নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্ব প্রশ্ন ও উত্তর

নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্ব প্রশ্ন ও উত্তর

নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্ব প্রশ্ন ও উত্তর
নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্ব প্রশ্ন ও উত্তর

১। রাজ্য সরকার কার নির্দেশে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে? নির্বাচন কমিশনের পরামর্শদান সম্পর্কিত কাজটি লেখ।

রাজ্য সরকার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে।

পরামর্শদান সংক্রান্ত কাজ: পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের এবং রাজ্য আইনসভার কোনো সদস্যের অযোগ্যতার ব্যাপারে প্রশ্ন উঠলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণ করার আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালকে পরামর্শ করতে হয়। পার্লামেন্টের সদস্যদের অযোগ্যতার প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ মেনেই রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অন্যদিকে রাজ্য আইনসভার কোনো সদস্যের অযোগ্যতা সম্পর্কে রাজ্যপাল নির্বাচন ি কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন। নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ সংক্রান্ত কার্য হিসেবে পরিচিত।

২। নির্বাচন কশিনারদের কার্যকালের মেয়াদ কত?

কার্যকাল: মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের চাকুরির শর্তাদি ও কার্যকালের মেয়াদ পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা নির্ধারিত হয়। বর্তমানে তাদের কার্যকালের মেয়াদ ৬ বছর অথবা ৬৫ বছর পর্যন্ত। অর্থাৎ কার্যকাল ও বয়সের মধ্যে যেটি পূর্বে আসবে সেটি গৃহীত হবে। নির্বাচন কমিশনারগণকে তাঁদের কার্যকাল সমাপ্তির পূর্বেই রাষ্ট্রপতি পদচ্যুত করতে পারেন। তবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণের ব্যাপারে বিশেষ পদ্ধতি (ইমপিচমেন্ট) অবলম্বন করতে হয়। অন্যান্য কমিশনার ও আঞ্চলিক কমিশনারদের পদচ্যুতির ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হয়।

৩। আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কারা নিযুক্ত হতে পারেন?

যোগ্যতা: যে-কোনো সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে যাতে অনুষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যাবলিগুলি যাতে যথাযথভাবে পরিচালনা করা যায় সেজন্য রাষ্ট্রপতি আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেন। এক্ষেত্রে তাকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হয়। হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অথবা কোনো রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব এই পদ নিযুক্ত হওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হন।

৪। কত খ্রিস্টাব্দে এবং কার সময় নির্বাচন কমিশন বহু সদস্যবিশিষ্ট সংস্থায় পরিণত হয়?

দশম নির্বাচন কমিশনার টি এন সেশন এর সময় নির্বাচন কমিশন বহু সদস্যবিশিষ্ট সংস্থায় পরিণত হয়। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে ১ অক্টোবর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মা কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করে, একক সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনকে বহু সদস্যবিশিষ্ট সংস্থায় পরিণত করেন।

৫। ভারতে কত খ্রিস্টাব্দে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়? ভারতে শেষ কবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে? প্রথম কোন নির্বাচন কমিশনার সচিত্র পরিচয়পত্র চালু করেন? 

স্বাধীন ভারতে ১৯৫১-১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভারতে ২০২৪ সালে শেষ তথা অষ্টাদশ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ভারতের দশম নির্বাচন কমিশনার টি এন সেশন প্রথম সচিত্র পরিচয়পত্র চালু করেন।

৬। নির্বাচনি স্থগিতাদেশ বলতে কী বোঝায়?

নির্বাচনি স্থগিতাদেশ: নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন যে-কোনো নির্বাচনি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত রাখতে পারে বা বাতিল বলে ঘোষণা করতে পারে। আবার পুননির্বাচনের ব্যবস্থাও করতে পারে। এ ছাড়াও কমিশন কোনো নির্দিষ্ট নির্বাচনি কেন্দ্রের ভোট গণনা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে স্থগিত রাখতে পারে, প্রয়োজন মতো ফল প্রকাশও স্থগিত রাখতে পারে। নির্বাচন কমিশনের এরূপ আদেশকেই নির্বাচনি স্থগিতাদেশ বলা হয়।

৭। নির্বাচন কমিশন দলের প্রতীক প্রদানের ব্যাপারে কী ভূমিকা নেয়?

প্রতীক প্রদান: নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচনি প্রতীক প্রদান করা ও দলগুলিকে নথিভুক্তি করা। বহু সময় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ভাঙন লক্ষ করা যায়, এমতাবস্থায় দলীয় প্রতীক নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়।

৮। নির্বাচন প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণের শর্ত কী?

১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে নির্বাচন প্রার্থীদের যোগ্যতার শর্তাবলি আলোচনা করা হয়েছে। শর্তগুলি হল-

শর্ত:

  • কোনো প্রার্থী আদালতে দুর্নীতিমূলক আচরণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
  • কোনো নির্বাচন প্রার্থী সরকারি লাভজনক পদে যুক্ত থাকলে অর্থাৎ কোনো সরকারি সংস্থার পরিচালক বা নির্দেশক হলে ভোটের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

৯। বর্তমানে প্রতিটি রাজ্যে কজন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক থাকেন? রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাজ কী? নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান দায়িত্ব কার উপর ন্যস্ত থাকে?

নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য বর্তমানে প্রতিটি রাজ্যে একজন করে মুখ্য নির্বাচক আধিকারিক (Chief Electroral Officer) থাকেন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাজ হল- নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে রাজ্যের নির্বাচন ব্যবস্থার তদারকি ও পরিকল্পনা করা। এই আধিকারিকরা মূলত সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ণ সময়ের জন্য নিযুক্ত হন।

নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান দায়িত্ব প্রিসাইডিং অফিসারের (Presiding Officer) উপর ন্যস্ত থাকে।

১০। সচিত্র পরিচয় প্রত্র কী? ভোটদাতাদের ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করতে গেলে নির্বাচন কমিশনের কাছে তাকে কী কী প্রমাণপত্র পেশ করতে হয়?

সচিত্র পরিচয় পত্র: নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ভোটদাতাদের পরিচয়পত্র প্রদান করা এবং নির্বাচনক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের মাধ্যমে তা বণ্টন করা, এক্ষেত্রে কমিশন ভোটারদের একটি সচিত্র পরিচয়পত্র প্রদান করে। যার মধ্যে ভোটারদের ছবি-সহ তার ব্যক্তিগত তথ্য নথিভুক্ত থাকে। এর মূল উদ্দেশ্য হল ভুয়ো বা জাল ভোট প্রতিরোধ করা।

প্রমানপত্র: ভোটদাতাদের ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করতে হলে তাকে নির্বাচন কমিশনের কাছে নাগরিকতার পরিচয়পত্র ও বয়সের প্রমানপত্র পেশ করতে হয়।

১১। ‘মনোনয়ন পত্র’ কী? প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র পরীক্ষা করেন কে?

মনোনয়ন পত্র: নির্বাচন প্রার্থী হতে ইচ্ছুক বৈধ ভোটার তার পরিচয়-সহ যে ইচ্ছাপত্র নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়, তাকে মনোনয়ন পত্র বলে।

প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র পরীক্ষা করার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন করে রিটার্নিং অফিসারে নিযুক্ত করা হয়।

১২। ‘কোটা’ পদ্ধতি কী?

কোটা পদ্ধতি: দুটি পদ্ধতিতে ‘কোটা’ নির্ধারণ করা যায়।

প্রথম পদ্ধতি অনুসারে নির্বাচন কেন্দ্রের মোট বৈধ ভোট সংখ্যাকে ঐ কেন্দ্রের আসন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল ‘কোটা’ হিসাবে গণ্য হয়।

১৩। আদর্শ আচরণবিধি কী?

আদর্শ আচরণবিধি: নির্বাচনের সময় বুথ দখল, হিংসামূলক ঘটনা ও জাল ভোটদান-সহ যে-কোনো অপরাধমূলক ঘটনাবলি প্রতিরোধ নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের পূর্বে যে-সমস্ত আচরণবিধি প্রকাশ করে, তাকে মডেল আচরণবিধি বলে।

১৪। EVM কী? ব্রেইল EVM কী?

EVM: EVM হল Electronic Voting machine বা বৈদ্যুতিন ভোট যন্ত্র। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে, পরীক্ষামূলকভাবে কেরালার নির্বাচনে এটি ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীকালে ২০০৪ সালে চতুর্দশ লোকসভা নির্বাচনে সার্বিকভাবে বৈদ্যুতিন ভোট যন্ত্র ব্যবহার শুরু হয়।

ব্রেইল EVM: দৃষ্টিহীন ভোটারদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে ব্রেইল EVM প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি ব্রেইল সংখ্যায় সজ্জিত একটি মেশিন। দৃষ্টিহীন ভোটাররা যাতে স্বাধীন এবং গোপনীয়ভাবে ভোট প্রদান করতে পারে তার জন্যই এইরূপ ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।

১৫। EPIC কী ?

EPIC: EPIC এর পুরো কথা হল ‘Electors Photo Identity Card’I এটি হল ভারত সরকার প্রদত্ত একটি পরিচয়পত্র। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের নাগরিকদের জন্য অর্থাৎ যারা ভোটদানের যোগ্য তাদের সকলের জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক এটি প্রদান করা হয়। EPIC কার্ডে ব্যক্তির ছবি, স্বাক্ষর এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত বিবরণ যেমন- নাম, জন্ম তারিখ এবং ঠিকানা উল্লেখ করা থাকে।

১৬। ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেল বা VVPAT কী?

VVPAT: নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য EVM-এর পাশাপাশি VVPAT মেশিনটি ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রটি প্রার্থীর নাম এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি প্রতীক-সহ একটি কাগজ বা স্লিপ প্রস্তুত করে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি প্রতীয়মান হয়। এর মাধ্যমে ভোটাররা তাদের ভোট যাচাই করে নিতে পারে।

১৭। নির্বাচনি আচরণবিধি বা Code of Conduct কী?

নির্বাচনি আচরণবিধি: সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার স্বার্থে নির্বাচন কমিশন প্রতিটি রাজনৈতিক দল, নির্বাচন প্রার্থী, সরকার ও সরকারি কর্মচারী এবং ভোটদাতাদের জন্য বিবিধ আচরণবিধি বা নিয়মাবলি স্থির করে দেয়, এই প্রয়োজনীয় নিয়মাবলিকেই আচরণবিধি বা Code of Conduct বলা হয়। এই নিয়মাবলি যাতে মান্য হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। নির্বাচনি আচরণবিধি অমান্য করা হলে কমিশন রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

১৮। ভারতের নির্বাচন কমিশনের দুটি ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা লেখো।

ভারতে নির্বাচন কমিশনের দুটি ত্রুটি হল-

নির্বাচনি ব্যয় সংকোচ করতে ব্যর্থ: নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কমিশন ব্যয়ের সর্বোচ্চসীমা ধার্য করে দেওয়ার পরেও রাজনৈতিক দলগুলি নির্দিষ্ট পরিমাণ অপেক্ষা অনেক বেশি ব্যয় করে এবং খরচের হিসাব পেশ করার সময় নানান কারচুপি করে। কমিশন এই বিষয়ে অবগত হলেও উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে।

ভোটার তালিকা প্রণয়নের ত্রুটি: ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও সংশোধনের ক্ষেত্রে কমিশনের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। ভোটের তালিকা প্রকাশের পর তালিকায় নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি নজরে আসে। মৃত ব্যক্তির নাম তালিকায় থেকে যায়, বহু নতুন ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত হয় না, জীবিত ব্যক্তির নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়, তালিকায় একই ব্যক্তির একাধিকবার নাম নথিভুক্ত থাকে ইত্যাদি।

Read More – As You Like It MCQ

Leave a Comment