মানবতাবাদ সম্পর্কে আলোচনা করো – আজকের পর্বে মানবতাবাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
মানবতাবাদ সম্পর্কে আলোচনা করো
মানবতাবাদ সম্পর্কে আলোচনা করো |
ইউরোপে রেনেসাঁস পর্বে মানুষের চিন্তাধারা একটি বিশেষ দিকে ধাবিত হয়েছিল। এই বিশেষ দিকটিই হল ‘মানবতাবাদ’ বা ‘Humanism’। স্টিফেন লি-এর মতে, “মানবতাবাদ হল রেনেসাঁর যুগে সবরকম সাংস্কৃতিক অনুপ্রেরণা, যা সাহিত্য, চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও রাজনৈতিক ধ্যানধারণাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।” ফ্রান্সিসকো পেত্রার্ক ছিলেন মানবতাবাদের জনক।
মানবতাবাদী কারা
সকলে মানবতাবাদী হতে পারেন না। মানুষের প্রকৃতি বা জীবন-জীবিকা সম্পর্কে যাঁদের জ্ঞান আছে, শুধুমাত্র তাঁরাই হতে পারেন। রেনেসাঁস যুগের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য মানবতাবাদী ছিলেন-পেত্রার্ক, বোকাচ্চিও, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, ইরাসমাস, ম্যাকিয়াভেলি, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, টমাস মোর প্রমুখ। জ্ঞানের সাধক, এই সকল পণ্ডিতেরা মানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন।
মানবতাবাদের বিভিন্ন দিক
মানবতাবাদের বিভিন্ন দিক লক্ষ করা যায়, যথা-ব্যক্তি মানবতাবাদ, সামাজিক মানবতাবাদ, রাষ্ট্রীয় মানবতাবাদ, ধর্মীয় মানবতাবাদ ও বিশ্বমানবতাবাদ।
মানবতাবাদের আদর্শ
(ⅰ) মানবতাবাদের মূল বক্তব্য হল যে, ধর্মের সংকীর্ণতাপূর্ণ অন্ধগলিতে আবর্তিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ধর্মকে গড়ে তুলতে হবে জীবনমুখী করে।
(ii) মানবতাবাদ মানুষকে ধর্মীয় গোঁড়ামির মানসিক বন্দিত্ব থেকে মুক্তি দেয় এবং মুক্তচিন্তা ও সমালোচনা করতে উৎসাহিত করে।
(iii) মানবতাবাদ ঈশ্বরের গুণকীর্তনের পরিবর্তে মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ও প্রেম ভালোবাসার কথা প্রচার করে।
(iv) মানবতাবাদ পার্থিব মঙ্গলের জন্য বিশ্বাসের পরিবর্তে যুক্তির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে।
উপসংহার
এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, রেনেসাঁস যুগে সাহিত্য, শিল্প, রাজনৈতিক, সামাজিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে মানবতাবাদী চেতনার এক উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছিল। মানবতাবাদী পণ্ডিতগণ জ্ঞানচর্চা, জ্ঞান বিতরণ প্রভৃতি মূল্যবান কাজে নিয়োজিত থেকে মানুষের মঙ্গল সাধনের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন।