ভারতীয় নীতিতত্ত্বে কর্ম কয়প্রকার ও কী কী
ভারতীয় নীতিতত্ত্বে কর্ম কয়প্রকার ও কী কী |
ভারতীয় নীতিতত্ত্বে কর্মের প্রকারভেদ
ভারতীয় নীতিতত্ত্বে কর্মকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে-সকাম কর্ম এবং নিষ্কাম কর্ম।
সকাম কর্ম
কামনাবাসনাযুক্ত কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে কর্মফলের প্রতি আকাঙ্ক্ষা রেখে যে- কর্ম করা হয় তাকেই বলা হয় সকাম কর্ম। অর্থাৎ, বলা যায় যে, কামনাবাসনার দ্বারা তাড়িত হয়ে কোনো কিছু লাভের আশায় যে কর্ম সম্পাদন করা হয় তাকেই বলা হয় সকাম কর্ম। এরূপ কর্মকে ব্যাবসায়িক কর্মরূপেও উল্লেখ করা হয়। ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরনের কর্মকে নিম্নস্তরের কর্মরূপে উল্লেখ করা যায়। ভারতীয় ধর্মশাস্ত্র গীতাতেও এইরূপ কর্মের নিন্দা করা হয়েছে।
নিষ্কাম কর্ম
সকাম কর্ম ছাড়া ভারতীয় নীতিতত্ত্বে আর যে ধরনের কর্মের কথা বলা হয়েছে, তা হল নিষ্কাম কর্ম। শুধু কর্মের জন্যই কর্ম করাকে বলা হয় নিষ্কাম কর্ম। নিঃ + কাম = নিষ্কাম-অর্থাৎ যে-কর্মে কোনোপ্রকার কামনাবাসনা নেই, তাকেই বলা হয় নিষ্কাম কর্ম। এই ধরনের কর্ম কখনোই ব্যক্তির কামনাবাসনা দ্বারা তাড়িত নয়। ভবিষ্যতের ফললাভের আশায় এরূপ কর্ম কখনোই সম্পাদিত নয়। সম্পূর্ণভাবে বাসনাবর্জিত বলেই এই ধরনের কর্মকে নিষ্কাম কর্ম বলা হয়। এ হল আসক্তি শূন্য কর্ম। ভারতীয় ধর্মশাস্ত্র শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় এরূপ আসক্তিশূন্য কর্মকেই বলা হয় নিষ্কাম কর্ম। ভারতীয় চিন্তাধারায় এই ধরনের কর্মকেই উচ্চস্তরের কর্ম বলা হয়েছে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃয় তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনকে এরূপ নিষ্কাম কর্ম করারই উপদেশ দিয়েছেন।
সংসার বন্ধনের হেতুতে সকাম কর্ম
ভারতীয় চিন্তাধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সকাম কর্ম মানুষকে সংসারবন্ধনে নিমজ্জিত করে। কারণ, মানুষের কামনাবাসনার কোনো অন্ত নেই। কামনাবাসনার চাহিদা মানুষের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। আরও চাই আরও চাই- এরূপ কামনাই মানুষের সংসারবন্ধনের হেতু। এরজন্যই মানুষকে কর্মফল ভোগ করতে হয়। এর জন্যই মানুষকে বারবার সংসারচক্রে আবর্তিত হতে হয়। জন্ম থেকে জন্মান্তর দুঃখকষ্ট ভোগ করতে হয়। জন্মমৃত্যুর চক্রে আবর্তিত হতে হতে মানুষ নিরন্তর কষ্ট পায়। সকাম কর্ম তাই আত্মার বন্ধনদশাকেই সূচিত করে।
সংসারবন্ধনের মুক্তিতে নিষ্কাম কর্ম
নিষ্কাম কর্ম কিন্তু সকাম কর্মের ন্যায় সংসারবন্ধনের হেতু না-হয়ে, সংসারবন্ধন থেকে মুক্তির হেতুরূপে গণ্য। নিষ্কাম কর্ম তাই মানুষকে কর্মবন্ধন থেকে মুক্তি দেয়। কারণ, নিষ্কাম কর্ম এমনই কর্ম যা ফলাকাঙ্ক্ষাকে বর্জন করে। এরূপ কর্ম কেবল ফলাকাঙ্ক্ষাবর্জিতই নয়, এ হল মোক্ষ বা মুক্তির নিদানস্বরূপ। কামনা- বাসনাজাত সঞ্চিত কর্মসমূহ নিষ্কাম কর্মে বিনষ্ট হয়। নিষ্কামকর্মীরা তাই কখনোই কর্মবন্ধনে আবদ্ধ হয় না। এ হল অতি উচ্চস্তরের কর্ম যা মানুষকে মুক্তির পথে টেনে নিয়ে যায়। নিষ্কাম কর্মে কোনোপ্রকার কামনাবাসনা না থাকায়, তার ফলও মানুষকে ভোগ করতে হয় না। সুতরাং, শুধু কর্তব্যের জন্যই কর্তব্য করা উচিত, কোনো উদ্দেশ্যসাধনের জন্য নয়। এরূপ কর্মকেই গীতায় কর্মযোগরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। গীতায় ভগবান শ্রীকৃয় অর্জুনকে এরূপ কর্মযোগে দীক্ষিত হওয়ারই উপদেশ দিয়েছেন।