ভাব সম্মিলন কবিতার নামকরণের সার্থকতা
ভূমিকা: বিদ্যাপতির কবিতার নাম ‘ভাব সম্মিলন’। বলে রাখা ভালো, ভাব সম্মিলন একটি পর্যায়, রাধাকৃষ্ণের অন্তিম মিলনের পর্যায়, যা ভাবের দ্বারা সংঘটিত হয়, বাস্তবে নয়।
নামকরণ: ‘ভাব সম্মিলন’ কথাটি আমরা ভেঙে পাই- ভাব + সম্মিলন। এখানে সম্ভোগ বাইরের সম্ভোগ নয়, ভাবের সম্মিলন। ভাব সম্মিলনে কোনো বিচ্ছেদের আশঙ্কা নেই, নেই দূরের সর্বনাশা হাতছানি। মথুরা এবং বৃন্দাবন এখানে পৃথক নয়। এই ভাবজগৎ আর বস্তুজগৎ এক নয়। শ্রীরাধা দীর্ঘকাল বিরহবেদনা ভোগ করার পর যেন মানস-বৃন্দাবনে আবার শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পেয়েছেন। তাই তিনি আনন্দে প্রফুল্লিত হয়ে বলছেন, “কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।/ চিরদিনে মাধব মন্দিরের মোর।।” অর্থাৎ, রাধা কল্পনা করছেন যে, কৃষ্ণ তাঁর ঘরে এসেছেন।
শূন্য ঘর পূর্ণ হয়েছে। বিরহকাতর হৃদয়ের চড়ায় লেগেছে ভালোবাসার জোয়ারের ঢেউ। প্রিয়ের মুখদর্শনে তাঁর যাবতীয় সুখ। আঁচল ভরে তিনি যদি ধনরত্ন পেতেন, তাহলে প্রিয়কে হৃদয়ের তানপুরার তার ছিঁড়ে দূর দেশে ছাড়তেন না।
কৃষ্ণ তাঁর কাছে আত্মস্বরূপ। তিনি কখনও শীতের ওড়না, কখনও গ্রীষ্মের বাতাস, কখনো-বা বর্ষার ছাতা, আবার কখনও অকূল সমুদ্রে ভেসে চলার আশ্বাস। রাধার সখীরা বোঝে না এই ভাবের গুরুত্ব, তারা কেবল শোনে। কিন্তু কবি বিদ্যাপতি বুঝেছেন যে, যারা ভালো মানুষ হয়, তাদের দুঃখ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বাস্তবে না হলেও ভাবের মধ্য দিয়ে মিলন ঘটে ‘মনের মানুষের সনে’।
আসলে, বিরহ দিয়ে কাব্য শেষ করা ভারতীয় রীতি ছিল না। ট্র্যাজেডির ধারণা সম্পূর্ণ পাশ্চাত্যাগত। এই জন্যই ‘মাথুর’ পর্যায়ের পর ‘ভাব সম্মিলন’ পর্যায়ের কল্পনা সমীচীন। সেই ভাবের নিরিখে কাব্যবস্তুর বিচারে কবিতাটির নামকরণ সার্থক।
আরও পড়ুন- ছুটি গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর