যক্ষ্মারোগ ও তার প্রতিকার রচনা
যক্ষ্মারোগ ও তার প্রতিকার রচনা
ভূমিকা
পৃথিবীতে প্রাণের সূচনা সে এক যুগান্তকারী ঘটনা। জন্ম হলে মৃত্যু হবেই। মৃত্যুর নানা কারণ থাকে। মানুষের জীবনে চারটি অধ্যায়-শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য। বার্ধক্যে মানুষের শরীর কর্মক্ষমতা হারায়। ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে সে পা বাড়ায়। কিন্তু রোগে আক্রান্ত হয়েও মানুষের জীবন প্রদীপ নিভে যেতে পারে। রোগে আক্রান্ত হলেই আবার মৃত্যু নাও হতে পারে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে শরীরে এন্টিবডি সৃষ্টি হয়ে শরীরকে রোগের হাত থেকে বাঁচায়। আবার কিছু কিছু রোগে জীবনের যবনিকা পাত ওঘটতে পারে। বিজ্ঞান চেষ্টা করছে মানুষকে রোগ মুক্ত করতে। কিছুকিছু রোগ আবার মারাত্মক যেমন যক্ষ্মা বা টিউবারকোলেসিস (T.B)।
যক্ষ্মার কারণ
রোগ ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস আক্রমণে হতে পারে। ভাইরাস যখন জীবদেহের বাইরে থাকে তখন মৃতবৎ; কোষ বিভাজন, বংশবৃদ্ধি তার হয় না। শরীরে প্রবেশ করলেই দ্রুত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার বিপরীত। যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ। এই রোগের উৎপাত বেশী দেখা যায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে। এই রোগ জীবাণু মানব দেহে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। বিশেষ করে খাদ্যাভাবে যখন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যক্ষ্মার জীবাণু জেগে উঠেও মানুষকে আক্রান্ত করে। প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং ভারতবর্ষে প্রতিবছর এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা গড়ে কম করে এক হাজার।
জীবাণু সংক্রামণের পদ্ধতি
এই রোগের জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে এবং রক্তে মিশে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। বাইরের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে দেহে যেসব জীবাণু থাকে তারা বাধা সৃষ্টি করে। দেহসিক্ত জীবাণু বহিরাগত জীবাণুকে দমাতে না পারলে বহিরাগত জীবাণু অর্থাৎ যক্ষার জীবাণু শরীরে রোগ সৃষ্টি করে। বহিরাগত জীবাণুকে শরীর স্থিত জীবাণু ধবংস না করতে পারলেও দমন করে রাখলে বহিরাগত যক্ষা জীবাণু শরীরে মৃত প্রায় অবস্থায় থাকে। অনুকূল পরিবেশ পেলে আবার জেগে ওঠে। এই জেগে ওঠা পঁচিশ বছর পরেও হতে পারে। যক্ষা জীবাণু প্রথমে ফুসফুসে সংক্রামিত হয়ে পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে, যেমন স্নায়ুতন্ত্র, লিভার, হাড়, মস্তিস্ক, ত্বক প্রভৃতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
রোগনির্ণয়
রোগীর কফ পরীক্ষা করে প্রতি মিলিমিটারে যদি ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ ১০৪এর বেশি হয় তবে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধরতে হবে। সাধারণত ফুসফুসের যক্ষ্মা রোগের ব্যাকটেরিয়া একজনের শরীর থেকে অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ফুসফুসের যক্ষা চিকিৎসায় সেরে যায়। স্নায়ুর যক্ষ্মা সারানো সহজ হয় না।
যক্ষ্মায় আক্রান্তর লক্ষণ
যদি কোনো ব্যক্তি তিন সপ্তাহের বেশি সময় শুকনো কাশিতে কষ্ট পায় এবং ধীরে ধীরে শরীরের ওজন কমতে থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ। পৃথিবী থেকে যক্ষারোগ নির্মূল করার জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নানা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে এবং সমস্ত দেশে হাসপাতাল, হেলথ্ সেন্টার বা বুথে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।
ভারতে যক্ষা রোধের ব্যবস্থা
যক্ষা রোগের চিকিৎসা ভারতবর্ষে মূলত শুরু হয় ১৯৯০ সালে ডিভাইসড্ ন্যাশনালে টিউবার কুলেসিস কন্ট্রোল প্রোগ্রামের মাধ্যমে সারা দেশে। ১৯৫০ সালের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণের ফলে যক্ষ্মারোগ নিরাময়ে সময় লাগত ১৮ মাস। ১৯৯০ সালের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসারে তা কমে ৯ মাস হয়। এখন সারা পৃথিবীতে ডাইরেক্টলি অবজারভড্ ট্রিটমেন্ট সর্টকোস (ড) এর মাধ্যমে চিকিৎসার সময় কাল করা হয়েছে ৬ মাস। এই চিকিৎসা মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক সফল পদ্ধতি।
উপসংহার
আগে মানুষ যক্ষা রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর দিন গুনতো। এখন যক্ষ্মারোগ সেরে যায় উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে। যক্ষ্মারোগের উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে ডাক্তারের কাছে আসতে হবে।তিনটি পাত্রে রেখে রোগীর কফ পরীক্ষা করা হয় এবং কোন পাত্রে পজেটিভ অর্থাৎ যক্ষ্মা রোগের অস্তিত্ব পাওয়া গেলে ও অন্য পাত্রে নেগেটিভ বা ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে বোঝা যাবে আগে রোগী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিল এখনও সম্পূর্ণ সারেনি। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা করে রোগ সারাতে সময় লাগবে ৮ মাস। যক্ষ্মা হয়েছে বলে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। যথা সময়ে চিকিৎসা করলে রোগ সেরে যায়।
আরও পড়ুন – শৈশবের স্মৃতি রচনা