বৌদ্ধদের প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করো
বৌদ্ধদের প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করো |
বৌদ্ধদের প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্ব
কার্যকারণ তত্ত্ব তথা প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্ব: বৌদ্ধ দর্শনে যে-সমস্ত দার্শনিক মতবাদগুলি পরিলক্ষিত হয়, তাদের মধ্যে প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্বটি হল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এরূপ মতবাদটি প্রথমদিকে বৌদ্ধধর্মের একটি অঙ্গরূপে গণ্য ছিল। কিন্তু পরবর্তী পর্বে এটি একটি দার্শনিক মতবাদের স্বীকৃতি লাভ করে। এই তত্ত্ব দ্বারা বৌদ্ধরা তাঁদের কার্যকারণ নিয়মকেই ব্যাখ্যা করেছেন। বৌদ্ধদের কার্যকারণ নিয়মটি তাই প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্ব নামেই পরিচিতি।
প্রতীত্যসমুৎপাদের অর্থ
প্রতীত্যসমুৎপাদ শব্দটির শব্দগত বিশ্লেষণ হল- প্রতীত্য + সমুৎপাদ = প্রতীত্যসমুৎপাদ। প্রতীত্য শব্দের অর্থ হল কোনো কিছুকে অবলম্বন বা কোনো কিছুর ওপর নির্ভর করে। আর সমুৎপাদ শব্দটির অর্থ হল উৎপত্তি। অর্থাৎ, শব্দটির পরিপূর্ণ অর্থ হল কোনো কিছুকে অবলম্বন করে অন্য কোনো কিছুর উৎপত্তি হওয়া। যা উৎপন্ন হয় তা হল কার্য, আর যা থেকে তা উৎপন্ন হয় তাকে বলে কারণ। প্রত্যেকটি কার্য তাই কারণ নির্ভর বা কারণের অধীন। বুদ্ধদেবের উদ্দেশ্য ছিল দুঃখের কারণ অনুসন্ধান করা। কিন্তু দুঃখের কারণ খুঁজতে গিয়ে কারণের কারণটিও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। এভাবেই রচিত হয়েছে কারণ-মালা বা কারণ-পরম্পরা। এই কারণ-মালা বা কারণ- পরম্পরাকেই অভিহিত করা হয়েছে প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্বরূপে।
নিত্যতাবাদ ও উচ্ছেদবাদের মধ্যবর্তী মতবাদ
স্বভাববাদ, যদৃচ্ছাবাদ, নিয়তিবাদ এবং অলৌকিকতাবাদের বিরোধীতত্ত্ব
প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্বটি আবার স্বভাববাদ এবং যদৃচ্ছাবাদের বিরোধী এক মতবাদ। কারণ, প্রতীত্যসমুৎপাদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বস্তুর স্বভাব কোনো কারণ হতে পারে না। কারণ কোনো-না-কোনো বাহ্যবস্তুর ওপর নির্ভরশীল। আবার কোনো কিছু আকস্মিক বা যদৃচ্ছাভাবেও ঘটতে পারে না। কার্যরূপ ঘটনার পিছনে কারণরূপ ঘটনা বা শর্ত উপস্থিত থাকেই। এরূপ মতবাদ তাই নিয়তিবাদ এবং অলৌকিকতাবাদকেও অস্বীকার করেছে।
কর্মবাদ, অনিত্যবাদ, ক্ষণিকত্ববাদ এবং নৈরাত্মবাদের ভিত্তি
প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্বটি হল কর্মবাদ, অনিত্যবাদ, ক্ষণিকত্ববাদ এবং নৈরাত্মবাদের মূলভিত্তি। কারণ, এই তত্ত্বটির উপর নির্ভর করেই পরবর্তী পর্যায়ে ওই সমস্ত তত্ত্বগুলি নিঃসৃত হয়েছে। এই সমস্ত তত্ত্বগুলি প্রতীত্যসমুৎপাদবাদেরই অনুসিদ্ধান্তরূপে গণ্য।
আরও পড়ুন – সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী রচনা