চার্বাকদের পুরুষার্থের ধারণাটিকে সংক্ষেপে উল্লেখ করো

চার্বাকদের পুরুষার্থের ধারণাটিকে সংক্ষেপে উল্লেখ করো
চার্বাকদের পুরুষার্থের ধারণাটিকে সংক্ষেপে উল্লেখ করো

চার্বাকদের পুরুষার্থের ধারণা

চার্বাক সম্প্রদায় হল চরম নাস্তিক দার্শনিক সম্প্রদায়। সে কারণেই তাঁরা শুধু ইন্দ্রিয়সুখ তথা কামকেই পুরুষার্থরূপে উল্লেখ করেন। তাঁরা তাই বলেন- সুখমেব পুরুষার্থ, অর্থাৎ, ইন্দ্রিয়সুখ তথা কাম-ই হল একমাত্র পুরুষার্থ। কামকে তাঁরা মুখ্য পুরুষার্থরূপে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা আরও বলেন যে, অর্থ-কামকে চরিতার্থ করতে সাহায্য করে এবং সে কারণেই তাঁরা অর্থকে গৌণ পুরুষার্থরূপে গণ্য করেন। স্বাভাবিকভাবেই উল্লেখ করা যায় যে, চার্বাকগণ ধর্ম ও মোক্ষ-কে পুরুষার্থরূপে আদৌ স্বীকার করেন না। তাঁরা বলেন যে, ধর্ম ও মোক্ষ কখনোই প্রত্যক্ষের বিষয় নয়, কিন্তু কাম ও অর্থ অবশ্যই প্রত্যক্ষের বিষয়। সে কারণেই তাঁরা ধর্ম ও মোক্ষকে বর্জন করে, পুরুষার্থ হিসেবে কাম ও অর্থ-কে স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁরা বলেন একমাত্র কাম-ই মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জৈবসুখ উৎপাদনে সমর্থ এবং সে কারণেই তাঁরা কামকে চরম পুরুষার্থরূপে গণ্য করেন।

চার্বাক মতে কাম-সম্ভোগ

চার্বাক মতে, মানুষের জীবন কখনোই অবিমিশ্র সুখ অথবা অবিমিশ্র দুঃখপূর্ণ নয়। মানুষের জীবন হল সুখ ও দুঃখের সংমিশ্রণ। সে কারণেই মানুষের কাজ হল দুঃখকে পরিহার করে, সুখভোগ করা। তাঁরা তাই বলেন, কাঁটার ভয়ে পদ্মবনে পদ্ম তোলা থেকে কখনোই বিরত থাকা উচিত নয়। কাঁটা সরিয়ে পদ্ম তোলাই হল বুদ্ধিমানের কাজ। একইভাবে দুঃখকে সরিয়ে রেখে সুখভোগ করাই হল মানুষের একমাত্র কর্তব্য। ভবিষ্যতে দুঃখ পেতে হবে বলে, বর্তমানে সুখভোগ থেকে বিরত হওয়া কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সে কারণেই তাঁরা বলেন যে, ভবিষ্যতের সুন্দর ময়ূরের তুলনায় বর্তমানের একটি পায়রাও অনেক বেশি মূল্যবান। সুতরাং মানুষের উচিত কাজ হল যত পারা যায় ততটাই সুখভোগ করা। সুখই হল মানুষের একমাত্র আদর্শ, একমাত্র কাম্যবস্তু। ইন্দ্রিয়সুখই হল চরম ও পরম পুরুষার্থ। তাঁরা তাই বলেন, যাবজ্জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ। অর্থাৎ, যত দিন বাঁচ সুখে বাঁচ, ঋণ করেও ঘি খাও। চার্বাকগণ তাই ইন্দ্রিয় সুখসম্ভোগ ছাড়া আর অন্য কোনো কাম্যবস্তু তথা পুরুষার্থের কথা চিন্তা করেন না।

চার্বাক মতের অযথার্থতা

চার্বাকগণ পুরুষার্থ হিসেবে যে কাম-এর কথা বলেছেন, তা অযথার্থরূপেই গণ্য বলে মনে করে ভারতীয় দর্শনের অপরাপর সম্প্রদায়গুলি। ভারতীয় দর্শনের অপারপর সম্প্রদায়গুলি দাবি করেন যে, ইন্দ্রিয়সুখ ক্ষণিকমাত্র এবং সে কারণেই তা শেষপর্যন্ত দুঃখেরই নামান্তর। জীবনের সামগ্রিক উন্নতির জন্য ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষের মেলবন্ধন একান্তভাবে প্রয়োজনীয়। চার্বাকগণ কেবল বর্তমান জন্মকেই সত্য বলে মনে করেন। সে কারণেই তাঁরা এই জন্মের ইন্দ্রিয়সুখকেই একমাত্র সত্য বলে দাবি করেন। এই ইন্দ্রিয়সুখকেই একমাত্র সত্য বলে মনে করায় চার্বাকদের মতবাদটি কখনোই যথার্থ মতবাদরূপে গণ্য হতে পারে না। আরও উল্লেখ করা যায় যে, শুধু ইন্দ্রিয়সুখকেই কাম্যবস্তু বলে মনে করলে, মানুষ – আর পশুর মধ্যে কোনো ভেদই থাকে না। সুতরাং দাবি করা যায় যে, চার্বাক মতবাদ শুধু ইন্দ্রিয়সুখের কথা বলে, মানুষকে পশুর স্তরে নামিয়ে এনেছে।

Leave a Comment