সাম্যবাদী কবিতার প্রেক্ষাপট ও বিষয়সংক্ষেপ । Samyabadi kobitar prekkhapot O bishoysongkkhep

সাম্যবাদী কবিতার প্রেক্ষাপট ও বিষয়সংক্ষেপ

সাম্যবাদী কবিতার প্রেক্ষাপট ও বিষয়সংক্ষেপ
সাম্যবাদী কবিতার প্রেক্ষাপট ও বিষয়সংক্ষেপ

সাম্যবাদী কবিতার প্রেক্ষাপট ও বিষয়সংক্ষেপ

সাম্যবাদী কবিতার প্রেক্ষাপট

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্য, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। এর ফলে বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের মধ্যে যে জাগরণ দেখা দেয় তা নজরুলের মনকে উদ্বেলিত করে। হিন্দু-মুসলমান তথা সমস্ত ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি কামনা ছিল নজরুলের সারাজীবনের সাধনা। বাহ্যিক আচারসর্বস্বতা, ধর্মীয় রীতিনীতির বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের অন্তর্গত লেবার স্বরাজ পার্টি গঠিত হয়। এই পার্টির মুখপত্র ছিল ‘লাঙল’ সাপ্তাহিক পত্রিকা। এই পত্রিকায় (১ পৌষ, ১৩৩২) ‘সাম্যবাদী’ কবিতাগুচ্ছ প্রকাশিত হয়। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি দীর্ঘ কবিতা। আলাদা আলাদা উপশিরোনামে কবিতাটি লেখা।

‘সাম্যবাদী’ গ্রন্থে যে কবিতাগুচ্ছ ছিল সেগুলির উপশিরোনাম যথাক্রমে সাম্যবাদী’, ‘ঈশ্বর’, ‘মানুষ’, ‘পাপ’, ‘চোর-ডাকাত’, ‘বারাঙ্গনা’, ‘মিথ্যাবাদী’, ‘নারী’, ‘রাজপ্রজা’, ‘সাম্য’ এবং ‘কুলিমজুর’। পরের বছর এই কবিতাগুচ্ছ ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। সাম্যবাদী চেতনা অর্থাৎ মানুষের মৌলিক সমস্যা সমাধানের সংগ্রামী মনোভাব এই পর্বের কবিতায় দেখা যায়।

১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে কলকাতায় তিন বার হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা হয়। নজরুল অবচেতনে তার আভাস পেয়েছিলেন। শুধু ধর্মীয় বিবাদ নয়, তিনি সব রকমের অসাম্যের বিরোধী ছিলেন। ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটিতে তিনি সমস্ত অসাম্যের বিরুদ্ধে মানবতার জয়গান গেয়েছেন।

সাম্যবাদী কবিতার বিষয়সংক্ষেপ

সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমাজের সব। শ্রেণির মানুষের মধ্যে সমতার আদর্শের কথা বলেছেন। তিনি এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন যেখানে সব মানুষের সমান অধিকার থাকবে। ধর্ম ও জাতি নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এই ভেদাভেদ, বিবাদ, বিদ্বেষই মানুষের মধ্যে হিংসা-হানাহানি বাড়িয়ে তোলে। ধর্মের মোহে মানুষ মনুষ্যত্ব ভুলে যায়। তারা ভুলে যায় শুধু ধর্মগ্রন্থ পাঠ করলেই প্রকৃত মানবতা জাগরিত হয় না। মানুষ যদি নিজের অন্তরকে উদার ও বিকশিত করে তবেই সে হৃদয়ের

মধ্যেই শাস্ত্রজ্ঞান উপলবিং করতে পারবে। কবির মতে, অন্তর ধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। মানুষের মনের মধ্যে আছে মন্দির-মসজিদ-গির্জা- সব তীর্থ। ধর্ম-বর্ণ-জাতির পরিচয় কখনোই মানুষের প্রকৃত পরিচয় নয়। মানবতাবোধের জাগরণ ঘটলে আর ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষজন বিবাদ করবে না। কোরান-পুরাণ-বেদ- বেদান্ত ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থ পড়ে মানুষ যে জ্ঞান অর্জন করে তাকে যথাযথ অনুধাবন করতে মানবিকতাবোধের দরকার। মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটলেই সমাজে সাম্য-মৈত্রী প্রতিষ্ঠিত হবে। মনুষ্যহৃদয়ের থেকে বড়ো কোনো মন্দির-মসজিদ-দেবতা নেই -মানুষ এ কথা উপলব্ধি করতে পারলেই সমাজে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হবে। সব মানুষের সমান অধিকার, মনুষ্যত্বের বিকাশ, সকলের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে পারাই হল কবিতার মূল কথা।

আরও পড়ুন – প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব রচনা

Leave a Comment