ধারণার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো | শিশুর ধারণা গঠনের গুরুত্ব লেখো

ধারণার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো | শিশুর ধারণা গঠনের গুরুত্ব লেখো

ধারণার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো | শিশুর ধারণা গঠনের গুরুত্ব লেখো
ধারণার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো | শিশুর ধারণা গঠনের গুরুত্ব লেখো

ধারণার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে হলে তার বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

প্রত্যক্ষলব্ধ অভিজ্ঞতা: ধারণা গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে ধারণা প্রত্যক্ষলব্ধ অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। যে শিশুর প্রত্যক্ষলব্ধ অভিজ্ঞতা যত বেশি, তার ধারণা গঠনেরও ক্ষমতা তত বেশি।

বিমূর্ত অভিজ্ঞতা: শিশুর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিমূর্ত অভিজ্ঞতা জাগতে থাকে এবং এগুলির উপর ভিত্তি করে ধারণা গঠন করে। যেমন-সততা, দায়বদ্ধতা, সহানুভূতি, দলবদ্ধতা, গণতন্ত্র ইত্যাদি হল বিমূর্ত ধারণা। এই ধরনের বিমূর্ত ধারণাগুলি চিন্তনক্ষমতা, | যুক্তিকরণ ক্ষমতা, বিচারকরণ ক্ষমতা ইত্যাদি বিকাশের উপর নির্ভর করে।

সংলক্ষণ: যে-কোনো ধারণা তৈরি হয় ব্যক্তি বা বস্তু বা ঘটনা ইত্যাদির সংলক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে। যেমন ‘কাক’ বলতে যে যে সংলক্ষণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেগুলি হল-রং, পালক, ঠোঁট, পা ইত্যাদি। আবার একটি পরিবার বলতে পরিবারের কর্তা, সদস্যসংখ্যা, একক বা যৌথ পরিবার, তাদের বাসস্থান ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য বা সংলক্ষণগুলি গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যক্তিগত বৈষম্য: একই নামাঙ্কিত ধারণা সামাজিক পরিবেশের প্রভাবে ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য বহন করতে পারে। যেমন-কোনো একজন ব্যক্তি কারও চোখে ভালো আবার কারও চোখে মন্দ, বা কারও চোখে মাঝামাঝি প্রকৃতির, কারও চোখে রাগি, কারও কাছে শান্ত প্রকৃতির মানুষ ইত্যাদি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের হতে পারেন।

বাচনিক বিকাশ: ভাষা শিশু তথা ব্যক্তিকে চিন্তার উপাদান সরবরাহ করে এবং চিন্তন প্রক্রিয়ার ফল হিসেবে ধারণা গঠিত হয়। যেমন- একজন মা তার শিশুকে একটি পাখি দেখাতে বলল শিশুটি একটি চড়ুই পাখি দেখালো। বোঝা গেল শিশুটির পাখি সম্বন্ধে ধারণা স্পষ্ট হয়েছে। আবার বাবা তার দুবছরের মেয়েকে কুকুর দেখিয়ে জিগ্যেস করল এটি কী, সে সঠিক উত্তর দিতে পারল না অন্য কোনো প্রাণীর নাম বলল অর্থাৎ তার কুকুর সম্বন্ধে ধারণা সঠিক হয়নি বলে বাচনিক বিকাশে সমস্যা হচ্ছে। শিশুর বাচনিক বিকাশ বহুমুখী অভিজ্ঞতা অর্জনেও সাহায্য করে। এর ফলে ধারণাগত অভিজ্ঞতাগুলি বিস্তৃত হয়।

অভিজ্ঞতা সঞ্চালন: ধারণা একটি সাধারণধর্মী জ্ঞান। এই জ্ঞান এক পরিস্থিতি থেকে আর এক পরিস্থিতিতে সহজেই সঞ্চালিত হয়। অভিজ্ঞতা সঞ্চালনের ফলে বিভিন্ন বিষয় বোঝা অনেক সহজতর হয়। যেমন গণিতের নিয়মাবলীর সঞ্চালন পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

শিখনযোগ্য: শিখনযোগ্য বিষয় অর্থাৎ যেগুলির শিখন কম কষ্টসাধ্য সেগুলি সম্বন্ধে ধারণা সহজে হয়।

প্রয়োজনীয়তা: আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন জিনিস সম্বন্ধে ধারণা গ্রহণ করি। যেমন শিক্ষাবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাশিবিজ্ঞানের ব্যবহার রয়েছে, তাই শিক্ষাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের রাশিবিজ্ঞানের ধারণা গ্রহণ করতে হয়।

যথার্থতা: যে উদ্দেশ্যে কোনো বিষয়ের ধারণা প্রয়োজন, তা যদি যথার্থ হয় সেই বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যিক।

নির্ভরযোগ্যতা: নির্ভরযোগ্যতা ধারণার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

নৈর্ব্যক্তিকতা: যে ধারণার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য থাকবে না, তাই হল নৈর্ব্যক্তিক ধারণা। তাই নৈর্ব্যক্তিতা ধারণার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

ক্ষমতা: যে ধারণার অন্যান্য বিভিন্ন ধারণা গঠনে সাহায্য করে সেই ধারণা আমরা গ্রহণ করি। তাই প্রতিটি ধারণার কিছু না, কিছু ক্ষমতা রয়েছে। যেমন-গাণিতিক ধারণা পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ধরনের ধারণা গঠনের সহায়ক।

মৌলিক ধারণা: প্রতিটি বিষয়ের কিছু মৌলিক ধারণা ওই বিষয় বা অন্য কোনো বিষয়ের ধারণা আয়ত্ত করতে সাহায্য করে। যেমন-ভাষা সংক্রান্ত মৌলিক ধারণা যে-কোনো বিষয়ের ধারণার জন্য প্রয়োজন।

শিখন প্রক্রিয়া: বুনারের মতে শিখন প্রক্রিয়ায় ধারণা কাঠামোর গুরুত্ব রয়েছে। কোনো বিষয়ে ধারণা যত স্বচ্ছ হবে, শিখন তত সহজতর হবে।

বস্তুভিত্তিক জ্ঞান: মূর্ত বস্তুভিত্তিক জ্ঞান ধারণা গঠনের সহায়ক। আবার বিমূর্ত বিষয়ের ধারণা গঠনে চিন্তন, বিচারকরণ, মূল্যায়ন, যুক্তি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মানসিক প্রক্রিয়াগুলি গুরুত্বপূর্ণ।

ধারণা গঠনের নীতি: ধারণা গঠনের নীতি সম্পর্কে মনোবিদ রিপল (Ripple) এবং ক্লজমেইয়ার (Klausmeier) তাঁদের লেখা বই ‘Learning and Abilities’-এ কিছু নীতির উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হল-

সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের নীতি: সমজাতীয় বস্তুর মধ্যে যেসকল সাধারণ সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য রয়েছে সেগুলি লক্ষ করা হয় এবং সাদৃশ্যগুলি আলাদা করে ওই বস্তুটি সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠে। যেমন-দুটি ভিন্ন পাখি দেখে তাদের সাদৃশ্য বলতে পালক, উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি, আবার তাঁদের রঙ, চোখের প্রকৃতি ইত্যাদি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি দেখে এদের মধ্যে বৈসাদৃশ্যের ধারণা করতে পারি।

বিশেষ গুণাবলি সম্পর্কিত নীতি: কোনো বস্তু সম্পর্কে ধারণা গঠনের জন্য তার বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলির দিকে লক্ষ রাখা হয়। যেমন-কুকুর ও বিড়ালের ডাক শুনে পশুটির দিকে না দেখেও কোন্ পশু ডাক দিচ্ছে তা আমরা বলে দিতে পারি।

পর্যায়ক্রমের নীতি: এক্ষেত্রে ধারণা গঠনের জন্য বস্তুর বৈশিষ্ট্যগুলিকে ক্রমপর্যায়ে সাজিয়ে বিশ্লেষণ করতে হয়। যেমন- দুটি বিভিন্ন বিষয়ের বই-এর কেবলমাত্র সূচিপত্রের ক্রমপর্যায় দেখে বই দুটির ধারণা আমরা পেতে পারি।

বিশ্লেষণের নীতি: ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য নীতি হল বিশ্লেষণের নীতি। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষণের সময় বস্তুর বৈশিষ্ট্যকে সঠিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ধারণা গঠন করা হয়। যেমন- একজন ছেলে ও মেয়ের দেহের গঠন, চেহারা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলি ছেলে ও মেয়ে সম্পর্কে ধারণা দিতে সাহায্য করে।

ব্যবহারের নীতি: যে-কোনো ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে পূর্বের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটিই হল ধারণা গঠনের ব্যবহারের নীতি। যেমন- দুজন ব্যক্তির আচার-আচরণ, ব্যবহার কয়েকদিন ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে ব্যক্তি দুজনের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা করা যায়।

মূল্যায়নের নীতি: ধারণা গঠনের আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হল মূল্যায়ন। বস্তু, ঘটনা বা পরিস্থিতি সম্পর্কিত ধারণার মূল্যায়নে ধারণা আরও শক্তিশালী ও স্থায়ী হয়। যেমন- দুজন শিক্ষার্থীর বিভিন্ন বিষয়ের পারদর্শিতাভিত্তিক নম্বরগুলি মূল্যায়ন করে তাদের সম্বন্ধে মোটামুটি ধারণা করা যায়।

উপযুক্ত পরিভাষার নীতি: বস্তু সম্পর্কে আমাদের মনে তখনই ধারণা গড়ে ওঠে যখন সেই বস্তুটির নামের উপযুক্ত পরিভাষা সম্পর্কে আমরা জ্ঞান অর্জন করতে পারি। যেমন- কোনো বিষয়ের পরিভাষা বলতে সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা, প্রমাণ ইত্যাদি পরিভাষাগুলিকে বিশ্লেষণ করে সেই বিষয়ের ওই একক সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।

সামান্যীকরণের নীতি: সামান্যীকরণ ধারণা গঠনে বিশেষভাবে সাহায্য করে। কারণ এটি হল ধারণার বিস্তৃতিগত প্রক্রিয়া। যেমন-কোনো বিষয়ের কোনো এককের বিভিন্ন সূত্র বা নীতির বিবৃতি ধারণা গঠনে সাহায্য করে।

আত্মঅন্বেষণের নীতি: আত্মঅন্বেষণ হল ধারণা গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। আত্মঅন্বেষণ ঠিকমতো করা সম্ভব হলে ধারণা গঠনের কাজটিও অনেক সহজ হবে। যেমন-কোনো বিষয় সম্বন্ধে যে এককগুলি রয়েছে, সেই এককগুলির যথাযথ বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ধারণা গঠনে সহায়ক, যা আত্মঅন্বেষণে কার্যকরী।

শিশুর ধারণা গঠনের গুরুত্ব

শিক্ষাবিদ ও মনোবিদগণ এই বিষয়ে একমত যে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা গঠন করতে পারলে শিক্ষার কাজ অনেক সহজ হয়। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে ধারণা গঠনের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন দিক দিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। বিভিন্ন দিকগুলি হল যথাক্রমে-

শিখন পরিবেশের জটিলতা হ্রাস: ধারণাগত যে-কোনো অভিজ্ঞতা এক একটি সামান্যীকৃত একক অভিজ্ঞতা, যার মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বা সংলক্ষণ অন্তর্ভুক্ত। তাই এক শ্রেণির বিষয় সম্পর্কে একবার ধারণা গঠিত হলে, তাদের পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্যগুলি পরবর্তীকালে বিচার করার প্রয়োজন হয় না, কারণ প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে অভিজ্ঞতা অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন। যেমন-গোরু একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী, এখন যদি স্তন্যপায়ী জন্তুর সব সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি গোরুর উপর আরোপ করা হয়, তবে ধারণাগত অভিজ্ঞতা শিখন ও শিক্ষণ উভয় ধরনের কাজের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে।

অভিজ্ঞতার বিস্তৃতি: ধারণা শিখন শিক্ষার্থীকে পরোক্ষভাবে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করে। জীবনের শুরুতে তাদের অভিজ্ঞতাগুলি প্রত্যক্ষণমূলক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গড়ে ওঠে কিন্তু শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবন পরিবেশের পরিসর যত বাড়তে থাকে, ততই নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং সেই অভিজ্ঞতাগুলিকে পৃথকভাবে বিচার না করে ইতিপূর্বে গঠিত সাধারণ অভিজ্ঞতার অন্তর্ভুক্ত করে। এইভাবে ধারণাগত অভিজ্ঞতার বিস্তৃতি ঘটে।

অপ্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার পরিহার: ধারণাগত অভিজ্ঞতা বিচ্ছিন্ন কতকগুলি অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত রূপ। যেগুলিকে সংরক্ষণ করা সহজ হয়। প্রতিমুহূর্তে আমরা যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করছি, সবই যদি পৃথকভাবে সংরক্ষণ করা হত তবে জীবন দূর্বিসহ হয়ে যেত। তাই মনোবিদগণ মনে করেন ধারণা গঠনের মাধ্যমে মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হয়। এইভাবে বিদ্যালয়ে পাঠরত শিক্ষার্থীরাও ধারণা গঠনের মাধ্যমে বেশি পরিমাণ বিষয় সংক্রান্ত জ্ঞান সংরক্ষণ করতে পারে। সুতরাং অপ্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার পরিহার ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

সমস্যা সমাধানে সহায়তা: শিক্ষার্থী বা কোনো ব্যক্তির কোনো বিষয়ে যথাযথ ধারণা গঠিত হলে সে অনেক সমস্যা অনায়াসে সমাধান করতে পারে। তাই যথাযথ ধারণা গঠন সমস্যা সমাধানের সহায়ক। যেমন-একজন শিক্ষার্থীর যদি ‘ফিউজ’ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা তৈরি হয়, তবে হঠাৎ বাড়ির বৈদ্যুতিক আলো চলে গেলে সে ফিউজ সংযোগ সঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দ্যাখে। যদি ফিউজে সমস্যা হয় তবে সেই অনুসারে সমস্যা সমাধান করে। অন্য কোনো সমস্যা হলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির সাহায্য নেয়। সুতরাং সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ধারণা গঠন অত্যন্ত প্রয়োজন।

ধারণা সঞ্চালন: যে অভিজ্ঞতা সম্পর্কীয় ধারণা যথাযথভাবে গঠিত হয়, তাকে প্রয়োজন অনুযায়ী সঞ্চালন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী। দৈনন্দিন ও ব্যাবহারিক জীবনে সেই ধারণাকে কাজে লাগানো যায়। যেমন-কোনো ব্যক্তির মধ্যে যদি সঠিক ধারণা জন্মায় যে তেল, মশলা বেশি খেলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, তবে সে যেমন নিজে সচেতন হতে পারে তেমনই অপরকেও সচেতন করতে পারে। তাই ধারণা সঞ্চালন জীবনযাপনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় তথা শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

ভাষার বিকাশ: ধারণা গঠন ভাষার বিকাশে সাহায্য করে। কোনো একটি বিষয় বা ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে ধারণা তৈরির পর তার নামকরণ জানা প্রয়োজন। যেমন-শিশুর বই সম্পর্কে ধারণা তৈরি হলে সে বলতে পারে এই শ্রেণির বস্তুগুলি হল ‘বই’।

তথ্য সংরক্ষণে সহায়তা: কোনো বিষয় বা বস্তু বা ঘটনা সম্পর্কে ধারণা গঠিত হলেই চলবে না, সেই ধারণাগুলির প্রেক্ষিতে ধারণা সম্বলিত বিভিন্ন তথ্যগুলিকে সংরক্ষণ করারও প্রয়োজন হয়। সুতরাং সঠিক ধারণা তথ্য সংরক্ষণের সহায়ক।

পরিশ্রমের লাঘব: শিশু যদি পূর্ব অভিজ্ঞতাগুলিকে হাতিয়ার করে নতুন অভিজ্ঞতার দিকে অগ্রসর হয়, তবে তার ধারণা গঠন সহজ হয়। এক্ষেত্রে ‘ধারণা’ শিশুর শিখনের পরিশ্রমকে অনেক লাঘব করে দেয়।

শিখন সহায়ক কৌশল: শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ইতিপূর্বে যে ধারণাগুলি গঠন করেছে, তার ভিত্তিতে শিক্ষা উপকরণের মাধ্যমে তারা জ্ঞান লাভকরে। উপযুক্ত ধারণা গঠন না হলে এটি সম্ভব নয়।

নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা: ধারণা শিক্ষার্থীর নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করে থাকে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, শিশু জীবনের প্রথম ক্ষেত্রে যেসকল ধারণাগুলি অর্জন করে, তার পরিসর তত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এভাবেই তারা নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকে।

ভবিষৎ-এর জ্ঞানলাভ: ভবিষৎ-এর বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানলাভের ক্ষেত্রে ধারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রেষণার (Motivation) সঞ্চার: শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বিষয়ে যদি সঠিক ধারণা গঠন হয়, তবে সে ওই বিষয় সম্পর্কে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। যেমন-ভূগোল বিষয়ের কোনো একটি অধ্যায় বা topic-এর ক্ষেত্রে কোনো একজন শিক্ষার্থীর যদি সঠিক ধারণা গঠন হয়, তবে সে নিজে থেকেই ওই বিষয়টি সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওই বিষয়ে আরও অনেক তথ্যসংগ্রহ করে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইবে। অর্থাৎ তার মধ্যে প্রেষণার সঞ্চার হবে।

সুতরাং ধারণা শিক্ষার কাজকে সহজ করে। কোনো বিষয় বা বস্তু বা ঘটনা ইত্যাদি সম্পর্কিত ধারণা যেমন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তেমনই একইভাবে শিক্ষকের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই ধারণা গঠন শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Read More – As You Like It MCQ

Leave a Comment