পুরুষার্থরূপে ধর্মের বিষয়টি সংক্ষেপে উল্লেখ করো |
পুরুষার্থরূপে ধর্ম
‘ধৃ’-ধাতুর সঙ্গে ‘মন্’-প্রত্যয় যোগ করে ধর্ম শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। ‘ধৃ’ধাতুর অর্থ হল ধারণ করা। কাজেই বলা যায় যে, যা ধারণ করে তাই হল ধর্ম। লৌকিক অর্থে ধর্ম বলতে বোঝায় ঈশ্বর আরাধনা। কিন্তু নীতিশাস্ত্র ও ধর্মশাস্ত্রে ধর্ম শব্দটির অর্থ হল-আর্থসামাজিক বিধি-যা মানুষের অনুসরণীয়। সমাজে বসবাস করে, নিজের এবং অপরের কল্যাণের জন্যই কর্মসাধনাকে বলা হয় ধর্ম। এরূপ অর্থে সৎকর্মই হল ধর্ম। ঋগ্বেদে তাই ঋতকেই ধর্ম বলা হয়েছে। ঋগ্বেদে যে ঋত-এর কথা বলা হয়েছে-তা হল শাশ্বত এক সার্বিক নৈতিক নিয়ম-যা জীবজগৎ এবং জড়জগৎকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে। জগতের প্রত্যেক বস্তুই তার নিজস্ব নিয়মেই চলে এবং সেটাই হল তার ধর্ম। যেমন আগুনের কাজ হল উত্তাপ বিকিরণ করা এবং সেটাই হল তার ধর্ম। জৈন ও বৌদ্ধ দর্শনে অহিংসাকেই ধর্ম বলা হয়েছে। জৈন ও বৌদ্ধ মতে, যিনি কর্মে, বাক্যে, চিন্তায় অর্থাৎ জীবনের সবক্ষেত্রেই অহিংসরূপে গণ্য, তিনিই হলেন যথার্থ ধার্মিক। অনেকে আবার বেদবিহিত জীবনযাত্রাকেই ধর্মরূপে উল্লেখ করেছেন।
প্রাচীন মীমাংসাদর্শনে বেদসম্মত যাগযজ্ঞের অনুষ্ঠানকে ধর্ম বলা হয়েছে। আবার বৈদিক সাহিত্যে বর্ণাশ্রমকেই ধর্মরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে-আচারা পরমোধর্মঃ। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে সমাজের মঙ্গলের জন্য যে সমস্ত আচরণবিধি অনুসরণ করা হয় তা-ই হল ধর্ম। অনেকে আবার কর্তব্যকেও ধর্মরূপে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং দেখা যায় যে, ধর্ম শব্দটির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন শব্দ প্রযুক্ত হলেও, পুরুষার্থের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মের অর্থ হল-সদাচার ও কর্তব্যজ্ঞান। যার যা কর্ম-সেই অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করাই হল ধর্ম। শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতায় তাই শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে ক্ষাত্রধর্ম পালন করে যুদ্ধে অগ্রসর হতে বলেছেন এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।