ক্রুসেডের সূত্রে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্ব কী ছিল – আজকের পর্বে ক্রুসেডের সূত্রে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্ব কী ছিল তা আলোচনা করা হল।
ক্রুসেডের সূত্রে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্ব কী ছিল
ক্রুসেডের সূত্রে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্ব কী ছিল |
জেরুজালেম দখলকে কেন্দ্র করে ক্রুসেড শুরু হলেও তা অলক্ষে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে এক সম্পর্ক গড়ে দেয়। এই সম্পর্কের সুবাদে প্রতীচ্য বা পশ্চিম ইউরোপীয় এবং প্রাচ্য বা ইসলামীয় সভ্যতার বিভিন্ন দিকগুলির আদান-প্রদান ঘটে। ঐতিহাসিক হিট্টি লিখেছেন- “প্রাচ্য অপেক্ষা প্রতীচ্যের জন্য ক্রুসেড ছিল অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।”
ভৌগোলিক আবিষ্কার
ক্রুসেডের সুবাদে ইউরোপীয়রা দীর্ঘদিন ধরে অভিযান চালিয়ে এশিয়া, আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলি সম্পর্কে জানতে পারে। প্রাচ্যে বাণিজ্যের নতুন পথ আবিষ্কার হয়। প্রসঙ্গে আজিজ এস আতিয়া লিখেছেন- “কুশ বহনকারীদের অভিযানমূলক উৎসাহ শেষপর্যন্ত নতুন দেশ আবিষ্কারের যুগের সূচনা ঘটায়।’
বাণিজ্যিক লেনদেনের সূত্রে
প্রাচ্যের দেশগুলি থেকে প্রতীচ্যে মূল্যবান পোশাক, মণিমুক্তো, প্রসাধন সামগ্রী আমদানি করা হত। প্রাচ্যে বাণিজ্য করতে গিয়ে ইউরোপীয়রা স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করে। বাণিজ্যের সুবিধার্থে ফ্লোরেন্স নগরের বণিকরা ব্যাংক ব্যবস্থার প্রচলন করেন।
আধুনিক ইউরোপের বিকাশ
ক্রুসেডের ফলেই আরবদের উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতির সঙ্গে ইউরোপীয়রা পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। ফলস্বরূপ কুসংস্কারাচ্ছন্ন ইউরোপে উন্নত মুসলিম সভ্যতার অনুপ্রবেশ ঘটে। ফলে ইউরোপ অনেক বেশি আধুনিক হয়ে ওঠে।
জীবনযাত্রা প্রণালীর পরিবর্তন
ক্রুসেডের প্রারম্ভিক পর্বে মুসলমান সম্পর্কে ইউরোপীয়দের মনে ঘৃণা ও অবজ্ঞার ধারণা ছিল। কিন্তু তাদের সংস্পর্শে আসার পর এই ধারণার বদল ঘটে এশিয়ায় আরবদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা তাদের আকৃষ্ট করে। পোশাক পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে খাদ্যতালিকা পর্যন্ত সবদিক থেকেই ইউরোপীয়রা উন্নত হওয়ার চেষ্টা করে।
জ্ঞানবিজ্ঞান
কুসেডের ফলে প্রতীচ্য উচ্চতর জ্ঞানবিজ্ঞানের ধারণা লাভ করে। আরবীয়দের মাধ্যমে বিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে ইউরোপীয়রা জ্ঞান লাভ করে। আরবীয় সংখ্যাতত্ত্বে জ্ঞান লাভ করে তারা হিসাবশাস্ত্রে পারদর্শী হয়ে ওঠে।
উপসংহার
ক্রুসেডের ফলে ইসলামীয় সাহিত্যের প্রভাব ইউরোপীয়দের ওপর পড়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরব্য রজনীর কাহিনিগুলি। সিরাপ, সুগার, লেমন, সোডা, মসলিন, সাটিন প্রভৃতি আরবি শব্দগুলির সঙ্গে ইউরোপীয়রা পরিচিত হতে থাকে।