ড্রাগের নেশা সর্বনাশা রচনা
ড্রাগের নেশা সর্বনাশা রচনা
ভূমিকা
সমস্যায় জর্জরিত ভারতবর্ষের মানুষের শোনিত-ধারায় বেড়ে চলেছে মৃত্যুর কালনাগিনী, সর্বনাশা ড্রাগের বিষ। সুচিন্তিত পরিকল্পনা, প্রয়াস দ্বারা এইসব সমস্যার যদিও সমাধান সম্ভব, কিন্তু বর্তমানের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে নবাগত এই বিষের ছোবল থেকে সমাজকে মুক্ত করা যে খুব কঠিন কাজ তা আর বলার অপেক্ষা করেনা।
ভারতে মাদক-দ্রব্য প্রচার
ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অশিক্ষিত, ক্ষুধার্ত, হতাশা-জর্জরিত মানুষকে ইংরেজরা মাদকাসক্ত করে তাদের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করত। এমন কি তাদের চেতনা বোধের বিলোপ ও দাসত্বে পরিণত করার জন্য সুকৌশলে মাদক দ্রব্য প্রদান করত বিনা পয়সায়। বৈদেশিক শাসন থেকে দেশ মুক্তি লাভ করলেও তার উন্নয়নকে স্তব্ধ করার জন্য বিদেশী শক্তি বার বার নিক্ষেপ করেছে ভয়ঙ্কর অস্ত্র-সম্ভার এবং চোরাপথে পাঠিয়ে দিচ্ছে নানা ধরনের মাদক দ্রব্য। এক সময় সাম্রাজ্যবাদীর কামান থেকে বর্ষিত হয়েছিল চিনে আফিমের গোলা। যার ফলে বিরাট জাতিকে অনায়াসে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে পদানত হতে হয়েছিল।
এখন হিংসারূপ কামান থেকে বর্ষিত হচ্ছে গাঁজা, চরস, হেরোইন, ব্রাউন সুগার, এল.এস.ডি, ম্যানড্রেক্স, আফিম, কোকেন, হাসিস, মারিজুয়ানা প্রভৃতি মারনান্তক বিষ বিদেশী শক্তির থেকে। যার ফলে ভারতের মতো শান্তিপ্রেমী রাষ্ট্রের বিশেষ করে যুবসমাজ মাদকাশক্ত হয়ে বিপথগামী হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চেষ্টা করছে এইভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে সর্বনাশের দাবানলে নিক্ষেপ করতে। উন্নত দেশগুলির আশা-ভরসা যুব সম্প্রদায়, তারাই দেশের নতুন ঊষার সিংহদ্বার উন্মোচন করতে পারে। বিশ্ব রাজনীতি আজ তিনটি শিবিরে, ধনতন্ত্র, সামাজতন্ত্র ও সদ্য-স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত। সদ্য-স্বাধীন রাষ্ট্রগুলি হল তৃতীয় বিশ্বের দেশ। তাদের দুর্বল করতে পারলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রভুত্ব করার সুবিধা হবে।
ড্রাগ-পাঠানোর কারণ
সর্বনাশা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ করতে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলিকে বিশ্বব্যাপী রত্নপ্রসূ উপনিবেশগুলিকে হারাতে হয়েছে। সাম্রাজ্য হাতছাড়া হলেও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির দুর্নিবার লোভ বিশ্বকে শাসন করা, তাদের ওপর প্রভুত্ব করা। রাজনৈতিক শক্তি খর্ব হওয়ার ফলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে এসেছে মন্দা। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে প্রভুত্ব করে তারা নিজেদের মন্দার-বাজার চাঙ্গ 1 করতে চায়। এই দেশগুলি মৃত্যু পথযাত্রী হলে ড্রাগ চালানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক শোষণের পথ সুগম হবে তৃতীয় বিশ্বের সদ্য-স্বাধীন দেশগুলিতে, যে ড্রাগের চোরা- চালান চলছে তার পশ্চাতে রয়েছে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত।
ভারতে ড্রাগ-চালানের প্রধান পথ
ড্রাগ চালান চক্রান্তের শিকার হচ্ছে ভারত। জীবনঘাতী মাদক দ্রব্য মধ্য-প্রাচ্য থেকে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশ হয়ে ভারতে আসে ও তার একটি অংশ চলে যায় মায়ানমার পথে সিঙ্গাপুর, মিয়ামি, হংকং। যারা এই মারণ-ব্যবসায় যুক্ত তারা কেউ সুস্থ চেতনার মানুষ নয়, তারা নিষিদ্ধ পণ্য-পাচারকারী চোরাই চক্রের সাথে যুক্ত। এই চক্রের সাথে কুখ্যাত মাফিয়া-চক্র ও যুক্ত। উপমহাদেশের অশিক্ষিত, বেকার যুবক উচ্চ-আকাঙ্খায় ঘটনাচক্রে চোরাই চালানের সাথে জড়িয়ে পড়ছে, ডেকে আনছে তাদের জীবনে সর্বনাশ। অনেকের জীবনে ঘনিয়ে আসে অকালে যবনিকা। স্কুল-কলেজের ছাত্র থেকে চাকুরিজীবী যুবকও এই সর্বনাশা মাদকে আশক্ত হচ্ছে। এর কারণ সামাজিক অবক্ষয়, দ্বন্দ্বময় রাজনীতি, অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা। তাই শিক্ষক, অভিভাবক, অধ্যাপক, দায়িত্বশীল ব্যক্তির ললাটে চিন্তার গভীর বলিরেখা, সমাজকে এই মারণ- আশক্তি থেকে কিভাবে রক্ষা করা যায়।
প্রতিকার
এই সর্বনাশা আত্মবিনষ্টর পথ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন মাদকের কুফল সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সাথে সর্বশ্রেণির মানুষকে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে ড্রাগ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে। যারা মাদকাশক্ত হয়েছে তাদের সুপরিকল্পিত সহানুভূতির সাথে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও ড্রাগের ভয়াবহতা সম্বন্ধে প্রয়োজন সচেতন করা।
উপসংহার
সরকারকে কঠোর হাতে মাদক দ্রব্য চোরাই পথে অনুপ্রবেশ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে, চাই ন্যায় বিচার, চাই শিক্ষার প্রসার, চাই মানুষকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করা, চাই শুভ-চেতনার বৃদ্ধি।
আরও পড়ুন – শৈশবের স্মৃতি রচনা