পুরুষার্থ হিসেবে মোক্ষের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো |
পুরষার্থরূপে মোক্ষ
মোক্ষ শব্দের অর্থ হল আত্মার মুক্তি। অর্থাৎ, জীবনযন্ত্রণা থেকে, ভববন্ধন তথা সংসারচক্র থেকে আত্মার মুক্তিই হল মোক্ষ। মোক্ষলাভ হলে মানুষকে আর পুনরায় জন্মগ্রহণ করে জীবনযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না, ভববন্ধন তথা সংসারবন্ধনে আবদ্ধ হতে হয় না। ফলত, জনমজনিত দুঃখকষ্টও আর ভোগ করতে হয় না। সে কারণেই মোক্ষকে বলা হয় দুঃখের আত্যন্তিক মুক্তি। এ হল এক অনাবিল আনন্দপূর্ণ অবস্থা-যেখানে দুঃখের কোনো লেশমাত্র নেই। ভারতীয় দর্শনে মোক্ষকে মুক্তি, নির্বাণ, নিঃশ্রেয়স, অপবর্গ-প্রভৃতি শব্দের দ্বারাও উল্লেখ করা হয়েছে। এই মোক্ষ হল অবিনশ্বর, কিন্তু অপরাপর পুরুষার্থগুলি নশ্বর। সে কারণেই মোক্ষকে ভারতীয় দর্শনে শ্রেষ্ঠ পুরুষার্থরূপে গণ্য করা হয়েছে। মোক্ষপ্রাপ্তি অবস্থায় মানুষের আর কোনো প্রকার যন্ত্রণা, দুঃখ থাকে না। এরূপ অবস্থায় মানুষ আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক- এই তিন প্রকার দুঃখ থেকেই সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়। সে কারণেই মোক্ষকে মানুষের পরমকল্যাণ বা চরম মঙ্গলরূপে গণ্য করা হয়েছে। অবশ্য মোক্ষের স্বরূপ নিয়ে ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কারণ, ন্যায়-বৈশেষিক মতে, মোক্ষ হল দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তি। সাংখ্য ও যোগ মতে, মোক্ষ হল সমস্ত ধরনের দুঃখের হাত থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি। মীমাংসা মতে, দেহের বন্ধন থেকে মুক্তিই হল মোক্ষ। আবার অদ্বৈত বেদান্ত মতে, মোক্ষ হল ব্রহ্মোপলব্ধি-যা জীব ও ব্রহ্মের একাত্মতাকেই সূচিত করে। এ-হল এক পরিপূর্ণ আনন্দঘন অবস্থা। এই মোক্ষকেই ভারতীয় দর্শনে শ্রেষ্ঠ পুরুষার্থরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। একমাত্র চার্বাক সম্প্রদায় ছাড়া আর অন্যান্য সমস্ত ভারতীয় সম্প্রদায়ই মোক্ষকে শ্রেষ্ঠ পুরুষার্থরূপে স্বীকার করে নিয়েছে।