ভারতীয় নীতিতত্ত্বে পুরুষার্থের ধারণাটির সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো

ভারতীয় নীতিতত্ত্বে পুরুষার্থের ধারণাটির সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো
ভারতীয় নীতিতত্ত্বে পুরুষার্থের ধারণাটির সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো

ভারতীয় নীতিতত্বে পুরুষার্থের ধারণা

ভারতীয় নীতিতত্ত্বের ক্ষেত্রে নৈতিকতার যে ধারণাটি গড়ে উঠেছে, তার একটি মূলস্তম্ভ হল পুরুষার্থের ধারণা। পুরুষার্থের ধারণাই নৈতিকতার ধারণাটিকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে। পুরুষার্থকে তাই ভারতীয় নীতিতত্ত্বের একটি দিনির্দেশকরূপে গণ্য করা হয়। ভারতীয় নীতিতত্ত্বের ক্ষেত্রে এই পুরুষার্থের ধারণাটি স্বকীয় মহিমায় উজ্জ্বল। সে কারণেই পুরুষার্থের ধারণাটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করা প্রয়োজন। পুরুষার্থের আলোচনা ছাড়া ভারতীয় নীতিতত্ত্বের আলোচনাটি একেবারেই অপূর্ণ থেকে যায়। ভারতীয় নীতিতত্ত্বের সঙ্গে পুরুষার্থের ধারণাটি তাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

পুরুষার্থ-এর অর্থ

পুরুষার্থের আলোচনার প্রথমেই যে প্রশ্নটি অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে উঠে আসে, | তা হল-পুরুষার্থ কী? শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যায় যে, পুরুষ (সচেতন আত্মা) + অর্থ (কামনার বিষয়) = পুরুষার্থ। অর্থাৎ, শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যায় যে, পুরুষ তথা সচেতন আত্মা যা কামনা করে = তাকেই বলা হয় পুরুষার্থ। সমাজবদ্ধ মানুষ তার জীবনে কিছু আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং সেই আদর্শ অনুযায়ী তার কর্মপন্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এরূপ আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ কিছু কাম্যবস্তু লাভের চেষ্টা করে। ভারতীয় নীতিতত্ত্বে পুরুষার্থের ধারণাটিও একটি আদর্শের আলোকে আলোকিত এবং সে কারণেই পুরুষার্থকে কাম্যবস্তুরূপেও গণ্য করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই উল্লেখ করা যায় যে, পুরুষার্থের ধারণার সঙ্গে কাম্যবস্তুর ধারণাটিও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে।

কাম্যবন্ধুরূপে পুরুষার্থ

কাম্যবস্তু হল এমনই বস্তু যা মানুষ কামনা করে। এগুলিকে মানুষ কামনা করে, কারণ এগুলি নৈতিক আদর্শের আলোকে আলোকিত এবং এগুলি মানুষের মধ্যে অনুপস্থিত। কিন্তু এগুলিকে মানুষ সাধনার দ্বারা লাভ করতে পারে। এরূপ কাম্যবস্তুগুলি মানুষের কাছে কাম্য এই কারণেই যে, এগুলি মানুষের আদর্শগত চরিত্রগঠনের পক্ষে সহায়ক। ভারতীয় চিন্তাধারায় মানুষের সৎ আচরণের ওপর সাধনের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নৈতিকতাসম্পন্ন ভারতীয় মানুষ তাই সবসময়ই এক আদর্শ চরিত্রের কামনা করে। জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই কেউ আদর্শ চরিত্রের অধিকারী হন না। সামাজিকতার প্রেক্ষাপটেই মানুষ নৈতিকতা ও আদর্শগত মূল্যবোধের পরিপ্রেক্ষিতে তার চরিত্রকে নৈতিকতাসম্পন্ন ও মূল্যবোধের মাপকাঠিতে বিচার করতে চায়। এভাবেই সে তার চরিত্রকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের আদর্শে গড়ে তুলতে চায়। এভাবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য কিছু কাম্যবস্তু মানুষের একান্ত প্রয়োজন। এ সমস্ত কাম্যবস্তু নিয়ে মানুষ কখনোই জন্মগ্রহণ করে না। এগুলি তাই কখনোই জন্মসূত্রে লভ্য নয়, সাধনার দ্বারা এগুলিকে লাভ করতে হয়। এগুলিকে অর্জন করা হলে, মানুষ আনন্দ অনুভব করে। ফলত এগুলি মানুষের কাছে একান্তভাবে কাম্য এবং চরমভাবে মূল্যবান। এগুলি মূল্যবান এই অর্থেই যে, এগুলি মানুষের চরিত্রকে এক অত্যন্ত উচ্চ আলোকে আলোকিত করে। সে কারণেই ভারতীয় নীতিতত্ত্বে সাধনালব্ধ কাম্যবস্তুগুলির ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

Leave a Comment