ভাব সম্মিলন কবিতার বিষয়বস্তু

ভাব সম্মিলন কবিতার বিষয়বস্তু

ভাব সম্মিলন কবিতার বিষয়বস্তু
ভাব সম্মিলন কবিতার বিষয়বস্তু

ভূমিকা: বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যে রাধার উন্মেষের একটি ধীর- মন্থর ধারাস্রোত লক্ষিত হয়। বিদ্যাপতির রাধা যেন, ভোরের শতদলের মতো একটু একটু করে বিকশিত হচ্ছেন। যে পর্যায়গুলি ধীরে ধীরে তিনি অতিক্রম করলেন তা হল- পূর্বরাগ, অনুরাগ, অভিসার, আক্ষেপানুরাগ, নিবেদন, মাথুর এবং ভাবসম্মিলন।

• পূর্বরাগ হল, প্রেম-পদ্মের না-ফোটা কুঁড়ির ভোরের আলো দেখার রক্তিম আবেশ। অর্থাৎ, Love at the first sight I

• অনুরাগে সেই প্রেমই নব নব রূপে জেগেছে প্রাণে।

• পরবর্তী পর্যায়ে আমরা দেখতে পাই, শ্রীরাধা কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য উন্মুখ, উন্মত্ত পতঙ্গের মতো তিনি আগুন ছুঁতে চান। রাতের গোপনে অন্ধকারকে সঙ্গী করে কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে তিনি একা বেরিয়ে পড়েন পথে। এ পর্যায়ের নাম অভিসার।

• আক্ষেপানুরাগে শ্রীরাধার অন্তরে কৃষ্ণ অনুরাগ অনন্ত, কিন্তু বাইরে মিলনের আক্ষেপ।

• নিবেদনে কৃষ্ণের কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ।

• কৃষ্ণকে যেতেই হবে। চলেও যান তিনি মথুরায়। আর ফেরেন না, ফিরবেনও না। বিরহী রাধা যেন মণিহারা ফণি। এ হল মাথুর।

• সবশেষে আসে ভাব সম্মিলন। বাস্তব জগতে যখন আর কৃষ্ণের সঙ্গে মিলন সম্ভব নয়, তখন ভাবের জগতে তাঁর অনুসন্ধান ও মিলন। অন্তরেই রয়েছেন কৃষ্ণ, সারা জগতই কৃষ্ণময়। সুতরাং, মিলনে বাঁধা কোথায়?

কবিতার বিষয়বস্তু: আলোচ্য ‘ভাব সম্মিলন’ কবিতায় আমরা শুনতে পাই, রাধা তাঁর সখীদের ডেকে বলছেন যে, তাঁর আনন্দের কোনো সীমা নেই। এতকালের অপেক্ষার পর কৃষ্ণ আজ তাঁর ঘরে এসেছেন। আকাশের চাঁদ তাঁকে এতদিন অনেক দুঃখ দিয়েছে। কারণ, চাঁদকে তিনি ছুঁতে পারেননি। অন্তরের অন্তঃস্থলে কৃষ্ণের চির অধিষ্ঠান প্রত্যক্ষ করে কৃষ্ণের মুখচন্দ্র দর্শনে তাঁর যে সুখ, তা তিনি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেন না।

স্ত্রী অর্থের জন্য স্বামীকে দূর দেশে পাঠাতে বাধ্য হন। রাধা বলছেন, তিনি তার আঁচল ভরে যদি মহামূল্য রত্ন পান, তাহলে তাঁর প্রিয়তম কৃষ্ণকে আর দূর দেশে পাঠাবেন না।

এবার, শ্রীরাধার কাছে কৃষ্ণের অস্তিত্ব কীরূপ, তা অকপটে বলেছেন রাধা। শীতের সময় যেমন আমরা চাদর বা ওড়না জড়াই শীত নিবারণের জন্য, শ্রীকৃষ্ণ তাঁর কাছে সেইরূপ। আবার, গ্রীষ্মের উত্তাপের মধ্যে বয়ে যাওয়া বাতাস যেমন আমাদের অধীর করে তোলে, আমরা তাকে এড়াতে পারি না, কৃষ্ণ শ্রীরাধার কাছে সেইরূপ। বর্ষায় প্রিয় সঙ্গী ছাতা। বৃষ্টির অঝোর ধারাস্রোত থেকে আমাদের রক্ষা করে। কৃষ্ণ শ্রীরাধার কাছে সেইরূপ। অকুল সমুদ্রের কূলে দাঁড়িয়ে আমরা যখন অসহায় অনুভব করি, তখন যে মাঝি আমাদের নৌকায় তুলে নেয়, তার থেকে আপন আর কে হয়? শ্রীকৃষ্ণ রাধার কাছে সেইরূপ।

কবি বিদ্যাপতি তাই ভণিতার মাধ্যমে বলেন, হে নারীশ্রেষ্ঠা, যে ভালো মানুষ হয়, তাকে বেশিদিন দুঃখ সহ্য করতে হয় না।

আরও পড়ুন- ছুটি গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment