আশ্রম ধর্ম কী |
আশ্রম ধর্ম
প্রাচীন ভারতবর্ষে ধর্মের আরও একটি রূপ পরিলক্ষিত হয় এবং তা হল আশ্রম ধর্ম। আশ্রম শব্দটির সাধারণ অর্থ হল-নির্জন তপস্যার উপযোগী কুটীর বা স্থান। কিন্তু এই আশ্রম শব্দটি যখন ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হয় তখন তার অর্থ হল জীবনের একটি অধ্যায়। ভারতীয় নীতিতত্ত্বে মোক্ষ বা নিঃশ্রেয়স লাভকেই জীবনের চরম ও পরম প্রাপ্তিরূপে উল্লেখ করা হয়। এই মোক্ষলাভের উদ্দেশ্যে প্রাচীন মুনিঋষিগণ মানুষের সমগ্র জীবনকে চার অধ্যায়ে তথা আশ্রমে বিভক্ত করেছেন। জীবনের এই চারটি অধ্যায় হল যথাক্রমে ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস। এগুলিকেই একসঙ্গে বলা হয় চতুরাশ্রম। এই চারটি অধ্যায়ের কোনো অধ্যায়কেই গুরুত্বহীনরূপে উল্লেখ করা যায় না। কারণ, এই চারটি অধ্যায়ের মাধ্যমেই মানুষ তার মূল জৈবিক সত্তা থেকে সূক্ষ্ম পারমার্থিক সত্তায় উত্তরিত হয়। এরূপ উত্তরণ প্রত্যেকটি মানুষেরই চরম ও পরমভাবে কাম্য।
উত্তরণের ইতিহাসে আশ্রম ধর্ম
ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস-এই চারটি অধ্যায়ে মানুষের চারপ্রকার রূপ পরিলক্ষিত হয়। এক-একটি অধ্যায়ে মানুষ এক-একরকমভাবে জীবন কাটায়। একটি অধ্যায়ের সঙ্গে আর-একটি অধ্যায়ের যোগসূত্র থাকে ঠিকই কিন্তু কোনো মিল থাকে না। ফলত প্রত্যেকটি অধ্যায়েরই জীবনযাত্রা হয় ভিন্ন ভিন্ন। এর ফলে এই অধ্যায়গুলির আচরণীয় ধর্মও হয় ভিন্ন ভিন্ন। এই প্রত্যেকটি অধ্যায় বা আশ্রমের অন্তঃস্থিত আচরণীয় ধর্মকেই বলা হয় আশ্রম ধর্ম। মানবজীবনের এই চারটি অধ্যায় তথা আশ্রম এ কথাই সূচিত করে যে, মানুষের মোক্ষলাভের বিষয়টি হল একপ্রকার আধ্যাত্মিক উত্তরণের ইতিহাস।