ভারতীয় নীতিতত্ত্বে চতুর্বর্ণের বিষয়টিকে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো |
ভারতীয় নীতিতত্ত্বে চতুর্বর্ণ
ভারতীয় নীতিতত্ত্বে চতুর্বর্ণের বিষয়টি আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করা হল-
সত্ত্বপ্রধানরূপে ব্রাহ্মণের স্বধর্ম
যাদের মধ্যে সত্ত্বগুণের প্রাবল্য দেখা যায় তাঁরা হলেন সত্ত্বপ্রধান। ব্রাহ্মণরাই হলেন এরূপ সত্ত্বপ্রধান। এঁদের পালনীয় ধর্ম হল-অধ্যাপনা, দানগ্রহণ, আস্তিক্য, সদাচার এবং যজ্ঞানুষ্ঠানের পরিচালনা প্রভৃতি। এঁরাই সমাজের সর্বোচ্চ স্তরে আসীন। এই-সমস্ত ধর্ম তাই তাদের কাছে আবশ্যিকভাবে পালনীয়। আদর্শগত জ্ঞানদান করাই হল তাদের স্বধর্ম।
রজোপ্রধানরূপে ক্ষত্রিয়ের স্বধর্ম
ক্ষত্রিয়দের মধ্যে রজোগুণের প্রাবল্য থাকায় তারা হলেন রজোপ্রধান। এদের পালনীয় ধর্ম হল ক্ষাত্রধর্ম। এরূপ ধর্মের পরিপ্রেক্ষিতেই বলা যায় যে, এদের পালনীয় কর্তব্য হল রাজধর্ম রক্ষা করা, প্রজাপালন করা, অসাধু ব্যক্তি ও দুষ্কৃতি ব্যক্তিদের দমন করা, অসহায় ব্যক্তিকে রক্ষা করা, যুদ্ধ করা এবং যুদ্ধে পিছিয়ে না-আসা ইত্যাদি। সমস্ত প্রকার মানসিক দুর্বলতাকে জয় করাই হল এদের মূল কর্তব্য। ক্ষত্রিয়দের ধর্মকেই বলা হয় ক্ষাত্রধর্ম এবং ক্ষাত্রধর্মে উদ্দীপ্ত হওয়াই হল ক্ষত্রিয়ের স্বধর্ম।
তমোমিশ্রিত রজোপ্রধানরূপে বৈশ্যের স্বধর্ম
ক্ষত্রিয়দের ন্যায় বৈশ্যরাও হলেন মূলত রজোপ্রধান। কারণ, তাদের মধ্যে রজোগুণের আধিক্য দেখা যায়। রজোগুণের আধিক্য থাকলেও তাদের মধ্যে তমোগুণের কিছুটা প্রভাব দেখা যায়। সে কারণেই তাদের পালনীয় ধর্ম কখনোই ক্ষত্রিয়সুলভ নয়। তাদের অবশ্যপালনীয় ধর্ম হল-বাণিজ্য ও কৃষিকর্মে মনোনিবেশ করা, পশুপালন করা এবং অপরাপর বিষয়কর্মে ব্যাপৃত থাকা। সামাজিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখাই হল বৈশ্যদের পালনীয় ধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ব্যাবসাবাণিজ্য এবং কৃষিকর্মের উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অবস্থার স্থায়িত্ব বজায় রাখাই হল এদের স্বধর্ম।
তমোপ্রধানরূপে শূদ্রের স্বধর্ম
শুদ্রদের মধ্যে তমোগুণের প্রাবল্য থাকায় এরা হলেন তমোগুণ প্রধান। এঁদের অবশ্যপালনীয় ধর্ম হল মানুষজনের সেবা করা, তাদের পরিচর্যা করা এবং তাদের আনন্দ দেওয়া। সমস্ত বর্ণের মানুষের প্রতি তাই তাদের পরিচর্যা করা উচিত এবং তাদের প্রতি লক্ষ রাখাও এদের মূল কর্তব্য। কোনোরকম অসুবিধায় পড়লে, সেই অসুবিধা দূর করাই হল এদের মৌল কর্তব্য। অপরাপর মানুষের ক্ষেত্রে পরিচর্যা প্রদান করাই হল এদের স্বধর্ম।