওয়া যাক।

নেপোলিয়ানের সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত কীভাবে ঘটেছিল

নেপোলিয়ানের সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত কীভাবে ঘটেছিল
নেপোলিয়ানের সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত কীভাবে ঘটেছিল?

নেপোলিয়ানের সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত

নেপোলিয়ন তাঁর আত্মজীবনীতে নিজেকে ‘বিপ্লবের ধ্বংসকারী’ বলে অভিহিত করেছেন। ঐতিহাসিক থমসন ও গ্যারেট (Thomson & Garrett) বলেছেন, নেপোলিয়ন বিভিন্নভাবেই ফরাসি বিপ্লবের লক্ষ্য ও নীতি লঙ্ঘন করেন, যে বিপ্লবী আন্দোলন থেকে তাঁর উত্থান। ( but in many ways he reversed the aims and principles of the movement from which he sprang”) নেপোলিয়নের কার্যাবলির মধ্যেও বিপ্লব বিরোধিতার প্রকাশ লক্ষ করা যায়।

ফ্রান্সে

  • ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান আদর্শ ‘স্বাধীনতা’ ও গণতন্ত্রের প্রতি নেপোলিয়নের বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা ছিল না। তিনি ফ্রান্সের প্রথম কনসাল হয়ে সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন। অন্য দুজন কনসাল ছিলেন তাঁর আজ্ঞাবহ কর্মচারী মাত্র।
  • তিনি বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র ও রাজসভার জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব-অনুষ্ঠান পুনরায় প্রবর্তন করেছিলেন। (ফরাসি বিপ্লবে রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ হয় ও প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সূত্র ধরে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের কনসাল হন। কিন্তু তিনি নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করে বিপ্লবী আদর্শের বিচ্যুতি ঘটান)।
  • তিনি সরকারি কর্মচারীদের নির্বাচন প্রথার পরিবর্তে মনোনয়ন প্রথা চালু করেন। ফলে তাঁর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। 
  • তিনি বিপ্লবী জেকোবিন দলের প্রজাতন্ত্র ও গণভোটের আদর্শ বিসর্জন দিয়েছিলেন। তিনি বাকস্বাধীনতা হরণ, বিনা বিচারে গ্রেফতার প্রভৃতির প্রচলন করে বিপ্লবের আদর্শকে জলাঞ্জলি দেন।

বিদেশে

নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমে ইউরোপে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ বিস্তার লাভ করেছিল, এ ধারণাও সম্পূর্ণ ঠিক নয়।

  • নেপোলিয়ন নববিজিত দেশগুলিতে মধ্যযুগীয় শোষণ ও অসাম্যের অবসান ঘটিয়ে ওইসব অঞ্চলে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে জনমুখী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই প্রজাতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতান্ত্রিক শাসন চালু করেন। ওইসব দেশে নিজের ভাই বা আত্মীয়দের শাসন চাপিয়ে দিয়েছিলেন যা স্বজনপোষণ নীতির পরিচায়ক ও বিপ্লবী আদর্শের পরিপন্থী ছিল।
  •   তিনি ইউরোপে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর বিজিত দেশে রাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসন স্থাপন করেছিলেন।
  • নেপোলিয়ন তাঁর বিজিত রাজ্যে জনপ্রিয়তা লাভের জন্য পুরোনো রাজবংশগুলির বিরুদ্ধে জনমতকে কাজে লাগান। তিনি সাধারণ জনগণকে নিজের পক্ষে আনার জন্য বিপ্লবের সাম্যনীতি প্রচার ও প্রয়োগ করেন। কিন্তু তিনি তাঁদের স্বাধীনতা বা গণতান্ত্রিক অধিকার দেননি। 

ঐতিহাসিক ডেভিড থমসন (David Thomson) বলেছেন, “নেপোলিয়ন সাম্যের আদর্শকে স্বীকার করলেও স্বাধীনতার আদর্শকে বাতিল করেছিলেন।

Leave a Comment