দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ইঙ্গ-ফরাসি তোষণ নীতি কতখানি দায়ী – আজকের পর্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ইঙ্গ-ফরাসি তোষণ নীতি কতখানি দায়ী তা আলোচনা করা হল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ইঙ্গ-ফরাসি তোষণ নীতি কতখানি দায়ী
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ইঙ্গ-ফরাসি তোষণ নীতি কতখানি দায়ী? |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ইঙ্গ-ফরাসি তোষণ নীতি কতখানি দায়ী
বিংশ শতকের ত্রিশের দশকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল জার্মানি ও ইটালির প্রতি তোষণ নীতির অনুসরণ। ইঙ্গ-ফরাসি কূটনীতিকরা মনে করতেন যে, তাদের কাছে নাতসিবাদ ও সাম্যবাদ দুইই বিপজ্জনক হলেও সাম্যবাদ আরো বেশি বিপজ্জনক। তাঁরা হিটলারকে তোষণের মাধ্যমে সাম্যবাদের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।
তোষণ নীতির প্রয়োগ
ইঙ্গ-জার্মান নৌচুক্তি, জার্মানির রাইন অঞ্চল দখল, অস্ট্রিয়া দখল, মিউনিখ চুক্তি সম্পাদন প্রভৃতি ছিল হিটলারের প্রতি ব্রিটেন ও ফ্রান্সের নির্লজ্জ তোষণ নীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মুসোলিনির স্পেনের গৃহযুদ্ধে অংশ গ্রহণ, আবিসিনিয়া দখল প্রভৃতিতে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি নীরব দর্শক ছিলেন।
তোষণ নীতির ব্যর্থতা
(ক) হিটলারের রাজ্যগ্রাস ক্ষুধা বৃদ্ধি
ব্রিটেন ও ফ্রান্সের তোষণ নীতির ফলে হিটলারের রাজ্যগ্রাস ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। যা পরবর্তীকালে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
(খ) ইঙ্গ-ফরাসি দুর্বলতা
তোষণ নীতিতে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের যে দুর্বলতা ফুটে উঠেছিল হিটলার তাঁর পুরো সুযোগ নিয়েছিলেন। হিটলার আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তী কালে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জার্মানির দ্বারা আক্রান্ত হয়।
(গ) চেকোশ্লোভাকিয়া দখল
১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে (মার্চ) জার্মানি মিউনিখ চুক্তির শর্তকে তোয়াক্কা না করে এই চুক্তি স্বাক্ষরের ৬ মাসের মধ্যেই সমগ্র চেকোশ্লোভাকিয়া দখল করে নিলে তোষণ নীতির অসারতা প্রমাণিত হয়।
(ঘ) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি
রুশ সাম্যবাদের ভয়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স হিটলারকে তোষণ করে তাঁর আগ্রাসনের গতিপথ পশ্চিম ইউরোপের পরিবর্তে পূর্ব ইউরোপের দিকে ধাবিত করে রুশ-জার্মান সংঘর্ষ তৈরি করে নিজেদেরকে নিরাপদে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের ধারণাকে ভ্রান্ত প্রতিপন্ন করে হিটলার ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে (আগস্ট) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স মহাফাঁপরে পড়ে যায়।
এভাবে দেখা যায় ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণ নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। গণতান্ত্রিক দেশগুলি যদি প্রথম থেকেই বাধা দিত হয়তো বিশ্বযুদ্ধ এড়ানো যেত।