আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা প্রশ্ন উত্তর Class 11
দিগদর্শন পত্রিকাটি সম্পকে আলোচনা করো।
শ্রীরামপুরের দিনেমার কুঠির তিন মিশনারি উইলিয়াম কেরী, ওয়ার্ড এবং মার্শম্যান একজোট হয়ে শিক্ষাবিস্তারের কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। তাঁরা ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ নামে পরিচিত। তাঁদের প্রচেষ্টায় ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে এপ্রিল মাসে দিগদর্শন নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা গদ্যের বিকাশের পথও উন্মুক্ত হয়ে যায়। এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান। পত্রিকাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল নানা উপদেশ দান। খ্রিস্টধর্ম প্রচার এবং যুবকদের মানসিক উৎকর্ষ বিধান করা ছিল এই পত্রিকা প্রকাশের প্রধান উদ্দেশ্য। এই পত্রিকার আয়ু ছিল ক্ষণস্থায়ী।
কল্লোল পত্রিকা সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।
কল্লোল পত্রিকার পরিকল্পনা করেছিলেন একদল তরুণ যুবক, যারা রবীন্দ্র অনুরাগী হয়েও রবীন্দ্রনাথের পথ থেকে সম্পূর্ণ সরে এসে সামায়িক পত্রের ইতহাসে নতুন চিন্তাধারা ও বাস্তবতার বোধ নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ, ১৩৩০ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ এই পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়। সম্পাদক ছিলেন দীনেশরঞ্জন দাস আর সহসম্পাদক ছিলেন গোকুলচন্দ্র নাগ। পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে। পত্রিকাটি দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়নি কিন্তু বাংলা সাহিত্যজগতে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রাখতে পেরেছিল।
বাংলা সাহিত্যে একই সঙ্গে নবীনতা ও প্রগতির দিশারি ছিল এই পত্রিকা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, ফ্রয়েডীয় তত্ত্ব, এদেশের যুবসমাজের নৈরাশ্য ও হতাশা থেকে এই পত্রিকার জন্ম। বাস্তবিকভাবে এই পত্রিকা বাংলা সাহিত্যে যথার্থ আধুনিকতার সূত্রপাত করেছিল। এই পত্রিকা প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যে যেসব লেখক কল্লোল গোষ্ঠীভুক্ত হয়েছিলেন, তাঁরা হলেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, শৈলজানন্দ, নজরুল ইসলাম, মণীশ ঘটক, জগদীশ গুপ্ত প্রমুখ। কল্লোল মাসিক গল্পসাহিত্য পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও বুদ্ধদেব বসুর ‘বন্দীর বন্দনা’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘বেনামী বন্দর’, নজরুলের ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’, জীবনানন্দ দাশের ‘নীলিমা’ প্রভৃতি বহু কবিতা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। প্রভাবতী দেবী সরস্বতী, সুনীতি দেবী, রাধারাণী দত্ত প্রমুখ মহিলারা এই পত্রিকায় লিখতেন। ‘কাহিনি’ নামে একটি বিভাগে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সাহিতিেডয়া নিয়ে লেখা প্রকাশিত হত।
কল্লোলের প্রচ্ছদে নামের সঙ্গে সংগতি রেখে সমুদ্রের ঢেউয়ের ছবি থাকত। সেই ঢেউ আছড়ে পড়েছিল বুদ্ধিজীবী মহলে।
সবুজপত্র পত্রিকা সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
প্রমথ চৌধুরী ওরফে বীরবল যে পত্রিকার সম্পাদনার মাধ্যমে কীর্তিমান হয়ে ওঠেন, সেই পত্রিকার নাম সবুজপত্র। প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। নন্দলাল বসুর আঁকা ছবি ছিল প্রচ্ছদে। কোনো বিজ্ঞাপন থাকত না এই পত্রিকাটিতে, এমনকি কোনো ছবিও থাকত না।
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের যে স্মরণীয় লেখাগুলি এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, সেগুলি হল- ‘চতুরঙ্গ’, ‘ঘরে-বাইরে’, ‘হালদার গোষ্ঠী’, ‘স্ত্রীর পত্র’, ‘হৈমন্তী’ প্রভৃতি। প্রমথ চৌধুরীর বেশিরভাগ রচনা এই পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন- ‘চার ইয়ারী কথা’, ‘ফরমায়েশি গল্প’ ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথের ‘সবুজের অভিযান’ কবিতাটিও এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের কন্যা মাধুরীলতা দেবীর গল্প ‘সুরো’ এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই পত্রিকার অন্যান্য লেখকরা হলেন- অতুলচন্দ্র গুপ্ত, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, সুরেশ চক্রবর্তী, ইন্দিরা দেবী, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ। শিক্ষিত বাঙালি মনে সবুজপত্র ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। লেখার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করা, মার্জিত চলিত গদ্যকে সিরিয়াস সাহিত্যমাধ্যম হিসেবে প্রকাশ করে সবুজপত্র সাময়িক পত্রের জগতে আলাদা স্থান করে নিতে পেরেছিল।
পরিচয় পত্রিকার ইতিহাস সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
নামের সঙ্গে সংগতি রেখে আধুনিক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিল যে প্রগতিশীল পত্রিকা, তার নাম পরিচয়। পত্রিকাটি কবি ও সাহিত্যিক সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সম্পাদনায় ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে আত্মপ্রকাশ করেছিল। পত্রিকাটির আর্থিক দায়িত্ব বহন করেছিলেন সুধীন্দ্রনাথ দত্তের পিতা হীরেন্দ্রনাথ দত্ত। প্রথম দিকে পত্রিকাটি ছিল ত্রৈমাসিক, বছর পাঁচেক বাদে এই পত্রিকাটি মাসিক পত্রিকারূপে প্রকাশিত হতে থাকে।
মার্কসীয় সাহিত্যের বিকাশের সঙ্গে এই পত্রিকাটি যুক্ত ছিল। সাম্যবাদী সমাজপ্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই পত্রিকাতে। প্রগতিমূলক সমাজ ও সাহিত্যচিন্তার প্রকাশ ঘটেছে এই পত্রিকায়। যৌনচার ও আবেগ সর্বস্বতাকে বহু দূরে সরিয়ে রেখেছিল এই পত্রিকার রচনা। রবীন্দ্রনাথের ‘রাশিয়ার চিঠি’, শরৎচন্দ্রের ‘শেষপ্রশ্ন’, অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘পথে প্রবাসে’, বুদ্ধদেব বসুর ‘বন্দীর বন্দনা’, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ‘বিজ্ঞানের সংকট’, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘কাব্যের মুক্তি’ ইত্যাদি এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। প্রমথ চৌধুরীর ছোটোগল্প ‘নীললোহিতের স্বয়ম্বর’ এই পত্রিকায় প্রকাশিত।
সংবাদ প্রভাকর পত্রিকাটি সম্বন্ধে আলোচনা করো।
যুগসন্ধির কবি নামে খ্যাত ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সম্পাদনায় যে পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করে, তার নাম সংবাদ প্রভাকর। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ২৮ জানুয়ারি সাপ্তাহিক পত্রিকারূপে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে ১৪ জুন বাংলা ভাষার প্রথম দৈনিক পত্রিকারূপে এটি আত্মপ্রকাশ করে সংবাদপত্রের জগতে নতুন ধারার প্রবর্তন করে। সাধক রামপ্রসাদ, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর, হরু ঠাকুর, ভোলা ময়রা, এন্টনি ফিরিঙ্গি প্রমুখ কবিয়ালদের জীবনী রচনা প্রথম এই পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এক স্মরণীয় লেখক গোষ্ঠী তৈরি করতে সমর্থ হয়েছিলেন। আলাদা করে অক্ষয়কুমার দত্ত, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, মনোমোহন বসু, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করা যায়।
এই পত্রিকা ছিল যুগের দর্পণ। দেশ-বিদেশের নানা সংবাদ সংকলন করে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে দেশবাসীকে বৃহত্তর পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়াস করেছিল এই পত্রিকা। সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি সাহিত্য, ধর্ম, সমাজ প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনা এই পত্রিকায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হত।
বঙ্গদর্শন পত্রিকার সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পাদনায় বঙ্গদর্শন পত্রিকা প্রকাশিত হয় ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে। বাংলা সাময়িক পত্রিকার ইতিহাসে বঙ্গদর্শন প্রথম পূর্ণাঙ্গ এবং উচ্চমানের সাহিত্য পত্রিকা। বঙ্গদর্শনকে কেন্দ্র করে
একটি শক্তিশালী লেখক গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন দীনবন্ধু মিত্র, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ বসু, পূর্ণচন্দ্র বসু প্রমুখ। বঙ্কিমচন্দ্রের বহু লেখা যেমন- ‘লোকরহস্য’, ‘বিজ্ঞানরহস্য’, ‘সাম্য’, ‘কমলাকান্তের দপ্তর’, ‘বিষবৃক্ষ’, ‘ইন্দিরা’, ‘চন্দ্রশেখর’ ইত্যাদি এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। বিজ্ঞান, ধর্ম, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে গল্প, উপন্যাস, সাহিত্য সমালোচনা, কৌতুক রচনা ইত্যাদি এই পত্রিকায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। এই পত্রিকা প্রকাশের পর থেকে বাংলা গদ্য ভাষা সহজ-সতেজ এবং প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সমালোচনার ধারায় নতুন দিগন্ত খুলে যায়।
১। প্রথম বাংলা সাময়িক পত্রের নাম কী? সম্পাদক ও প্রকাশকাল লেখো। কোন্ সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল?
প্রথম বাংলা সাময়িক পত্রের নাম হল দিগদর্শন। পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ক্লার্ক জে সি মার্শম্যান। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল। শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানা থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল।
২। দিগদর্শন পত্রিকার বৈশিষ্ট্য বা গুরুত্ব লেখো।
বাংলা গদ্যের প্রস্তুতিপর্বে এই পত্রিকাটি গদ্যসাহিত্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান সম্পর্কিত স্কুল পাঠ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে। তা ছাড়া কৌতূহল উদ্দীপক রচনা প্রকাশ করে যাতে যুবকরা বিপথগামী না হয়ে পড়ে, সেইসব প্রবন্ধ রচনা করে এই পত্রিকাটি সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছিল।
৩। গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের পত্রিকার নাম কী? পত্রিকার প্রকাশকাল লেখো। এই পত্রিকার বৈশিষ্ট্য লেখো।
গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের প্রকাশিত পত্রিকার নাম বাঙাল গেজেটি। এই পত্রিকার প্রকাশকাল ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে। এই পত্রিকায় উনিশ শতকের প্রথমার্ধের সমকালীন নানা ঘটনা স্থান পেয়েছে।
৪। সমাচার দর্পণ পত্রিকার প্রকাশকাল লেখো। এই পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন? কোন্ সংস্থা থেকে এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল?
সমাচার দর্পণ পত্রিকা ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মে প্রতি শনিবার সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হত। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ক্লার্ক জে সি মার্শম্যান। শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানা থেকে এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হত।
৫। সমাচার দর্পণের গুরুত্ব বা বৈশিষ্ট্য লেখো।
বাঙালি সমাজ ও বাংলা ভাষাকে সমাচার দর্পণ বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিল। হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করে খ্রিস্টধর্মের মহিমাকীর্তনের উদ্দেশ্যে এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হলেও বিভিন্ন ধরনের সংবাদ, শিল্প-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন সম্পর্কে প্রবন্ধ-নিবন্ধ এই পত্রিকায় প্রকাশিত হত।
৬। সম্বাদ কৌমুদীর সম্পাদক কে ছিলেন? প্রথম প্রকাশকাল লেখো। এই পত্রিকার বৈশিষ্ট্য লেখো।
সম্বাদ কৌমুদীর সম্পাদক ছিলেন রাজা রামমোহন রায় এবং ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৮২১ খ্রিস্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। ইউরোপীও মিশনারিদের হিন্দুধর্মের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে রামমোহন রায় স্ব-উদ্যোগে প্রকাশ করেন এই পত্রিকাটি। বস্তুতপক্ষে এই সাময়িক পত্রটি হয়ে উঠেছিল উনিশ শতকের প্রথমার্ধের প্রগতিবাদী চিন্তার প্রকাশমঞ্চ।
৭। ব্রাহ্মণ সেবধি পত্রিকাটির সম্পাদক কে ছিলেন? প্রথম প্রকাশকাল লেখো। পত্রিকাটির গুরুত্ব লেখো।
ব্রাহ্মণ সেবধি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে এই পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। ত্রি-তত্ত্ববাদী খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধাচরণ এবং হিন্দুদের বহু দেববাদ, ধর্ম ও দর্শনের নানান বিষয় নিয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ রামমোহন এই পত্রিকায় লিখেছেন। যুক্তিবাদী রামমোহন এই পত্রিকায় সমস্ত রকম অলৌকিকতার বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন।
৮ । সমাচার চন্দ্রিকার সম্পাদকের নাম লেখো। এই পত্রিকার প্রথম প্রকাশকাল লেখো।
সমাচার চন্দ্রিকার সম্পাদক ছিলেন ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পত্রিকার প্রথম প্রকাশকাল হল ১৮২২ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ।
৯। সমাচার চন্দ্রিকার গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য লেখো।
এই পত্রিকায় রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের আচার-আচরণ, কুসংস্কার অনেকটা স্থান জুড়ে বিরাজ করত। রঙ্গ-ব্যঙ্গমূলক রচনাগুলি পাঠক মনকে জয় করেছিল। ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধাচরণ করে যেসব প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলি লিখেছিলেন, তাতে তাঁর রসজ্ঞ জীবনদৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। এ ছাড়া বহু সমাজসমস্যামূলক গদ্য এই পত্রিকায় প্রকাশিত হত। সেই যুগে একমাত্র এই পত্রিকাতেই সরস রচনা পরিবেশিত হত।
১০। সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদক কে ছিলেন? এই পত্রিকার প্রকাশকাল লেখো।
সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদক মহাশয়ের নাম হল ঈশ্বর গুপ্ত। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি পত্রিকাটি প্রথম দৈনিক পত্রিকা প্রথম হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল।
১১। ভারতীয় ভাষার প্রথম দৈনিক পত্রিকা কোন্টি? এই পত্রিকার অবদান বা গুরুত্ব লেখো।
ভারতীয় ভাষার প্রথম দৈনিক পত্রিকা হল সংবাদ প্রভাকর। সংবাদ পরিবেশনের রীতিনীতি এই পত্রিকার প্রথম পাতাতেই প্রত্যক্ষ করা যায়। আবার এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করেই রঙ্গলালের মতো কবি, দীনবন্ধু মিত্রের মতো নাট্যকার, বঙ্কিমচন্দ্রের মতো ঔপন্যাসিকের আবির্ভাব ঘটে। সংবাদ ও সাহিত্যের মেলবন্ধনে এই পত্রিকাটি ছিল অভিনব।
এই পত্রিকায় প্রকাশিত রঙ্গ-ব্যঙ্গ রচনাগুলিও পাঠকের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সংবাদ, সাহিত্য, শিক্ষা, রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ সবকিছু নিয়ে যুক্তিপূর্ণ আলোচনা করা হত এই পত্রিকাটিকে।
১২। জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার সম্পাদকের নাম লেখো। পত্রিকাটির প্রথম প্রকাশকাল লেখো।
জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে এই পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
১৩। জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার গুরুত্ব বা অবদান লেখো।
যুক্তিবাদ ও আধুনিকতার মিশ্রণে সংবাদ পরিবেশন করে সমাজকে বিশেষভবে নাড়া দিয়েছিল। উনিশ শতকে বাংলাদেশে প্রগতিবাদী চিন্তাধারার বাহন হয়ে এসেছিল এই পত্রিকা।
১৪। কোন্ পত্রিকা ইয়ং বেঙ্গলের মুখপাত্র হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল? কোথা থেকে এই পত্রিকা প্রকাশিত হত?
জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা ইয়ং বেঙ্গলের মুখপাত্র হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল।
কলকাতার চোরাবাগান থেকে সাপ্তাহিক পত্র হিসেবে জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল।
১৫। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদকের নাম কী? এই পত্রিকার প্রথম প্রকাশকাল লেখো।
তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদকের নাম হল অক্ষয়কুমার দত্ত। ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে ১৬ আগস্ট এই পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
১৬। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা কোন্ সভার মুখপাত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল? তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার অবদান বা গুরুত্ব লেখো।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপাত্র হিসেবে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করে। সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় পত্রিকাতে প্রাধান্য লাভ করে। বাংলা গদ্যসাহিত্যের বিকাশে এই পত্রিকার অবদান অবিস্মরণীয়। সংকীর্ণ ধর্মীয় তর্ক-বিতর্ক ও নকশা জাতীয় রচনাকে অতিক্রম করে এই পত্রিকা যথার্থভাবে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ওপর গুরুত্ব দান করেছিল। নীলকর সাহেবদের অত্যাচার সম্বন্ধেও এই পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখা হত।
১৭। বিবিধার্থ সংগ্রহ পত্রিকার সম্পাদকের নাম লেখো। এই পত্রিকার প্রথম প্রকাশকাল লেখো।
বিবিধার্থ সংগ্রহ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন রাজেন্দ্রলাল মিত্র। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল।
১৮। বিবিধার্থ সংগ্রহ পত্রিকাটি কোন্ বিদেশি ম্যাগাজিনের আদর্শে রচিত হয়েছিল? কোন্ সংস্থা থেকে তা প্রকাশিত হত?
ভার্নাকুলার লিটারেচার সোসাইটির পৃষ্ঠপোষকতায় বিলিতি পেনী ম্যাগাজিনের আদর্শে বিবিধার্থ সংগ্রহ পত্রিকাটি রচিত হয়েছিল। এই পত্রিকাটি ব্যাপটিস্ট মিশনের ছাপাখানা থেকে ছাপা হত।
১৯। বাংলার প্রথম সচিত্র সাময়িক পত্র কোন্টি? এই পত্রিকার অবদান বা গুরুত্ব লেখো।
বাংলার প্রথম সচিত্র সাময়িক পত্রের নাম হল বিবিধার্থ সংগ্রহ। পুরাবৃত্ত, মহাপুরুষদের জীবনী, তীর্থস্থানের বর্ণনা, খাদ্য, বাণিজ্য, নীতিকথা, কাব্য, সরল আলোচনায় ঠাসা থাকত এই পত্রিকা। এই পত্রিকায় প্রথম সাহিত্য সমালোচনা শুরু হয়। এই পত্রিকার গদ্যের ভাষা ছিল প্রাঞ্জল।
২০। সোমপ্রকাশ পত্রিকার সম্পাদকের নাম লেখো। এই পত্রিকার প্রথম প্রকাশকাল লেখো।
সোমপ্রকাশ পত্রিকার সম্পাদক হলেন দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ। সোমপ্রকাশের প্রকাশকাল হল ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর।
২১। সোমপ্রকাশ পত্রিকার অবদান বা গুরুত্ব লেখো।
সোমপ্রকাশ পত্রিকা নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল। দরিদ্র নীলচাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে নানা ধরনের লেখা প্রকাশ করত। এ ছাড়াও সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান সব ধরনের বিষয় গুরুত্ব পেত এই পত্রিকায়।
২২। বঙ্গদর্শন পত্রিকার সম্পাদকের নাম লেখো। এই পত্রিকার প্রথম প্রকাশকাল উল্লেখ করো।
বঙ্গদর্শন পত্রিকার সম্পাদক হলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্গদর্শন পত্রিকার প্রথম প্রকাশকাল হল ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দ।
২৩। বঙ্গদর্শন পত্রিকাটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কতদিন সম্পাদনা করেছিলেন? এই পত্রিকার অবদান বা গুরুত্ব লেখো।
১৮৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বঙ্গদর্শন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
সাময়িক পত্রিকার জগতে আধুনিক মাসিক পত্রিকা হিসেবে বঙ্গদশর্নের আত্মপ্রকাশ। এই পত্রিকার মধ্য দিয়েই নবযুগের বাণী এদেশের শিক্ষিত মানুষের মনে এসে প্রবেশ করে। বিজ্ঞান, ধর্ম, দর্শন প্রভৃত্তি বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পত্রিকাতে গল্প, উপন্যাস, সাহিত্য সমালোচনা ইত্যাদি নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হত। পরাধীন ভারতবর্ষের কৃষকদের দুর্দশা, প্রাচীন সাহিত্য ইত্যাদিও এই পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হত। সাচক ও গীতাও
২৪। ভারতী পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন? এই পত্রিকার প্রকাশকাল লেখো।
ভারতী পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই পত্রিকার প্রকাশকাল হল ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দ।
২৫। ভারতী পত্রিকা কত বছর ধরে প্রকাশিত হয়েছিল? এই পত্রিকার অবদান বা গুরুত্ব আলোচনা করো।
ঠাকুরবাড়ির এই বিখ্যাত পত্রিকাটি প্রায় পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি সময় ধরে প্রকাশিত হয়েছিল।
স্বদেশীয় ভাষার আলোচনা, জ্ঞানচর্চা, ভাবস্ফূর্তি এ সবই ছিল এই পত্রিকার উদ্দেশ্য। এই পত্রিকায় প্রকাশিত ছোটোগল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, রম্যরচনা, গ্রন্থ সমালোচনা, সংবাদ প্রভৃতি বাংলা গদ্যরীতির বিবর্তনে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল।
২৬। সাধনা পত্রিকার সম্পাদক মহাশয়ের নাম লেখো। এই পত্রিকা কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়?
সাধনা পত্রিকার সম্পাদকের নাম হল সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই পত্রিকার প্রকাশকাল হল ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দ।
২৭। সাধনা পত্রিকার গুরুত্ব বা অবদান লেখো।
সাহিত্য, সংগীত, শিল্প, দর্শন, রাজনীতি, কবিতা, গদ্য- সব ধরনের রচনাই সাধনা পত্রিকায় প্রকাশিত হত। হিন্দুসমাজ ও ব্রাহ্মসমাজের দ্বন্দ্ব এই পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হত। এই পত্রিকার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গভীর যোগ ছিল। তাঁর অধিকাংশ রচনাই এই পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল। শাস্ত্রীয় আলোচনা মুক্ত এই পত্রিকা বুদ্ধিনির্ভর পথে পরিচালিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের ‘য়রোপযাত্রীর ডায়েরি’, ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’, ‘দালিয়া’ ইত্যাদি সাধনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
২৮। প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদকের নাম লেখো। এই পত্রিকার প্রকাশকাল লেখো।
প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদকের নাম রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। এই পত্রিকার প্রকাশকাল হল ১৯০১ খ্রিস্টাব্দ।
২৯। প্রবাসী পত্রিকার অবদান বা গুরুত্ব আলোচনা করো।
প্রবাসী বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি পত্রিকা। রাজনীতি, সমাজনীতি, সংগীত, চিত্রকলা, ভাস্কর্য ইত্যাদি বিষয়ে যশস্বী লেখকরা এই পত্রিকায় লিখতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখরা ছিলেন এই পত্রিকার নিয়মিত লেখক।
৩০। ভারতবর্ষ পত্রিকার সম্পাদকের নাম লেখো। এই পত্রিকার প্রকাশকাল উল্লেখ করো।
ভারতবর্ষ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে মাসিক পত্রিকা রূপে ভারতবর্ষ পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করেছিল।
৩১। সবুজপত্র পত্রিকার সম্পাদক মহাশয়ের নাম লেখো। এই পত্রিকার প্রকাশকাল উল্লেখ করো।
সবুজপত্র পত্রিকার সম্পাদকের নাম প্রমথ চৌধুরী। এই পত্রিকা ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল।
৩২। সবুজপত্র পত্রিকায় বিশিষ্ট লেখকদের যেসব রচনা প্রকাশিত হয়েছিল, তার উল্লেখ করো।
সবুজপত্রকে কেন্দ্র করে বীরবলী চক্রতে তরুণ লেখক সমাজ জমায়েত হয়। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এই পত্রিকার প্রধান প্রাণপুরুষ। রবীন্দ্রনাথের ‘সবুজের অভিযান’ কবিতা, ‘ঘরে-বাইরে’ উপন্যাস, ‘স্ত্রীর পত্র’, ‘পয়লা নম্বর’ প্রভৃতি ছোটোগল্প এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। প্রমথ চৌধুরীর অধিকাংশ প্রবন্ধগুলি এই পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল। সবুজপত্রের অন্যান্য লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, অতুলচন্দ্র গুপ্ত, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ।
৩৩। সবুজপত্র পত্রিকার অবদান বা গুরুত্ব লেখো।
সবুজপত্র পত্রিকার মধ্য দিয়ে সমস্যাকীর্ণ সমাজের দিকে যৌবনের জয়তিলক এঁকে সমাজে নতুন প্রাণের সঞ্চার করা হয়েছিল। আগাগোড়া চলিতভাষায় লেখা এই পত্রিকাতে যৌবনের বন্দনা, কৃত্রিমতা ও জড়তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষিত হয়েছিল।
৩৪। কল্লোল পত্রিকার সম্পাদকের নাম লেখো। এই পত্রিকার প্রকাশকাল উল্লেখ করো।
কল্লোল পত্রিকার সম্পাদকদ্বয় হলেন গোকুলচন্দ্র নাগ, দীনেশরঞ্জন দাস।
এই পত্রিকা ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
৩৫। কল্লোল পত্রিকার অবদান বা গুরুত্ব আলোচনা করো।
কল্লোল পত্রিকার মধ্যে দিয়ে সাময়িকপত্রে আধুনিকতার প্রতিধ্বনি শোনা যায়। বিদ্রোহ, প্রতিবাদ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই, অবদমিত কামনা-বাসনা, যৌনক্ষুধা এই পত্রিকার সাহিত্যচর্চার প্রধান বিষয় হয়েছিল। এই প্রত্রিকার লেখকেরা রবীন্দ্রনাথ থেকে একেবারে সরে এসে অর্থনৈতিক নৈতিকতা ও স্বাধীনতা চেয়েছিল।
৩৬। কল্লোল পত্রিকাকে কেন্দ্র করে যে শক্তিশালী লেখক গোষ্ঠীর লেখা প্রকাশিত হয়েছিল, তাদের পরিচয় দাও।
কল্লোলের প্রধান লেখকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসু ও অচিন্ত্য সেনগুপ্ত। এদের একসঙ্গে ‘কল্লোল ত্রয়ী’ বলা হত। মোহিতলাল মজুমদার, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, নজরুল ইসলাম, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, জীবনানন্দ দাশ, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, মণীশ ঘটক, প্রবোধকুমার সান্যাল প্রমুখ বিখ্যাত সাহিত্যিকদের লেখা এই পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল। সম্পূর্ণ রবীন্দ্রবিরোধী মানসিকতা ছিল এই পত্রিকার লেখকদের। বুদ্ধদেব বসুর ‘বন্দির বন্দনা’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘প্রথমা, জীবনানন্দের ‘ঝরা পালক’, অজিত দত্তের ‘কুসুমের মাস’ এই পত্রিকায় প্রকাশিত।
৩৭।শনিবারের চিঠি পত্রিকার প্রকাশকাল ও সম্পাদক মহাশয়ের নাম লেখো।
শনিবারের চিঠি পত্রিকার সম্পাদক হলেন যোগানন্দ দাস। এই পত্রিকা ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জুলাই সাপ্তাহিক পত্রিকারূপে আত্মপ্রকাশ করে।
৩৮। পরিচয় পত্রিকার প্রকাশকাল ও সম্পাদক মহাশয়ের নাম লেখো।
ত্রৈমাসিক পত্রিকা হিসেবে পরিচয় পত্রিকা ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সম্পাদনায় আত্মপ্রকাশ করে।
৩৯। পরিচয় পত্রিকার অবদান বা গুরুত্ব আলোচনা করো।
সাম্যবাদী সমাজপ্রতিষ্ঠার উপর এই পত্রিকা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল। মার্কসীয় সাহিত্যের বিকাশের সঙ্গে এই পত্রিকা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থেকেছে। প্রগতিমূলক সমাজ ও সাহিত্য চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে এই পত্রিকায়। আবেগ সর্বস্বতাকে দূরে সরিয়ে সাম্যবাদী সমাজগঠনের হাতিয়ার হিসেবে এই পত্রিকা বাংলা সাহিত্যে এক নবযুগের সূচনা করেছিল।
৪০। কালিকলম পত্রিকার সম্পাদকের নাম লেখো। এই পত্রিকার প্রকাশকাল উল্লেখ করো।
কালিকলম পত্রিকার সম্পাদকদ্বয় হলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র ও শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়।
এই পত্রিকার প্রকাশকাল হল ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ।
৪১। প্রগতি পত্রিকার সম্পাদকের নাম কী? এই পত্রিকার প্রকাশকাল লেখো।
প্রগতি পত্রিকার সম্পাদকদ্বয়ের নাম হল বুদ্ধদেব বসু ও অজিত কুমার। এই পত্রিকার প্রকাশকাল হল ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ।
৪২। দেশ পত্রিকা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টাকা লেখো।
১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের সম্পাদনায় দেশ পত্রিকাটি আত্মপ্রকাশ করে। এই পত্রিকার কর্ণধার ছিলেন প্রফুল্লকুমার সরকার। পরবর্তীকালে দেশ সাপ্তাহিক পত্রিকায় পরিণত হয়। রবীন্দ্রনাথ-সহ বহু বিখ্যাত লেখক, যেমন- প্রেমেন্দ্র মিত্র, প্রবোধকুমার সান্যাল, যোগেন্দ্রমোহন সেনের লেখা দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সাগরময় ঘোষের সম্পাদনায় দেশ পত্রিকা স্বর্ণশিখর স্পর্শ করেছিল। বর্তমানে দেশ সর্বজনপ্রিয় পত্রিকা।
৪৩। বঙ্গবাসী পত্রিকার প্রকাশকাল লেখো। এই পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
এই পত্রিকা ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে ১০ ডিসেম্বর ৪১নং চাঁপাতলা ফাস্ট লেন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন যোগেন্দ্রচন্দ্র বসু।
৪৪। বঙ্গবাসী পত্রিকার অবদান বা গুরুত্ব আলোচনা করো।
প্রথম সংখ্যা থেকেই বঙ্গবাসী পত্রিকাটি বাঙালির মনকে জয় করে নিয়েছিল। সেই সময়কার সেরা লেখকেরা এই পত্রিকায় লিখতেন। বাংলা সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রে এই পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হত। পত্রিকটি একটানা যাট বছর প্রকাশিত হয়েছিল।
৪৫। কৃত্তিবাস পত্রিকার সম্পাদকের নাম লেখো। এই পত্রিকার প্রকাশকাল উল্লেখ করো।
কৃত্তিবাস পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে কৃত্তিবাস পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল।
৪৬। কৃত্তিবাস পত্রিকার অবদান বা গুরুত্ব আলোচনা করো।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে সেই সময়কার তরুণ কবিসমাজ পুরাতনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে নতুন ধরনের কবিতার আন্দোলন শুরু করে। কঠিন বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলে এই পত্রিকায় মূল্যবোধ ও নীতিহারাদের বেদনা প্রকাশ করেছে। প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, বেদনা, হতাশা, ক্ষোভ ইত্যাদি নিয়ে এই পত্রিকা সরব হয়েছে। এই পত্রিকার উল্লেখযোগ্য লেখকরা হলেন- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়, আনন্দ বাগচী, দীপক মজুমদার প্রমুখ।
৪৭। দিগদর্শন পত্রিকা থেকে বঙ্গদর্শন পত্রিকা পর্যন্ত বাংলা সাময়িক পত্রিকা পর্বের কয়েকটি পত্রিকার নাম লেখো।
দিগদর্শন পত্রিকা থেকে বঙ্গদর্শন পত্রিকা পর্যন্ত কয়েকটি বাংলা সাময়িক পত্রের নাম হল- দিগদর্শন
সমাচার দর্পণ সেবধি প্রভাকর সংগ্রহ। বাঙাল গেজেটি সম্বাদ কৌমুদী সমাচার চন্দ্রিকা । বঙ্গদূত জ্ঞানান্বেষণ সোমপ্রকাশ তত্ত্ববোধিনী বঙ্গদর্শন। ব্রাহাণ সংবাদ বিবিধার্থ
৪৮। বঙ্গদূত পত্রিকাটি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।
১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে নীলরত্ন হালদারের সম্পাদনায় বঙ্গদূত পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল। বঙ্গদূত ছিল সাপ্তাহিক পত্রিকা। এই পত্রিকার পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রাজা রামমোহন রায়, দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রমুখ।
৪৯। জ্ঞানোদয় পত্রিকাটি সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।
১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানোদয় পত্রিকা প্রকাশিত হয়। হিন্দু কলেজের শিক্ষক রামচন্দ্র মিত্রের সম্পাদনায় এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল, যা ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ক প্রথম বাংলা পত্রিকা। এই পত্রিকায় পুরাবৃত্ত, জীবনচরিত প্রকাশের পাশাপাশি প্রাণী বিষয়ক ও বিজ্ঞান বিষয়ক নানা প্রবন্ধ প্রকাশিত হত।
আরও পড়ুন- ছুটি গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর