ঔপনিবেশিক সমাজে জাতিসংক্রান্ত প্রশ্ন ও তার প্রভাব আলোচনা করো

ঔপনিবেশিক সমাজে জাতিসংক্রান্ত প্রশ্ন ও তার প্রভাব আলোচনা করো

ঔপনিবেশিক সমাজে জাতিসংক্রান্ত প্রশ্ন ও তার প্রভাব আলোচনা করো
ঔপনিবেশিক সমাজে জাতিসংক্রান্ত প্রশ্ন ও তার প্রভাব আলোচনা করো

ভূমিকা

ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রে জাতিগত বৈষম্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপের উন্নত ও সুসভ্য জাতিগুলি অনুন্নত দেশগুলিতে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার ফলে শাসক ও শাসিতের মধ্যে জাতিগত পার্থক্য প্রকট হয়ে দেখা দেয়।

প্রভাব

জাতিগত ব্যবধানের প্রভাব ছিল দুধরনের। ইতিবাচক এবং নেতিবাচক।

ইতিবাচক বা সদর্থক প্রভাব

ইতিবাচক প্রভাবগুলি হল—

পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার

ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলি এশিয়া, আফ্রিকার জাতিগুলির চেয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে এগিয়ে ছিল। তাই ঔপনিবেশিক শাসন প্রসারের ফলে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটে।

শিল্পকলার অগ্রগতি

উপনিবেশগুলিতে পাশ্চাত্য শিল্প ও সংস্কৃতির প্রভাব পড়ে। সৃষ্টি হয় নতুন শিল্প ও সংস্কৃতি। যেমন স্পেনের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো আফ্রিকার চিত্রকলার প্রভাবে তার বিখ্যাত চিত্রগুলি আঁকেন।

গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রসার

ঔপনিবেশিক শাসনে শাসিত জাতিগুলি নানা বঞ্চনার শিকার হয়েছিল। কিন্তু এই জাতিগুলি ঔপনিবেশিক শাসনের সংস্পর্শে ইউরোপে প্রচলিত নানা গণতান্ত্রিক আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ফলে সাম্য, মৈত্রী, গণতন্ত্র সম্পর্কে মানুষ সচেত হয়ে ওঠে। সংগঠিত হয় জাতীয় মুক্তি আন্দোলন, যার অনিবার্য পরিণতি ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান।

কুসংস্কার দূরীকরণ ও নবজাগরণের সুচনা

বিভিন্ন উপনিবেশগুলি পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসে। ফলে শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্পকলা প্রভৃতির ক্ষেত্রে নবজাগরণের সূচনা হয়।

সঙ্গীত শিল্পে অগ্রগতি

ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের ফলে পাশ্চাত্যের সংগীত শিল্পের সঙ্গে প্রাচ্যের পরিচিতি ঘটে। পাশ্চাত্যের বিখ্যাত সুরকার ও সংগীত শিল্পী ক্লদ দুবুমি পাশ্চাত্য সংগীতে প্রাচ্য সংগীতের বৈশিষ্ট্যের প্রয়োগ করেন।

নেতিবাচক বা নঞর্থক প্রভাব

নেতিবাচক প্রভাবগুলি হল—

অমানবিক শোষণ

ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি বিভিন্ন উপনিবেশের প্রজাদের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করতেন এবং তাদের ওপর নানা ধরনের শোষণ চালাত। এইসব কারণে কৃষিব্যবস্থা, কুটিরশিল্প প্রভৃতি বিদেশি জাতিগুলির শোষণে ধ্বংস হয়, এর ফলে প্রবল অর্থনৈতিক শোষণ, খাদ্যাভাব প্রভৃতি ঘটনা পরাধীন জাতিগুলিকে এক চরম দুরবস্থার সম্মুখীন করে।

বিভেদমূলক আচরণ

বিভিন্ন ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রেশাসক ও শাসিতের মধ্যে নানা ব্যবধান ছিল। রাস্তাঘাট, রেলগাড়ি, অফিস-আদালত, ক্লাব সর্বত্রই শ্বেতাঙ্গ শাসিত উপনিবেশের কৃষ্ণাঙ্গ অধিবাসীরা নানা বৈষম্যের শিকার হত। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও নানা বৈষম্য ছিল। এইভাবে কৃয়াঙ্গরা নানা বিভেদমূলক আচরণের শিকার হত।

চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ

ঔপনিবেশিক শাসকরা নিজেদের স্বার্থে উপনিবেশগুলিতে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করতেন। এই শ্রমিকরা বিদেশে নানা শ্রমসাধ্য কষ্টকর কাজ করতে বাধ্য হত। এর ফলে তারা নানা কষ্টকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হত।

জাতিগত দ্বন্দ্ব

বহিরাগত ঔপনিবেশিক শাসকরা নিজেদের জাতিগতভাবে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করত। ফলে আগ্রাসী শ্বেতাঙ্গ শাসক ও অসহায় কৃষাঙ্গ শাসিতের মধ্যে জাতিগত দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে দেখা দেয়, শেষপর্যন্ত কৃয়াঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে মুক্তি সংগ্রামের পথ নেয়।

মূল্যায়ন

এশিয়া ও আফ্রিকার নানা পরাধীন উপনিবেশগুলির কাছে সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ ছিল একটা অভিশাপের মতো। তাই বিভিন্ন উপনিবেশে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।

আরও পড়ুন – ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব আলোচনা করো

Leave a Comment