আসিয়ান-এর সাফল্য ও ব্যর্থতা আলোচনা করো

আসিয়ান-এর সাফল্য ও ব্যর্থতা আলোচনা করো

আসিয়ান-এর সাফল্য ও ব্যর্থতা আলোচনা করো
আসিয়ান-এর সাফল্য ও ব্যর্থতা আলোচনা করো

ASEAN গড়ে উঠেছিল মূলত দুটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে— (i) দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বৃহৎশক্তির হস্তক্ষেপ ও সামরিক তৎপরতা রোধ করা এবং (ii) এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিরোধ অতিক্রম করে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। এই উদ্দেশ্যগুলি বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে আসিয়ানের সাফল্যগুলি হল-

আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা:

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে আসিয়ান তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

মালয়শিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে আসিয়ানের বিদেশ মন্ত্রীগণ মিলিত হয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়াকে Zone of Peace, Freedom and Neutrality (ZOPFAN) হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

পরবর্তীকালে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই অঞ্চলটিকে ‘পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আসিয়ানের ১০টি সদস্যরাষ্ট্র ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর ‘দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল চুক্তি’ (Southeast Asia Nuclear Weapon Free Zone Treaty – SEANWFZ Treaty) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটি ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মার্চ কার্যকর হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে আসিয়ানের সদস্যগুলি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অঞ্চলটিকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চলে পরিণত করার অঙ্গীকার করে। এই চুক্তিটি ব্যাংকক চুক্তি নামেও পরিচিত।

আসিয়ানের এই উদ্যোগের ফলে আঞ্চলিক সংঘাত দূরীকরণ এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘাত রোধ করা সম্ভব হয়েছে। যেমন-কম্বোডিয়ার গৃহযুদ্ধ, পূর্ব তিমুর (East Timor) সংকট প্রশমনে আসিয়ানের উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।

আর্থিক অগ্রগতি সুনিশ্চিতকরণ:

বিগত দশকগুলিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ করা যায়। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে আসিয়ান রাষ্ট্রগুলি Preferential Trade Agreement – (PTA) বা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। যার কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা এবং বাণিজ্যে শুল্কগত বাধা হ্রাস করা।

এরপর ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল বা ASEAN Free Trade Area (AFTA) গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। AFTA-এর লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলির প্রতিযোগিতার সামর্থ্য যাতে যৌথভাবে বৃদ্ধি করা যায় তার উদ্যোগ নেওয়া। এর পাশাপাশি, বাণিজ্য শুল্ক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে এই অঞ্চলের বাণিজ্যের বিকাশ ঘটানো। আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলকে কার্যকর করার জন্য সাধারণ কার্যকরী অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক (Common Effective Preferential Tariff – CEPT) স্বাক্ষরিত হয়। যার মাধ্যমে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির উৎপাদিত পণ্যগুলিকে এর আওতায় আনা হয়।

২০১৫ সালের মধ্যে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আমদানি শুল্ক বিলোপের অঙ্গীকার করা হয় যাতে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে একটি আসিয়ান অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ASEAN Economic Region গড়ে তোলা যায়।

এ ছাড়া ২০২০ সালে আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশ-সহ আরও ৬টি দেশ যথা-চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ব্যাপক আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (Regional Comprehensive Economic Partnership-RCEP) স্থাপন করে বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছে। তবে ভারত এখনও RCEP-তে যোগদান করেনি।

সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা:

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় আসিয়ান সাংস্কৃতিক তহবিল স্থাপনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হল আসিয়ান সদস্যগুলির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা এবং আসিয়ানের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান বৃদ্ধি করা, সর্বোপরি আসিয়ান সাংস্কৃতিক সহযোগিতা কর্মসূচির অর্থায়নের ব্যবস্থা করা।

আসিয়ান সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কমিউনিটি গড়ে তুলেছিল তা সংস্কৃতি, শিক্ষা, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, তথ্য আদানপ্রদান, গ্রামীন উন্নয়ন, বিজ্ঞানপ্রযুক্তি, সামাজিক কল্যাণ, নারী ও যুব উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তুলেছে।

বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্ব:

বিভিন্ন শীর্ষ সম্মেলনে এবং ফোরামের মাধ্যমে আসিয়ান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, জাপান-এর মতো প্রধান আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির সঙ্গে তার বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এর ফলে আসিয়ানের ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য অনেক বেড়ে গেছে।

এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে আসিয়ান প্লাস থ্রি (ASEAN Plus Three-APT)-এর মাধ্যমে আসিয়ানের ১০টি সদস্য গণপ্রজাতন্ত্রী চিন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করে।

এ ছাড়া ২০০৭ সালে আসিয়ান প্লাস সিক্স (ASEAN Plus Six) গঠিত হয়। এতে আসিয়ানের ১০টি সদস্যের সঙ্গে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৬টি রাষ্ট্র যথা-চিন, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ড অন্তর্ভুক্ত। এই বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বের মূল লক্ষ্যই হল অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

আঞ্চলিক ফোরাম স্থাপন:

১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও প্রতিরোধমূলক কূটনীতি প্রচারের উদ্দেশ্যে আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম বা Asean Regional Forum (ARF) স্থাপন করা হয়। এই ফোরামের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়। এই ফোরাম দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক সংঘাত প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।

পরিবেশ নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণ:

আসিয়ান অঞ্চলটি জীববৈচিত্র্যে পূর্ণ। জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে আসিয়ান রাষ্ট্রগুলি নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তুলেছে। আসিয়ানের সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাউন্সিল সুস্থায়ী উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগগুলি হল আসিয়ান হেরিটেজ পার্ক প্রোগ্রাম, আসিয়ান ইকো-স্কুল এবং যুব ইকো-চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড কর্মসূচি গ্রহণ ইত্যাদি। এ ছাড়া আসিয়ান যাতে পরিবেশগত বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে তার জন্য বিভিন্ন রিপোর্ট তৈরি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা:

২০০৪ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ‘সুনামি’-র প্রভাবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এমতাবস্থায় ২০০৫ সালে জাকার্তায় আয়োজিত সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া যাবে এমন উন্নত, উপযোগী প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য ও ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় সমন্বয়গোষ্ঠী (Inter-governmental Coordination Group) গঠন করা হয়।

আসিয়ান ভিশন, ২০২০:

আসিয়ান সংগঠনটির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলি একটি সম্মেলন আয়োজন করে যেখানে ASEAN Vision 2020 গ্রহণ করা হয়। এটি ১৯৯৭খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ভিশনে মোট ১৪টি উদ্দেশ্য গৃহীত হয়। যার মধ্যে কয়েকটি হল- দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ‘আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল’ গড়ে তোলা ও তাকে বাস্তবায়ন করা, অর্থনৈতিক একীকরণ ও সহযোগিতার সম্প্রসারণ এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করা, আধুনিক এবং প্রতিযোগিতামূলক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ গ্রহণ করা, তথ্য সম্প্রসারণের জন্য একটি আঞ্চলিক তথ্যপ্রযুক্তি নেটওয়ার্ক ও উৎকর্ষকেন্দ্র স্থাপন-সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে অসম অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য এবং আর্থসামাজিক বৈষম্যের সমস্যা সমাধান করা ইত্যাদি।

দক্ষিণ চিন সাগর ঘোষণা:

ফিলিপাইনস্-এর ম্যানিলায় ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুলাই দক্ষিণ চিন সাগর সম্পর্কিত আসিয়ান ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এই ঘোষণাপত্রে দক্ষিণ চিন সাগরের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন এবং তা নিয়ে চিন ও আসিয়ানের সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার উপর জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়াও সামুদ্রিক নিরাপত্তা, দূষণ, জলদস্যু আক্রমণ হ্রাস ও অবৈধ মাদক পাচারের মতো বিষয়গুলিকে নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

আসিয়ান-এর ব্যর্থতা

আসিয়ানের বিবিধ সাফল্য থাকলেও নানা ব্যর্থতাও রয়েছে। যথা-

মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থতা:

আসিয়ানভুক্ত দেশগুলি একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার নীতি গ্রহণ করেছে। এই নীতির সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রগুলি যথেচ্ছভাবে আইনের অনুশাসন, মানবাধিকার ইত্যাদি লঙ্ঘন করে থাকে। যেমন-মায়ানমারে রোহিঙ্গা জনজাতির উপর মায়ানমার সরকারের অকথ্য অত্যাচার তাদের মানবাধিকারকে লঙ্ঘন করেছিল। কিন্তু এই নীতির কারণে আসিয়ান কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি বরং এসব ক্ষেত্রে আসিয়ান নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।

সদস্যদের পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি :

আসিয়ান ভুক্ত দেশগুলির নিজেদের মধ্যেও পারস্পরিক সমস্যা ও ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। জলসীমা ও স্থলসীমান্তকে কেন্দ্র করে সদস্যরাষ্ট্রগুলির বৈরিতাও আসিয়ানের অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া ফিলিপাইনসে উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির কার্যকলাপও আসিয়ানের উদ্বেগের কারণ। শুধু তাই নয়, উদ্বাস্তু সমস্যা হল সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিরোধের অপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আর্থিক বৈষম্য:

আসিয়ান তার সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে আর্থিক বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে তেমন কোনো সফলতা অর্জন করতে পারেনি। যার ফলে সিঙ্গাপুর ও মালয়শিয়ার মতো আসিয়ানের ধনী সদস্যরাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলি যেমন-মায়ানমার, লাওস, ভিয়েতনামের সঙ্গে একইরকম সুযোগসুবিধা লাভ করে নিজেদের আরও উন্নত করে অন্যদের তুলনায় বহুগুণ এগিয়ে গেছে। এজন্য আসিয়ানের দেশগুলির মধ্যে একটি অসম বিকাশ লক্ষ করা যায়।

সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব:

যেহেতু আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনই এর সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ এবং সকল সদস্যরাষ্ট্রের সম্মতিতেই আসিয়ানের সকল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সেজন্য যে-কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সহমত ও সম্মতি পেতে দীর্ঘ সময় লাগে। ফলস্বরূপ দক্ষিণ চিন সাগরকে কেন্দ্র করে চিনের সঙ্গে আসিয়ান রাষ্ট্রগুলির বিরোধ বা অন্যান্য আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হয় না।

নিরপেক্ষতার অভাব:

আসিয়ানের অন্যতম ব্যর্থতা হল এই অঞ্চলের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মতো বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির প্রভাব দূরীকরণে অসফলতা। আসিয়ানের জন্মলগ্ন থেকেই এখানে মার্কিন প্রভাব ছিল। বর্তমানেও আসিয়ানের কার্যপরিচালনায় মার্কিনি প্রভাব বিদ্যমান। ফলস্বরূপ আসিয়ানের কার্যপরিচালনায় নিরপেক্ষতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। আবার এই অঞ্চলে চিনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাও আসিয়ানের সামনে একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই এই অঞ্চলের উপর চিনা নজরদারি বিদ্যমান। সিঙ্গাপুর, মালয়শিয়া ও মায়ানমারের অর্থনীতি চিনা বংশোদ্ভূতদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

আর্থিক মন্দা দূরীকরণে ব্যর্থতা:

১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট এই সংগঠনের কার্যকারিতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছিল। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে থাইল্যান্ডে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয় ফলে থাই মুদ্রা ভাট-এর মান কমে যায় যা থাইল্যান্ডে চরম আর্থিক সংকট তৈরি করে। এই সংকট মোকাবিলায় আসিয়ান কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে অঞ্চলটির আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে বেশ অনেকটা সময় লেগেছিল।

উপসংহার:

সমালোচনা সত্ত্বেও একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, সামগ্রিকভাবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক শান্তি, সহযোগিতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ব্যাপারে আসিয়ান উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং এই অঞ্চলের আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে চলেছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ASEAN একাধিক সংস্থা গড়ে তুলেছে। যেমন-আসিয়ান ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক, আসিয়ান টুরিজম ইনফরমেশন সেন্টার, এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং সেন্টার ছাড়াও আসিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, আসিয়ান বিজনেস ফোরাম ইত্যাদি। ASEAN-এর সাফল্যে আগ্রহী হয়ে দশটি রাষ্ট্র তার সহযোগী হিসেবে থাকতে উৎসাহী, যথা- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ছাড়া বর্ধিত আকারে একটি ASEAN Regional Forum গড়ে তোলা হয়েছে আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করা এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পরিক বিশ্বাস গড়ে তোলার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। এ ছাড়া এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ASEAN-এর নেতৃত্বে East Asia Summit নামে নতুন মঞ্চ গড়ে উঠেছে। চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াও এই মঞ্চে সামিল হয়েছে।

আরো পড়ুন : একাদশ শ্রেণি দ্বিতীয় সেমিস্টার বাংলা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment