রেনেসাঁস কাকে বলে – আজকের পর্বে রেনেসাঁস কাকে বলে তা আলোচনা করা হল।
রেনেসাঁস কাকে বলে
রেনেসাঁস কাকে বলে |
ফরাসি শব্দ ‘রেনেসাঁস’ (Renaissance) কথাটির অর্থ হল নবজাগরণ বা পুনর্জন্ম। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে ইউরোপে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষের চেতনা ও ধ্যান-ধারণার বৈপ্লবিক পরিবর্তনকেই রেনেসাঁস বা নবজাগরণ বলা হয়।
রেনেসাঁসের সূচনা
রেনেসাঁসের প্রকৃত সূচনা নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে বিতর্ক আছে। যাইহোক, এটি সাধারণত মধ্যযুগের শেষের দিকে অর্থাৎ, চতুর্দশ শতকের শেষের দিকে সর্বপ্রথম ইটালিতে শুরু হয়েছিল এবং পঞ্চদশ শতকে রেনেসাঁস সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছিল বলে মনে করা হয়। ইটালির এই নবজাগরণ ক্রমশ জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে।
রেনেসাঁসের কারণ
রেনেসাঁসের প্রধান কারণগুলি ছিল-
(i) মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার: পঞ্চদশ শতকে জোহানেস গুটেনবার্গ কর্তৃক মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কারের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সাহিত্যের বাণী সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। এসময়ে মানুষ গণিত, চিকিৎসা বিজ্ঞান, আইন, ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ের জ্ঞান সহজেই লাভ করতে সক্ষম হয়।
(ii) বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভব: মধ্যযুগে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে জ্ঞানপিপাসু পাঠকদের কাছে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়। প্রকৃত বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানের প্রসারের ফলে নবজাগরণের পথ সুগম হয়।
(iii) মানবতাবাদীদের অবদান: মধ্যযুগের শেষ পর্বে পেত্রার্ক, দ্যান্ডে, লিওনার্দো-দ্য-ভিঞ্চি প্রমুখ মানবতাবাদীরা প্রাচীন পান্ডুলিপি সংগ্রহ করে তা প্রচার করতেন, যা রেনেসাঁসের আগমনকে ত্বরান্বিত করেছিল।
রেনেসাঁসের ফলাফল
রেনেসাঁসের ফলে মধ্যযুগ থেকে ইউরোপের আধুনিক যুগে উত্তরণ ঘটে। মধ্যযুগের সামাজিক প্রথা, ধর্মান্ধতা, রক্ষণশীলতা, স্বৈর-মানসিকতা ইত্যাদি মধ্যযুগের স্থবির অবস্থা থেকে বিবেক, যুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, উদারতা তথা গতিশীল ধারায় প্রবহিত হয়।
উপসংহার
মানব সভ্যতার ইতিহাসে রেনেসাঁস এক যুগান্তকারী ঘটনা। আধুনিক সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সাহিত্য, মানুষের মনন ও মেধাচর্চার শুরু হয় এই রেনেসাঁসের মধ্য দিয়েই। তাই ঐতিহাসিকগণ রেনেসাঁসকে ‘আধুনিক সভ্যতার উন্মেষপর্ব’ বলে অভিহিত করেছেন।