ভারতীয় পার্লামেন্টে উভকক্ষের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো
রাজ্যসভা ও লোকসভার সাংবিধানিক সম্পর্ক
ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা এবং উচ্চকক্ষ হলো রাজ্যসভা। রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যা 250 জন এবং লোকসভার সদস্য সংখ্যা সর্বাধিক 552 জন। রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভায় মোট 12 জন কৃতী ব্যক্তিদেরকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করতে পারেন। লোকসভায় শুধুমাত্র ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি 2 জনকে মনোনীত করতে পারেন। রাজ্যসভা স্থায়ী কক্ষ এবং রাজ্যসভার সদস্যদের মেয়াদ 6 বছর। তবে প্রতি 2 বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর নেন। কিন্তু লোকসভায় স্থায়ী কক্ষ নয়, লোকসভার কার্যকালের মেয়াদ 5 বছর।
লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে যে সাংবিধানিক সম্পর্ক রয়েছে তাকে তিনটি দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। যথা—
(1) রাজ্যসভা ও লোকসভার সম ক্ষমতা
কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যসভা ও লোকসভা সমান ক্ষমতা ভোগ করে।
(i) পার্লামেন্টে বিল গ্রহণ সংক্রান্ত ক্ষমতার ক্ষেত্রে একমাত্র অর্থবিল ছাড়া রাজ্যসভা ও লোকসভা অন্যান্য বিলের ব্যাপারে সমান ক্ষমতার অধিকারী।
(ii) সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও দুটি কক্ষ সমান ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। উভয় কক্ষের সম্মতি ছাড়া সংবিধান সংশোধন করা যায় না।
(iii) রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও পদচ্যুতির বিষয়ে এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষ সমান ক্ষমতার অধিকারী।
(iv) কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হাইকোর্টে স্থাপন কিংবা হাইকোর্টের ক্ষমতার পরিধি বাড়ানো প্রভৃতি বিষয়ে দুটি কক্ষ সমান ক্ষমতার অধিকারী।
(v) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ঘোষিত জরুরি অবস্থা অনুমোদনের ব্যাপারে লোকসভা ও রাজ্যসভার সমান ক্ষমতা রয়েছে।
(2) রাজ্যসভার প্রাধান্য
(i) রাজ্যসভার উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ যদি এমন প্রস্তাব গ্রহণ করেন যে, জাতীয় স্বার্থে রাজ্য তালিকার কোনো বিষয়ে পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন, তাহলে পার্লামেন্ট সেই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে। এভাবে রাজ্যসভার একক প্রস্তাবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বন্টন ব্যবস্থার রদবদল ঘটানো সম্ভব।
(ii) রাজ্যসভায় উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থে পার্লামেন্ট এক বা একাধিক সর্বভারতীয় চাকরি সৃষ্টির জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারে।
(iii) উপরাষ্ট্রপতি পদচ্যুতি সম্পর্কিত প্রস্তাব শুধুমাত্র রাজ্যসভায় উপস্থাপন করা যায়।
(3) লোকসভার প্রাধান্য
(i) অর্থবিল একমাত্র লোকসভাতে উত্থাপিত হতে পারে। তাছাড়া কোনো বিল অর্থবিল কিনা সে বিষয়ে মতবিরোধ ঘটলে লোকসভার অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়।
(ii) 44 তম সংবিধান সংশোধনী অনুযায়ী, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার-এর ব্যাপারে লোকসভা কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করলে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করতে ব্যস্ত থাকবেন।
(iii) কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা তার কাজকর্মের জন্য শুধুমাত্র লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে। মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার ক্ষমতা একমাত্র লোকসভার রয়েছে।
উপসংহার
ভারতীয় পার্লামেন্টের দুটি কক্ষের মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বলা যায় যে, সামগ্রিকভাবে রাজ্যসভা অপেক্ষা লোকসভা অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কক্ষ হিসেবে লোকসভার গুরুত্ব স্বভাবতই বেশি।
আরও পড়ুন – ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব আলোচনা করো